Web bengali.cri.cn   
চীনের শিয়ে রাজবংশের প্রথম রাজা শিয়ে উয়েনডি সম্পর্কে
  2013-08-20 15:19:44  cri
উত্তর-দক্ষিণ রাজবংশের পতনের পর প্রতিষ্ঠিত হয় শিয়ে রাজবংশ। শিয়ে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শিয়ে উয়েনডি ইয়াং জিয়েন বতর্মান সেনসি প্রদেশের লোক ছিলেন। তার শাসনামলে দেশ একীভূত হয়। দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি অনেক নিয়মকানুন প্রণয়ন করেছিলেন। তা ছাড়া, তিনি রাষ্ট্রের অনেককিছু সংস্কার করেন। ফলে তার শাসনামলে দেশ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। শিয়ে রাজবংশের সমৃদ্ধি পরবর্তীকালের ঠাং রাজবংশের জন্য ভাল ভিত্তি স্থাপন করেছিল। চীনের ইতিহাসে শিয়েউয়েনডি একজন যোগ্য রাজা ছিলেন। তিনি দেশের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন।

রাজা হওয়ার পর শিয়েউয়েনডি ভালোভাবে উপলব্ধি করলেন যে, তার দেশ নতুন এবং গরীব। সুতরাং তিনি সাশ্রয়ের নীতি চালু করলেন। একদিন রাজকুমারকে দামী পোশাক পড়তে দেখে নারাজ হন। তিনি রাজকুমারকে বলেন: 'অতীতে যেসব রাজা বিলাসী জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন সেসব রাজা বেশীদিন দেশ শাসন করতে পারেননি। একটি দেশের রাজকুমার হিসেবে তোমাকে সবসময় দেশের কথা চিন্তা করতে হবে। তুমি কেন বিলাসী কাপড় পড়েছো, যেখানে তোমার দেশ গরীব?' শিয়েউয়েনডির আচরণ-ব্যবহার দেশের জনসাধারণের ওপর অত্যন্ত প্রভাব ফেলেছিল। রাজদরবারের পাত্রমিত্ররা সাধারণ পোশাক পড়তেন ও সাধারণ খাবার খেতেন। একবার রাজা শিয়েউয়েনডি একটি খরাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে গেলেন। দুর্গতদের অবস্থা দেখে তিনি মর্মাহত হলেন। তিনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরকে বললেন: 'জনসাধারণ কষ্ট করছে। এর জন্য আমরাই দায়ী। এখন থেকে আমরা মাংস খাবো না।' শিয়েউয়েনডি কথায় ও কাজে এক ছিলেন। তিনি সত্যিই একবছর মাংস খাননি। তখন চীনের লোইয়াং অঞ্চলে ফসল মোটামুটি ভাল ফলেছিল। সুতরাং শিয়েউয়েনডি নিজেই দুর্গত এলাকার জনসাধারণকে লোইয়াং অঞ্চলে নিয়ে যান। শিয়েউয়েনডির আচরণে জনসাধারণ অভিভূত হয়ে গেল। সকলেই শিয়েউয়েনডির প্রশংসা করতে শুরু করল।

শিয়েউয়েনডির সবচেয়ে বড় আশা ছিল দেশকে একীভূত করা। তখন দেশের দক্ষিণ অঞ্চল শাসন করতো ছেন রাজবংশ। একদিন শিয়েউয়েনডি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বললেন: 'বতর্মানে ইয়াংসি নদীর দক্ষিণ পারে ছেন রাজবংশ আছে। এই রাজবংশের রাজা জনসাধারণের কল্যাণে কিছু করেন না। সুতরাং তাই ওই রাজ্যের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের এই অপশাসন থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব আমার।' তখন ওই কর্মকর্তা বললেন: 'মহারাজ, আপনি ঠিকই বলেছেন। শিয়ে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় সাত বছর। কিন্তু দেশ এখনো একীভূত হয়নি।' 'আপনার কোনো ভাল পরামর্শ আছে?' শিয়েউয়েনডি জিজ্ঞেস করলেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দিলেন: 'যখন দক্ষিণ অঞ্চলে ফসল সংগ্রহের মৌসুম আসবে তখন আমরা তাদেরকে হয়রানি করার জন্য একদল সৈন্য সেখানে পাঠাবো। যদি তারা প্রতিরোধ করতে চায় তাহলে আমাদের সৈন্যরা সরে আসবে। এভাবে বারবার হয়রানি করতে থাকলে তারা তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল হয়ে পড়বে। তখণ সুযোগ বুঝে আমরা ইয়াংসি নদী অতিক্রম করে ছেন রাজবংশকে উত্খাত করবো।' শিয়েউয়েনডি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করলেন। সে-বছর শরত্কালের এক রাতে শিয়ে রাজবংশের সৈন্যরা কয়েকটি পথ দিয়ে ইয়াংসি নদী অতিক্রম করে ছেন রাজবংশের সৈন্যদের পরাজিত করল। অবশেষে শিয়েউয়েনডি দেশকে একীভূত করার আকাংক্ষা বাস্তবায়ন করলেন।

দেশ শাসনের জন্য শিয়েউয়েনডি খুব কড়াকড়ি আইন প্রণয়ন করেছিলেন। যে-কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা ভুল করলেই শাস্তি পেতেন। এমনকি যদি শিয়েউয়েনডির ছেলেরাও আইন অমান্য করে রেহাই পেতেন না। একবার তার মেজ ছেলে একজন নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে অন্যায়ভাবে ধমক দিয়েছিলেন। এ-খবর শুনে শিয়েউয়েনডিন খুব রাগ করলেন। তিনি ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। পরে তিনি ছেলেকে আটকে রাখলেন এবং রাজকুমারের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিলেন। তখন একজন মন্ত্রী শিয়েউয়েনডিকে বললেন: 'মহারাজ, রাজকুমার কেবল এই কর্মকর্তাকে ধমক দিয়েছেন। তাকে আপনি অপরাধের তুলনায় বড় শাস্তি দিয়েছেন।' শিয়েউয়েনডি গম্ভীরভাবে বললেন: 'দেশে আইন আছে। কেউ এই আইন লঙ্ঘন করতে পারে না।' তিনি আরো বললেন: 'আইন মাত্র একটি। সুতরাং আইনের সামনে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজকুমার পর্যন্ত সবাই সমান। দেশের আইন অমান্য করার অধিকার কারোর নাই।' শিয়েউয়েনডির কথা শুনে উপস্থিত কর্মকর্তারা হতভম্ব হয়ে গেলেন।

কর্মকর্তাদের প্রতি শিয়েউয়েনডি অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। কিন্তু জনসাধারণকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। তার শাসনকালে শিয়েউয়েনডি দেশের বহু স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিনি যেখানে গেছেন, সেখানেই তাকে স্থানীয় জনগণ ভালোবেসে বরণ করে নিয়েছে। কারণ জনসাধারণ শিয়েউয়েনডিন একজন ভাল রাজা বলে সম্মান করতো। তিনি সবসময় জনসাধারণের কথা মনে রাখতেন। পরিদর্শনের সময় শিয়েউয়েনডি সাধারণত গরীব মানুষের সঙ্গে বেশি মিশতেন। তিনি তাদের খোঁজখবর নিতেন। জনসাধারণও তাদের মনের কথা রাজাকে বলতে দ্বিধা করতো না। প্রতিবার বাইরে থেকে রাজপ্রাসাদে ফিরে আসার পর, শিয়েউয়েনডি রাজদরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামনে জনসাধারণের বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করতেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা শিয়েউয়েনডির আচরণে মুগ্ধ হতেন। এভাবে তিনি নিজে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেন।

শিয়ে রাজবংশের জন্য শিয়েউয়েনডি অনেক অবদান রেখেছেন। নি:সন্দেহে চীনের ইতিহাসে তিনি একজন যোগ্য ও সফল রাজা ছিলেন। তার শাসনকালে দেশ সমৃদ্ধ ছিল; জনসাধারণের জীবনও ভাল ছিল। প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ চীনের শিয়ে রাজবংশের প্রথম রাজা শিয়েউয়েনডি সম্পর্কে শুনলেন। আমাদের এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখে জানাবেন বা ই-মেইল করবেন। আমাদের ইমেল ঠিকানা হল: ben@cri.com.cn আশা করি নিয়মিত আমাদের এই অনুষ্ঠান শুনবেন। (চিয়াং/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক