Web bengali.cri.cn   
গ্রীষ্মকালে আমরা প্রাত্যহিক জীবনে করছি এমন বেশ কয়েকটি বদ অভ্যাস
  2013-07-11 18:46:10  cri

গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছে। বাতাস ক্রমশই আগুন গরম হয়ে উঠছে। গ্রীষ্মকালে প্রকৃতির খোলা হাওয়া উপভোগ করা সত্যি ভীষণ কষ্টকর। তাইনা? গ্রীষ্মকালে অনেকেই খুব সকালে উঠে শরীর চর্চা করেন এবং অতি গরমের কারণে অনেকে হয়ত ঘণ ঘণ এবং দ্রুত পানি পান করেন, এ অভ্যাস কতটা শরীর সম্মত তা কি জানি আমরা? চলুন আজকের অনুষ্ঠানে আমরা গ্রীষ্মকালে আমরা প্রাত্যহিক জীবনে করছি এমন বেশ কয়েকটি বদ অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করবো।

গ্রীষ্মকালে অনেকেই ভোরে ঘুম থেকে ওঠে পার্কে গিয়ে শরীর চর্চা করেন। সাধারণত আমরা একে একটি ভাল অভ্যাস হিসেবেই দেখে থাকি তাই না? আসলে কিন্তু এটা কোনো কার্যকর ও সুস্থ অভ্যাস নয়। গ্রীষ্মকালের আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলা আর দূষণের পরিমান বেশি থাকে। বিশেষ করে রাতের বাতাসে জমে থাকা ধুলা বালু সূর্যদয়ের আগে দূরীভূত হয় কম। এ ছাড়া সুর্যাদয়ের আগে বৃক্ষরাজি তার বাতাসের উপাদান কার্বন শোষণ করতে পারে না এবং একই ভাবে অক্সিজেন ত্যাগ করতেও পারে না। তাই এ সময়ে পার্কের ঘন বৃক্ষরাজির মাঝে প্রচুর পরিমানে কার্বন থাকে, যা শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর একটি উপাদান। সেজন্য গ্রীষ্মকালে খুব ভোরে বা সূর্যদয়ের আগে পার্কে গিয়ে শরীর চর্চা না করাই ভাল।

গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রা আর আর্দ্রতার কারণে অতি ঘামের কারনে শরীরে পানির অভাব তৈরী হয়। সেজন্য অনেকেই দ্রুত পানি পান করে থাকেন। কিন্তু পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হলেও গরমের মধ্যে দ্রুততার সাথে পানি পান করা একদমই ভাল নয়। কেননা যত পানি পান করবেন তত দ্রুত পানি রক্তের সঙ্গে মিশিয়ে যাবে এবং রক্তের তরলীকরণের পরিমান দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। আর এ সময় যাদের হৃদপিন্ড বা হার্টের অবস্থা শক্ত পোক্ত নয়, বিশেষ করে যারা করোনারি হার্ট রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য দ্রুত পানি পান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে বুকে চাপ তৈরী হয় ও শ্বাসরুদ্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সেজন্য গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদ থেকে এসেই বা পরিশ্রান্ত অবস্থায় দ্রুততার সাথে পানি পান করবে না। বরং ধীরে ধীরে অল্প পরিমাণ করে বেশ কয়েকবার পানি পান করুন। প্রতিবার ১০০ থেকে ১৫০ মিনিলিটার পানি পান করুন এবং অবশ্যই অধিক ঠান্ডা পানি পান করা পরিহার করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ১০ ডিগ্রির ওপরে উষ্ণ পানি পান করা শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো।

গ্রীষ্মকালে সুর্যরশ্মির প্রখরতা বেশি থাকে। প্রখর সুর্যালোকে চোখ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ সময়ে চোখকে যথা সম্ভব শীতল ও ছায়ময় অবস্থায় রাখা ভালো। সেজন্য সুর্যের প্রখরতা থেকে চোখকে বাঁচিয়ে না চললে চোখ দ্রুতই নানা সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে বের হতে চাইলে আপনার উচিত সানগ্লাস, টুপি বা হ্যাট অথবা ছাতা ব্যবহার করা। সানগ্লাসের গাঢ় বাদামী ও হালকা সবুজ রঙ হলে, সুর্যের প্রখরতা প্রতিরোধের জন্য উত্তম। এছাড়া আপনি যদি ডায়েট করে থাকেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় চোখের জন্য উপকারী এমন খাদ্য বেশি করে খান। যেমন, Longan, yams, গাজর, জুজুবি ফল বা Red dates বেশি করে খাবেন। হাত দিয়ে চোখ পরিস্কার বা ঘর্ষণ করা যাবে না। পরিস্কার ও হালাকা ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ-মুখ ধুয়ে ফেলুন, এতে চোখের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এসি ব্যবহার বেড়ে যায়। মনে রাখবেন এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঘাড় ও পিঠের মেরুদন্ডে যাতে সরাসরি এসি'র বাতাস না লাগে সে বিশেষ ভাবে সর্তক হোন। যদি ক্রমাগত ঘাড় ও মেরুদন্ডে সরাসরি এসির বাতাস লাগতে থাকে তাহলে দীর্ঘস্থায়ী Spasm এবং ব্যাক পেইনে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এসি রয়েছে এমন ঘরে নিয়মিত কাজের ক্ষেত্রে আপনার বসার স্থান নির্বাচনে সতর্ক থাকুন যাতে ঘাড় ও মেরুদন্ডে সরাসরি বাতাস না লাগে। তাছাড়া এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ২৫ সেন্টিগ্রেড নিচে রাখবেন না কখনো। যদি একান্তই ২৫ ডিগ্রীর নিচে রাখতে হয়, তাহলে আপনি ঘাড়ে হালকা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং রাতে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।

গীষ্মকালের আবহাওয়ায় অনেক বেশি Muggy এবং আর্দ্রতা বেশি থাকে। সে সময় বাতাসে প্রচুর ধুলোবালু থাকে, যা সহজে চামড়া ও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে এজমা ও সর্বক্ষণ নাক থেকে পানি পড়া জাতীয় এলার্জি সৃষ্টি হয়। সেজন্য গ্রীষ্মকালে দু'দিনে অন্তত একবার আপনার বাসা পরিস্কার করা উচিত।

গ্রীষ্মকালে সহজেই অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময়ে ঠান্ডা খাবার পরিহার করা ভালো। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতের ঘুমানোর আগে ঠান্ডা খাবার না খাওয়া ভালো।


সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক