Web bengali.cri.cn   
চীনের মিং রাজবংশ আমলের বিখ্যাত নাট্যকার ফন মং লং সম্পর্কে।
  2013-07-09 18:31:55  cri
ফন মং লং চীনের ছিং রাজবংশ আমলের একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক। সারা জীবনে তিনি অনেক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। তা ছাড়া, তিনি অনেক লোকগল্প ও লোকগানও সংগ্রহ করেছিলেন। তার অধিকাংশ লেখায় মিং রাজবংশ আমলের সমাজ ও বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনের চিত্র আঁকা হয়েছে। তার লেখা কয়েকটি বই এখনও চীনে অত্যন্ত জনপ্রিয়। চীনের সাহিত্য ইতিহাসে ফন মং লংয়ের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ফন মং লং জন্মগ্রহণ করেন একটি অভিজাত পরিবারে। পরিবারে তিনি বাবা-মার ছোট ছেলে ছিলেন। তার বড় ভাই মিং রাজবংশ আমলের বিখ্যাত চিত্রকর এবং মেজ ভাই মিং রাজবংশ আমলের বিখ্যাত কবি ছিলেন। ছোটবেলা থেকে তিনি দুই ভাইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের বই পড়তে শুরু করেন। বড় হওয়ার পর তিনি কয়েকবার রাজদরবারের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন। ধীরে ধীরে রাজদরবারের কর্মকর্তা হওয়ার আগ্রহ তিনি হারিয়ে ফেলেন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে শুরু করেন। সেসময় সাধারণ মানুষ লোকসঙ্গীত পছন্দ করতো। ফন মং লংও লোকসঙ্গীত পছন্দ করতেন। তিনি মাঝে মাঝে লোকসঙ্গীতের আসরে গিয়ে বসতেন। এ-সব লোকসঙ্গীতে নারী-পুরুষের প্রেম ও আবেগ-অনুভূতির কথাই মূলত প্রকাশ পেত। আস্তে আস্তে অনেক গায়ক ও গায়িকার সঙ্গে ফন মং লং-এর বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তারা ফন মং লংকে খুব শ্রদ্ধা করতেন।

তখন থেকে ফন মং লং লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করতে শুরু করেন। সময় পেলে তিনি নিজেও গাইতেন। তা ছাড়া, তিনি নিজে লোকসঙ্গীত লিখতেও শুরু করেন। তার একজন বন্ধু তাকে জিজ্ঞেস করলেন: 'তুমি কেন লোকসঙ্গীত সংগ্রহ কর? তোমার উদ্দেশ্য কী?' ফন মং লং উত্তর দিলেন: 'আমি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য লোকসঙ্গীতের একটি সংকলন বের করতে চাই।' পরে এ-কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। যারা লোকসঙ্গীত গাইতে পারে তারা সবাই ফন মং লংয়ের কাছে আসতে শুরু করলো এবং লোকসঙ্গীত সংগ্রহ ও তার সুর শিখে নেয়ার ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করতে লাগল। স্থানীয় জনসাধারণের সাহায্যে ফন মং লং অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় দু'শোটি লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করলেন। তিনি এক বছরের মধ্যে লোকসঙ্গীতের দু'টো সংকলন শেষ করলেন। এ দু'টো লোকসঙ্গীত সংকলন বের হওয়ার পর সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হল। ফন মং লংয়ের প্রচেষ্টায় লোকসঙ্গীতের দ্রুত উন্নতি হল। মিং রাজবংশ আমলের সাহিত্যে লোকসঙ্গীত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে পেরেছিল। এ ক্ষেত্রে ফন মং লংয়ের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

যখন ফন মং লংয়ের বয়স ৫৯ বছর, তখন তিনি রাজদরবারের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। তিনি কয়েক বছরের জন্য একটি জেলার গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। এই জেলার গভর্নর হওয়ার পর ফন মং লং জনসাধারণের জীবিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করলেন। স্থানীয় জনসাধারণের কষ্টের জীবন দেখে ফন মং লংয়ের মন খুব খারাপ হতো। তিনি বেশ কয়েকবার রাজদরবারকে স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে কম কর আদার করার অনুরোধ করলেন। কিন্ত রাজদরবার তার কথা শুনলো না। তিনি অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়লেন। এ-অবস্থায় কার্যমেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করে নিজের জন্মস্থানে ফিরে গেলেন। তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, আর কোনোদিন রাজদরবারের কর্মকর্তার কোনো পদ গ্রহণ করবেন না।

মিং রাজবংশ আমলে দক্ষিণ চীনের সুযো শহরে স্থানীয় নাটক খুব জনপ্রিয় ছিল। ফন মং লংও এ-সব নাটক দেখতে পছন্দ করতেন। তিনি অনেক নাটক সংগ্রহ করলেন। একদিন পথে একজন কৃষকের সঙ্গে তার দেখা হল। কৃষকের হাতে আঘাত দেখে ফন মং লং জিজ্ঞেস করলেন: 'তোমার হাতের এই অবস্থা কীভাবে হলো? মনে হয় তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে।' কিন্তু কৃষক উত্তর দিলেন: 'না, কোন কষ্ট লাগে না। একটু আগে আমি একটি নাটক দেখেছি। নাটকের প্রধান নায়ক অত্যন্ত সাহসী। আমি তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি। আমি একজন সাহসী মানুষ হতে চাই।' কৃষকের কথা শুনে ফন মং লং বুঝতে পারলেন যে, একটি ভাল নাটক মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। একজন অশিক্ষিত মানুষ নাটক দেখার পর এর নায়ককে অনুসরণ করতে চাইছে। এটা থেকে প্রতিপন্ন হয় যে, নাটকের ভূমিকা অসাধারণ।

তখন থেকে ফন মং লং জনসাধারণের পছন্দমতো নাটক লিখতে শুরু করেন। তা ছাড়া, তিনি গল্পও লিখতে শুরু করেন। তার লেখা গল্পগুলোতে মানুষের প্রকৃতিকে নানাভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। জীবনে তিনি তিনটি অত্যন্ত বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ লিখেছেন। এই তিনটি গল্পগ্রন্থের নাম: ' 喻世明言, 警世通言, 醒世恒言。বই তিনটিতে মোট তিন শতটি ছোটগল্প অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এ-সব ছোটগল্পে মিং রাজবংশ আমলের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবন প্রতিফলিত হয়েছে। এ বইগুলো খুব তাড়াতাড়ি পাঠকপ্রিয়তা পায়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক