Web bengali.cri.cn   
নেপালের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি
  2013-08-07 15:17:15  cri


চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে চীনে প্রায় ৭০ লাখ ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন। তবে কর্মসংস্থান বাজারে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে সবাই এ গ্রীষ্মকালকে সবচেয়ে কঠিন কর্মসংস্থান-ঋতু বলে আখ্যায়িত করছে। বহু স্নাতক চাকরির বাজারে প্রবেশ করার কারণে কর্মসংস্থান এক যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতি কি শুধু চীনে দেখা যায়, নাকি সারা বিশ্বের অবস্থা এমন? আজকের অনুষ্ঠানে আমরা দেখবো নেপালের পরিস্থিতি কী; শুনব কয়েকজন নেপালি ছাত্রছাত্রীর গল্প। এরা সবাই চীনে লেখাপড়া করতেন এবং নিজের দেশে ফেরার পর চাকরিকে যোগ দিয়েছেন।

হিমালয়ের দেশ নেপালের প্রধান অর্থনৈতিক খাত পর্যটন ও কৃষি। সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং শিল্পখাতের উন্নয়নের অভাবের দেশটিতে চাকরির বাজার খুবই সীমিত। তাই একটি চাকরি পেতে একজন নেপালি স্নাতককে বেশ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়।

ধরুপা চীনে লেখাপড়া করা একজন নেপালি। তিনি এখন পর্যটক-গাইড হিসেবে কাজ করছেন। ২০০৬ সালে তিনি চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্স পর্বে পড়তেন। তিনি যখন চীনে ছিলেন তখন এখানকার অনেক প্রধান তথ্যমাধ্যমে শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, নেপালে ফিরে সহজেই একটি চাকরি খুঁজে পাবেন। তবে লোকসানের কারণে নেপালের অনেক তথ্যমাধ্যম নতুন কর্মী নিয়োগ করে না। ধরুপা যদিও অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ এবং চীনে লেখাপড়া করেছেন, তবুও নেপালে তিনি একটি উপযুক্ত কাজ খুঁজে পান নি। ধরুপা বলেন:

"দেশে ফিরে আসার পর আমি উপযুক্ত কাজ খুঁজে পাই নি। তবে আমি আবিষ্কার করি যে, অনেক বেশি চীনা পর্যটক নেপালে আসছে এবং তাদের জন্য চীনা ভাষা জানা গাইড খুব প্রয়োজন। আমি চীনা ভাষা বলতে পারি। তাই ২০১০ সাল থেকে আমি চীনা ভাষার গাইড হিসেবে কাজ করছি। অন্য চাকরির চেয়ে আমার আয় কম নয়।"

ধুরুপা সাংবাদদাতাকে জানান, নেপাল ফেরার পর তিনি দীর্ঘ সময় বেকার ছিলেন। তিনি একটি ভাল ও সম্মানজনক কাজ করতে চান। কারণ গাইড আসলে একটি ধারণাগত চাকরি নয়। তার স্বপ্ন হচ্ছে নিজেই একটি সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি গাইড হিসেবে অর্থ সঞ্চয় করছেন। তা ছাড়া, তিনি চীনা ভাষা শিখানোর জন্য নেপালে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। ধুরুপা বলেন:

"এখন অনেক নেপালি চীনা ভাষা শিখতে চায়। তাই আমি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি চীনা সরকারের প্রতিও কিছু অবদান রাখতে চাই। কারণ চীন সরকারের বৃত্তি নিয়েই আমি লেখাপড়ার জন্য চীনে যেতে পেরেছিলাম। আমি আশা করি, আরও বেশি নেপালি চীনা ভাষা শিখবে এবং আমি এ স্কুল চালিয়ে যাবো।"

ধুরুপার গল্প শুনে আমরা বুঝতে পারি যে, অনেক ছাত্রছাত্রী শুধু ভাল ও সম্মানজনক কাজ কিংবা নিজের যোগ্যতার ক্ষেত্রে কাজ করতে চায় বলে অনেক চাকরির সুযোগ ত্যাগ করে। তবে বুদ্ধিমানের কাজ হলো প্রথমে যে কেনো একটি চাকরিতে ঢুকে পড়া এবং তারপর নিজের পছন্দের চাকরি খুঁজে বের করা।

অসিম সুন্দর চীনা ভাষা বলতে পারা একজন সুদর্শন যুবক। ২০০৩ সাল থেকে ৫ বছর ধরে তিনি পেইচিং আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন ব্যবপস্থাপনা বিভাগে লেখাপড়া করেছেন। সে সময় তিনি অনেক রকমের কাজ করতেন। যেমন তিন বন্ধু মিলে একটি পর্যটন পরামর্শ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা, রিয়্যাল এস্টেট কোম্পানিতে নকশা আঁকা, ভিডিও কোম্পানির কাছে নিজের ধারণা বিক্রি করা ইত্যাদি। তিনি যে কোনো চ্যালেঞ্জিং কাজের ব্যাপারে আগ্রহী। এ বৈচিত্রময় কাজের অভিজ্ঞতার বদৌলতে তিনি নেপালের বৃহত্তম বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দিতে পারেন। তাছাড়া, তিনি দুটি পর্যটন কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নিজের সাফল্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন:

"অনেকে বলে যে আমি অনেক বেশি লেখাপড়া করেছি। তবে আমার মনে হয়, এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। ডিগ্রি শুধু একটি মাধ্যম এবং অভিজ্ঞতা ডিগ্রির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আপনি যা শিখছেন তা বইয়ে নেই। আমি চিন্তা করতে পছন্দ করি এবং অন্তর্জগতের উপর গুরুত্ব দেই। আমি চ্যালেঞ্জ ও নবায়ন পছন্দ করি এবং অন্য মানুষ যে ব্যাপার ভাবে না বা করতে পারে না, আমি তা করতে পারি।"

অসিমের গল্প থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় শুধু লেখাপড়ার জন্য নয়; বরং ধারণা লালন ও বাস্তব অনুশীলনের সময়। আসলে অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ ছাত্রছাত্রীদের জন্য কর্মসংস্থান বেশি কঠিন নয়।

নেপালে সার্বোত্তমের তিনটি প্রাইভেট ক্লিনিক আছে এবং তিনি নেপাল-চীন মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যানও। সার্বোত্তম দশ বছরের মতো চীনে চিকিত্সাবিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করলেও দেশে ফিরে প্রথম দিকে তিনি চাকরি খুঁজে পান না। তিনি বলেন:

"নেপালে ফিরে এসে আমি নিজের ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেই। তারপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে ফাইল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়। চীনে আমি নিউরোলজি বিভাগে লেখাপড়া করেছি। তবে নেপালে নিউরোলজি পেশায় চাকরির সুযোগ খুব কম। সেকারণে আমি উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পাই না। আমি প্রথমে একটি সরকারি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী হিসেবে এক বছর কাজ করি। তারপর প্রাইভেট ক্লিনিকে কাজ করি। প্রথম ৩-৪ বছর আমার তেমন কাজ ছিল না। আমার রোগী কম ছিল এবং অধিকাংশ মানুষ নিউরোলজি সম্পর্কে জানতো না। মাসে আমি মাত্র ১০-১২জন রোগী পেতাম। অনেক সময় পর অবস্থা ধাপে ধাপে ভাল হয়।"

বর্তমানে সার্বোত্তম নেপালে শীর্ষস্থানীয় নিউরোলজি চিকিত্সক। এখন তাঁর নিজের ক্লিনিক আছে এবং অনেক সুনামও অর্জন করেছেন তিনি। তবে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, তিনি ধৈর্য্য ধারণ না করলে বা নিজের পেশা ত্যাগ করলে সাফল্যের মুখ দেখতে পারতেন না। কর্মসংস্থান একটি সহজ ব্যাপার নয়। সার্বোত্তমের মতো একজন উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকেও শুরুর দিকে বেগ পেতে হয়। সার্বোত্তম সাংবাদদাতাকে বলেন, "কঠিন ব্যাপার কিছুই নেই, সবকিছু ভাল হতে পারে। আমি তরুণ-তরুণীর জন্য একটি গান গাইতে চাই।"

চীনে বা চীনের বাইরে কর্মসংস্থান একটি সহজ ব্যাপার নয়। যে কোনো সময় বা জায়গা হোক না কেন, নিজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় ও বাস্তবমুখী বিকল্প নির্বাচন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য আমাদের প্রয়োজন শুধু আস্থা, ধৈর্য্য ও দৃঢ়তা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক