Web bengali.cri.cn   
পর্যটন সহজায়ন ও স্বনির্ভর পযর্টন
  2013-08-28 08:38:07  cri


জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার উদ্যোগে ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক রেশমপথ সম্মেলন ১ আগস্ট চীনের কানসু প্রদেশের তুন হুয়াং শহরে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের ২৫টি দেশ ও অঞ্চলের পর্যটন খাতের ব্যক্তিরা সম্মিলিত হয়ে রেশমপথ-সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সহযোগিতা এবং পর্যটন সহজায়ন নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।

রেশমপথ হচ্ছে প্রাচীনকালে চীনের সি'আন শহর থেকে সূচিত এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপকে যুক্ত করা একটি পথ। ওই সময় সি'আন চীনের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল।

বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মহাসচিব তালেব রিফাই সম্মেলনে বলেন, বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন খাতে। তবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পর্যটন শিল্প প্রসারিত হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে রেশমপথ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের উচিত্ সহযোগিতার মাধ্যমে পর্যটন অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এবং রেশমপথের পর্যটনকে একটি বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করা। রিফাই বলেন:

"রেশমপথের পর্যটন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশ ও শহরগুলোর যৌথ প্রচার ও অভিন্ন সেবার মানদণ্ড প্রণয়নকে। তাছাড়া আমরা আশা করি, রেশমপথ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশ পর্যটনের সহজায়নে অধিকতর ব্যবস্থা নেবে। যেমন ভিসা ও পরিবহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করবে।"

বর্তমানে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চীন বিশ্বের বৃহত্তম বৈদেশিক পর্যটক উত্সে পরিণত হয়েছে এবং রেশমপথ-সংশ্লিষ্ট অনেক দেশ এবারের সম্মেলনের সুযোগে আরও বেশি চীনা পর্যটককে আকর্ষণ করতে পারবে।

আজারবাইজানের উপ-সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী নাজিম সামাদোভ বলেন, ইলেক্ট্রোনিক ভিসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে আজারবাইজানে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন:

"আমরা ইলেক্ট্রোনিক ভিসা সেবা দেই। চীন এত বড় একটি দেশ অথচ শুধু পেইচিংয়ে আমাদের দূতাবাস আছে। তুন হুয়াং ও পেইচিংয়ের মধ্যকার দূরত্ব তু হুয়াং ও আমাদের রাজধানী বাকুর মধ্যকার দূরত্বের সমান। পর্যটকদের সুবিধার জন্য আমরা ইলেক্ট্রোনিক ভিসা দেই। পর্যটকরা তাদের পাসপোর্ট ও ছবি নির্দিষ্ট পর্যটন এজেন্সির কাছে দেয় এবং দশ দিনের মধ্যে ভিসা পেয়ে যায়। ইলেক্ট্রোনিক ভিসা সেবা শুরু করার পর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে আজারবাইজানে চীনা পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে।"

দক্ষিণ কোরিয়াও পর্যটন সহজায়ন এবং আরও বেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য নানা ব্যবস্থা নেয়। কোরিয়া পর্যটন বোর্ডের চীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি আনজি হোয়ান বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটক উত্স দেশ হিসেবে গত বছর চীন জাপানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। আনজি হোয়ান বলেন:

"সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণকারী চীনা পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার গৃহীত নতুন নীতি অনুযায়ী, জুলাই মাস থেকে পেইচিং ও শাংহাইবাসীরা তিন বছরের মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে এবং শাংহাই ও থিয়ান চীন শহর থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া জাহাজগুলোকে পর্যটকদের তালিকা ও ছবি ছাড়া অন্য কোনো কাগজপত্র দিতে হচ্ছে না।"

চীনা পর্যটন ইন্সটিটিউটের পরিচালক তেই বিন বলেন, ভিসা সহজায়ন আন্তর্জাতিক পর্যটন উন্নয়ন প্রক্রিয়ার একটি সাধারণ ধারা। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য আরও বেশি দেশের উচিত্ পর্যটন ভিসা অবারিত করা। তিনি বলেন:

"ভিসা সহজায়নের চারটি দিক আছে। প্রথমত, ভিসামুক্ত ভ্রমণ; দ্বিতীয়ত, ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি; তৃতীয়ত, ইলেক্ট্রোনিক ভিসা এবং শেষে অন-অ্যারাইভাল ভিসা ও ৭২ ঘন্টার ভিসামুক্ত ভ্রমণ। চীনের ভিসা সহজায়ন খুব উন্নত নয়। খুব কম দেশ ও শহরের মানুষের চীনে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। তবে বিদেশিরা পেইচিং, শাংহাই, কুয়াংচৌ ও চেংতু দিয়ে চীনে প্রবেশ করলে, ৭২ ঘন্টার ট্রানজিট ভিসা নিতে পারে।"

জানা গেছে, রেশমপথ পর্যটন জনপ্রিয় করে তোলার জন্য চীন সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চীনের পর্যটন বিভাগের প্রধান সাও ছি ওয়ে মনে করেন, রেশমপথের ইতিহাস ২ হাজার বছরের এবং রেশমপথ-সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাহায্যে চীনের পর্যটন খাতের সহজায়ন উন্নয়ন হবে এবং এ প্রাচীন পথ নতুন প্রাণশক্তি পাবে।

প্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা শুনলেন ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক রেশমপথ সম্মেলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন। এখন শুনবেন স্বনির্ভর পর্যটন সম্পর্কে আরেকটি প্রতিবেদন। পাঁচ আগস্ট চীনা পর্যটন ইন্সটিটিউট ও চায়না সি ওয়াই টি এস ট্যুর হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড প্রকাশিত 'চীনা পর্যটন শিল্প উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৩'-এ বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে চীনের পর্যটন শিল্প দ্রুত উন্নত হয়েছে এবং পর্যটকদের স্বাধীনতা-সচেতনতা এবং ভোক্তা-ধারণার পরিবর্তনে পর্যটন পদ্ধতিও বৈশিষ্টপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে স্বনির্ভর পর্যটন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এটি ভবিষ্যতে একটি প্রধান ধারায় পরিণত হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পর্যটন অভিজ্ঞতা আহরণের পাশাপাশি স্বনির্ভর পর্যটক যখন পর্যটন সেবাদানকারী বাছাই করে তখন তাদের মান কড়া হয়। শুধু ব্যক্তিত্ব ও বৈচিত্রপূর্ণ পর্যটনসেবা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে।

মিঃ লু পেইচিংয়ের একজন অফিস কর্মী। তিনি প্রতি বছর অন্তত একবার ভ্রমণ করেন। গত জুলাই মাসে তিনি কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে শ্রীলংকায় গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে তিনি নিজে বিমান টিকিট ও হোটেল বুক করেন এবং একেবার স্বনির্ভর ভ্রমণ করেন। তিনি সাংবাদদাতাকে বলেন, দলগত ভ্রমণের চেয়ে স্বনির্ভর ভ্রমণের ব্যয় বেশি, তবে স্বাচ্ছন্দ্যময়। মি. লু বলেন:

"আমরা ৬জন একসাথে গিয়েছিলাম। শ্রীলংকায় আমরা একটি গাড়ি ভাড়া করি। আমরা আমাদের ইচ্ছামতো যখন, যেখানে যেতে পারি। ক্লান্ত হলে হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম নিতেও কোনো অসুবিধা হয় নি।"

চীনে মি. লুর মতো আরো বেশি মানুষ স্বনির্ভর পর্যটন পছন্দ করে। 'চীনা পর্যটন শিল্প উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৩'-এ বলা হয়, ২০১১ সালে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাজার রের্কড ২,৬৪০ কোটি পার্সন টাইমসে পৌঁছায় এবং এর মধ্যে মাত্র ১৩০ কোটি মানুষ পর্যটন এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করে। অনেক মানুষ বিদেশেও স্বনির্ভর ভ্রমণ করে। চীনা পর্যটন ইন্সটিটিউটের প্রধান তেই বিনের ধারণা, একা একা স্বনির্ভর ভ্রমণ একটি প্রধান পর্যটন পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে এবং এ পদ্ধতির ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল। তিনি বলেন:

"যাদের বেশি পর্যটন অভিজ্ঞতা আছে তারা স্বনির্ভর ভ্রমণ পছন্দ করে। আমাদের অনুমান অনুযায়ী, ২০১৩ সালে যারা চীনের অভ্যন্তরে ভ্রমণ করবে তাদের সংখ্যা ৩১০ কোটি ছড়িয়ে যাবে এবং এর মধ্যে ৩০০ কোটি মানুষ স্বনির্ভর ভ্রমণ করবে। তাছাড়া, আরও বেশি দেশ যদি চীনা পর্যটকদের ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ দেয় এবং চীনা ভাষাসহ নানা রকমের সেবা প্রদান করে, তালে বিদেশে চীনা পর্যটকের স্বনির্ভর ভ্রমণও বাড়বে।"

২০০৩ সাল থেকে হংকং ও ম্যাকাও মূলভূণ্ডের পর্যটকের জন্য স্বনির্ভর ভ্রমণ উন্মুক্ত করে দেয়। পরে মূলভূখণ্ডের পর্যটকরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপসহ দর্শনীয় স্থানে স্বনির্ভর ভ্রমণ করতে পারবে।

স্বনির্ভর ভ্রমণ উন্নয়নের পাশাপাশি স্বনির্ভর পর্যটকদের বৈশিষ্ট্যও পরিবর্তিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বনির্ভর পর্যটকদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের সংখ্যা ৩৭ শতাংশ এবং ৩১-৪০ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৫ শতাংশ। তরুণ পর্যটকদের জন্য ভাষার সমস্যা কম এবং তাদের অভিজ্ঞতাও বেশি। বর্তমানে চীনা পর্যটন এজেন্সিগুলো স্বনির্ভর পর্যটকের চাহিদা পূরণের জন্য নতুন সেবা প্রদান শুরু করেছে। তারা স্বনির্ভর পর্যটকদের জন্য বিমান টিকিট, হোটেল ও গন্তব্যস্থানের সেবার রিজার্ভেশন সেবা দেয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক