Web bengali.cri.cn   
চীনের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে যাবে: মুখপাত্র
  2013-07-29 15:02:08  cri


সম্প্রতি বাণিজ্যিক সংঘাত, বৈদেশিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং বিদেশি পুঁজি প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয় দেশি-বিদেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং অর্থনৈতিক খাতে আন্তর্জাতিক তর্কবিতর্কের প্রধান ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ বছরের প্রথমার্ধের নানা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাত্ত প্রকাশের পর চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শেন ডান ইয়াং ১৮ জুলাই চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে এক বিশেষ সাক্ষাত্কার দেন। সাক্ষাত্কারে তিনি সম্প্রতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আলোচিত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয় ব্যাখ্যা করেন।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শেন ডান ইয়াং

শেন ডান ইয়াং বলেন, যদিও এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বৈদেশিক বাণিজ্যের ধারা কঠোর ও জটিল ছিল, তবুও বৈদেশিক বাণিজ্য চীনের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে যাবে। চীন সরকার অবিলম্বে এ সংক্রান্ত সহায়তা ব্যবস্থা কার্যকর করবে। এখন শুনুন এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন।

সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, এ বছরের প্রথমার্ধে চীনের আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮.৬ শতাংশ বেশি। যদিও এ প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছরের প্রথম দিকের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হয়েছে, তবু শেন ডান ইয়াং মনে করেন, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য পরিস্থিতি কঠোর ও জটিল হবে। তিনি বলেন, "কঠিন বিষয় হচ্ছে এখনো বৈদেশিক চাহিদার স্পষ্ট পুনরুদ্ধার বোঝা যাচ্ছে না। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে পুনরুত্থানের ধারা সূচিত হয়েছে, তবে নবোদিত অর্থনৈতিক সত্তাগুলোসহ জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর অন্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের আলো এখনো দেখা যায়নি। কঠোর পরিস্থিতি প্রধানত দেশের সার্বিক ব্যয় এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের রপ্তানির ব্যয় বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া, সবাই জানেন, বাণিজ্যিক সংঘাত আর বাণিজ্যিক পরিবেশ বহু ইস্যুর সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে এখন সার্বিক পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত জটিল।"

এ বছরের জুন মাসে চীনের আমদানি ও রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই গত ১৭ মাসের মধ্যে প্রথম বারের মতো ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। কেউ কেউ উদ্বিগ্ন যে, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের ভালো সময় শেষ হচ্ছে। কারও কারও পূর্বাভাস, চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান তিনটি খাতের মধ্যে রপ্তানি সর্বপ্রথম অবসরে যাওয়ার সর্তকসঙ্কেত দেবে। শেন ডান ইয়াং মনে করেন, এটা এক ভুল ধারণা। তিনি সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক দিক থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, "সামষ্টিক অর্থনীতি বিবেচনা করে দেখুন, বৈদেশিক বাণিজ্য অনিবার্য। কেন না? এখন সরকার আশা করে, অর্থনীতিতে বিনিয়োগের অবদানের হার কিছুটা হ্রাস পাক আর ভোগের অবদান হার কিছুটা বাড়ুক। এখন চীন সরকার ভোগের অবদান বৃদ্ধির জন্য অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে এটা এক দিন বা দুই দিনের মধ্যে অর্জিত হবে না। এমন পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। ব্যাষ্টিক দিক থেকে দেখলে বোঝা যায়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের রপ্তানি এখন অনেক উপাদানের সম্মুখীন হয়। যদিও পরিস্থিতি যথেষ্ঠ কঠিন, তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে চীনের কয়েক রকমের প্রাধান্য আছে। যদিও এখন আমাদের রপ্তানির ব্যয় আর দামের প্রাধান্য দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তবে প্রযুক্তি, ট্রেডমার্ক, গুণগত মান আর সেবা - এ চারটি ক্ষেত্রে চীনের প্রাধান্য ধাপে ধাপে প্রতিফলিত হয়েছে।"

উপাত্ত অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্থনীতিতে রপ্তানির অবদান ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ছিল। যদিও শিল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে রপ্তানির অবদান ১০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি, তবু শেন ডান ইয়াং মনে করেন, এটা চীনের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তিনি জানান, বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় পরিষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যথাশিগগির ইতিবাচক ব্যবস্থা নেবে।

তিনি বলেন, "আমরা কিছু ব্যবস্থাগ্রহণের প্রস্তাব করেছি। যেমন বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট সামষ্টিক নীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, রেনমিনপির বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, শুল্ক-বিষয়ক নীতি আর শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংকের তহবিল গড়ে তোলা ইত্যাদি নীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এবং বাণিজ্যের সুবিধার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।"

অবনতিশীল সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক সংঘাত প্রসঙ্গে মুখপাত্র শেন ডান ইয়াং বলেন, "চীন টানা তিন বছর বিশ্বের প্রথম রপ্তানিকারক দেশ ছিল। আমাদের রপ্তানির পরিমাণ খুব বেশি। এভাবে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রাধান্য গড়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি নিজ দেশের স্বার্থ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অভিযোগ ও মামলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।"

শেন ডান ইয়াং জোর দিয়ে বলেন, চীন সরকার দৃঢ়ভাবে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে শিল্পখাতের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। চীন সরকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থ, চীনের শিল্পের স্বার্থ আর দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য দৃঢ়ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

তথাকথিত 'চীন থেকে বিদেশি পুঁজি প্রত্যাহার' সম্পর্কিত খবর প্রসঙ্গে শেন ডান ইয়াং বলেন, কেবল কোনো কোনো অঞ্চলে এটা ঘটেছে। গত জুন মাসে চীনে ব্যবহৃত বিদেশি পুঁজির পরিমাণ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনে দিনে 'সফটওয়্যার' আর 'হার্ডওয়্যার' পরিবেশ উন্নত হওয়ায় চীন এখনো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চোখে ভালো বাজারের অন্যতম। (ইয়ু/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক