Web bengali.cri.cn   
'হুয়াং খুই' ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার
  2013-08-28 08:43:56  cri


চলতি বছর হাই কো শহরে 'হুয়াং খুই' নামের একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার জনগণের জন্য বিনামূল্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেটা হাই কো শহরে প্রথম উন্মুক্ত ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার। সেখানে পাঠকরা বিনা খরচে গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা লেখক হুয়াং খুইয়ের নিজের সংগৃহীত ২০ হাজার বই পড়তে পারে। উন্মুক্ত হওয়ার পর প্রতিদিন অনেক মানুষ বই পড়া বা ভাড়া নেওয়ার জন্য 'হুয়াং খুই' গ্রন্থাগারে আসে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা একসাথে 'হুয়াং খুই' ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে বেড়াতে যাব।

'হুয়াং খুই' ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার একটি আবাসিক ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত। প্রায় ১০০ বর্গমিটারের এ গ্রন্থাগারে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। পাঠকরা এই পাঁচটি কক্ষে বই, সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন পড়তে এবং লেখাপড়া করতে পারে। কক্ষগুলো উত্তমরূপে সাজানো হয় এবং উজ্জ্বল।

আমাদের সংবাদদাতা যখন গ্রন্থাগারে প্রবেশ করেন, তখন হুয়াং খুইর বাবা বইপত্র গোছগাছ করছিলেন। টেবিলের ওপর রয়েছে একটি পাঠক নিবন্ধন-খাতা। নিবন্ধন-খাতায় দেখা যায় ছুটির দিন না হলেও সেদিন ১১জন পাঠক গ্রন্থাগার থেকে বই ভাড়া নিয়েছে। লি লিন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। গ্রীষ্মের ছুটিতে সে সবসময় বই পড়ার জন্য 'হুয়াং খুই' গ্রন্থাগারে আসে। আগে লি লিন পড়ার জন্য বিভিন্ন দোকান থেকে বই কিনতো। 'হুয়াং খুই' গ্রন্থাগার খোলার পর লিলিন একজন নিয়মিত পাঠকে পরিণত হয়েছে। সে বলে:

"হুয়াং খুই গ্রন্থাগার সবার জন্য সুবিধা এনে দিয়েছে। আমি মনে বই পড়া একটি উপভোগ্য ব্যাপার এবং আমি গদ্যকাব্য খুব পছন্দ করি।"

গরম আবহাওয়ায় পাঠক হুয়াং খুই গ্রন্থাগারে শীতল পরিবেশে বই পড়তে পারে। পঠন-রুমে কয়েকজন পাঠক মন দিয়ে বই পড়ছেন। তাদের মধ্যে যেমন রয়েছেন তরুণ-তরুণী তেমন রয়েছেন বয়স্ক মানুষ। হুয়াং খুইয়ের একই আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী ছেন দাদা সংবাদদাতাকে জানান, হুয়াং খুই গ্রন্থাগার চালু হওয়ার পর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তিনি প্রতিদিন এখানে এসে বই বা সংবাদপত্র পড়েন। তিনি বলেন:

"আমার মনে হয়, এটা খুব ভাল। প্রবীণদের জন্য এখানে বই বা সংবাদপত্র পড়া খুব মজার একটি ব্যাপার।"

সংবাদদাতা আবিস্কার করেন যে, প্রত্যেক পাঠক হুয়াং খুই গ্রন্থাগারে প্রবেশ করার পর প্রথমে হাত ধোয়। তারপর বই বা ম্যাগাজিন বাছাই করে। পড়ার পর তারা বই বা ম্যাগাজিন আগের জায়গায় রেখে দেয়। এর মধ্য দিয়ে সবাই গ্রন্থাগারের পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে হুয়াং খুই গ্রন্থাগার। ছাত্রছাত্রীরা স্কুল শেষ হওয়ার পর এখানে লেখাপড়া করতে পারে। হুয়াং খুইর বাবা হুয়াং সান নান ও স্ত্রী ওয়াং লি হুয়া এ গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা করেন।

হুয়াং সান নান বলেন:

"আমার ছেলের এ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠাকে আমি সমর্থন করি। কারণ বইয়ের মাধ্যমে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করা যায়। সাধারণত আমি গ্রন্থাগার পরিষ্কার করি এবং পাঠকদের অভ্যর্থনা জানাই।"

হুয়াং খুইর স্ত্রী ওয়াং লি হুয়া জানান, তাদের বসবাসের ঘরকেই গ্রন্থাগারে রূপান্তর করা হয়। বইয়ের অধিকাংশই হুয়াং খুইয়ের নিজের সংগৃহীত। এখানে সাহিত্য, শিল্প, ইতিহাস ও ভুগোলসহ নানা বিষয়ের বই আছে। তাছাড়া গ্রন্থাগারে তরুণ-তরুণীদের জন্য আছে কার্টুন,গোয়েন্দা ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই। যারা বই পছন্দ করে তারা এ গ্রন্থাগারের মাধ্যমে বই বিনিময় করতে পারে।

ওয়াং লি হুয়া বলেন:

"এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি। তাই এখানে ছাত্রছাত্রী বেশি। বই ভাড়া নেওয়া ছাড়াও ছাত্রছাত্রীরা এখানেও লেখাপড়া করে। কারণ এখানকার পরিবেশ বাসার মতো নয়; শ্রেণীকক্ষের মতো উপযুক্ত লেখাপড়ার জন্য। অফিস-কর্মী, শ্রমিক ও গৃহিনীরাও বই ভাড়ার জন্য এখানে আসে।"

হুয়াং খুই গ্রন্থাগারে রয়েছে কয়েকটি বিশেষ এলাকা। এর মধ্যে রয়েছে হাই নান লেখক সমিতি ও হুয়াং খুইর বন্ধুর দান করা ২০০টি বই। হুয়াং খুইর স্ত্রী ওয়াং লি হুয়া সংবাদদাতকে কয়েকটি চিঠি দেখান, যেগুলো পাঠিয়েছে পেইচিং চিউ সান সোসাইটি, লান চৌ বিদেশি ভাষা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি সংস্থা ও ব্যক্তি। তারা অনেক বই হুয়াং খুই গ্রন্থাগারে পাঠিয়েছে।

ওয়াং লি হুয়া বলেন:

"অনেক মানুষ আমাদের গ্রন্থাগারকে সহায়তা করে। আমার আবাসিক এলাকার এক ব্যক্তি নিজের ১০০টি বই আমাদেরকে দান করেছেন।"

ওয়াং লি হুয়া নিজে বই পড়তে ও রচনা করতে পছন্দ করেন। গ্রন্থাগারে প্রশিক্ষণ আয়োজনের জন্য তিনি বন্ধু বা লেখকেরকে আমন্ত্রণ জানান।

ওয়াং লি হুয়া বলেন:

"ব্যবস্থাপনার জন্য আমি প্রতিদিন গ্রন্থাগারে থাকি। সময় পেলে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা আমার মনে হয় খুব অর্থবহ। যেমন আমরা শিশুদের রচনার প্রশিক্ষণ দেই এবং যখন শিশুরা যখন ক্লাসে থাকে, তখন তাদের মা-বাবা এখানে বই পড়তে পারে। অন্যদিকে প্রশিক্ষণ আয়োজিত হলে আমাদের গ্রন্থাগারের বিনামূল্য-সেবা বজায় রাখার সম্ভব হবে।"

গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা লেখক হুয়াং খুই সংবাদদাতাকে বলেন, বই পড়া তার বিগত ২০ বছরের একটি চর্চা। ২০ বছর আগে তিনি আন হুই প্রদেশ থেকে হাই নান আসেন। যদি অন্য কোনো জায়গায় বেড়াতে যান, তাহলে তিনি সবসময় বইয়ের দোকান বা মেলায় বেড়াতে যান। বিনামূল্য গ্রন্থাগারের কথা উল্লেখ করে হুয়াং খুই বলেন, তিনি আশা করেন, বড় গ্রন্থাগারের অনুপূরক উপাদান হিসেবে সবাই বিশেষ করে তরুণ-তরুণীর জন্য বই পড়ার সুযোগ করে দেবে।

নিজের বাসাকে গ্রন্থাগার রূপান্তরের কারণে বর্তমানে হুয়াং খুই ও তার পরিবার ছোট একটি বাসায় বাস করে। তিনি বলেন, বাড়ি বা গাড়ি কেনার চেয়ে তিনি বই কিনতে পছন্দ করেন। আমাদের সংবাদদাতা যখন সাক্ষাত্কার নেন তখন একজন আগ্রহী পাঠক নিজের বই দানের জন্য গ্রন্থাগারে আসেন। হুয়াং খুই সে পাঠককে দেখে খুব খুশি হন। তিনি বলেন, এ গ্রন্থাগার তার নয়, বরং সবার। তিনি আশা করেন, আরও বেশি মানুষ ভাগাভাগির জন্য নিজের বই দান করবেন।

হুয়াং খুইর স্বপ্ন হচ্ছে আরও বেশি বিনামূল্য-গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা, যাতে আরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়।

আমরাও আন্তরিকভাবে আশা করি, হুয়াং খুইর এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে এবং তাঁর মতো আরও বেশি মানুষ চীনা সাংস্কৃতিক উন্নয়নে নিজেদের আবদান রাখবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক