Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিম্ন কার্বন নিঃসরণ পরিস্থিতি এবং সুন্দর জীবন-যাপন
  2013-06-27 10:36:32  cri
আমরা বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন নিঃশ্বাস নেই, পানি পান করি এবং খাদ্য খাবার খাই। এগুলো আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় এবং প্রয়োজনীয় উপাদান আর এগুলো ছাড়া আমরা কোনোভাবেই বেঁচে থাকতে পারবো না। অতি সাধারণ কথাটা আরও একবার মনে করে নিতে পারেন যে, এই তিনটি উপাদানই কিন্তু আমরা পেয়ে থাকি পরিবেশ থেকে, বলতে পারেন পরিবেশ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এই তিনটি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। তাই আমাদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই পরিবেশের সুষ্ঠ সংরক্ষণ করা উচিত। তাই না? গত ১৭ জুন চীনের প্রথম জাতীয় নিম্ন কার্বন দিবস পালিত হয়। প্রথমবারের ন্যায় উদযাপিত এই দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল 'জ্বালানি সাশ্রয় আর নিম্ন কার্বন নিঃসরণ করুন এবং বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলুন'। বর্তমানে 'নিম্ন কার্বন' শব্দটি চীনসহ সারা বিশ্বে ব্যপক প্রচলিত একটি শব্দ। বলা যায় সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকতে হলে নিম্ন কার্বন নিঃসরণ করার কোনো বিকল্প নেই, এই বিষয়ে প্রায় সবাই সচেতন। সবাই কম বেশি পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য নিজ নিজ অবদান রাখতে সজাগ। আচ্ছা, আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিম্ন কার্বন নিঃসরণ পরিস্থিতি এবং সুন্দর জীবন-যাপন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। শুনুন তাহলে...

ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ২০০৯ সালে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের আয়োজিত হয়। সম্মেলনের পর সমগ্র শহরটি নিম্ন কার্বন নিঃসরণে জীবন-যাপনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। এ শহরে অনেকে ইলেক্ট্রনিক ঘড়ির পরিবর্তে চাবি দেওয়া স্বয়ংক্রিয় ঘড়ি, ইলেক্ট্রনিক টুথব্রাশের পরিবর্তে হাতেধরা টুথব্রাশ ব্যবহার করেন এবং জিমের শরীরচর্চার পরিবর্তে প্রাকৃতিক পরিবেশে শরীর চর্চা করেন। পাশাপাশি ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারে কাপড় শুকানোর ক্ষেত্রে মেশিনের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়কেই বেশি পছন্দ করে থাকেন। এমন কি হোটেলে সেই ধরণের কাগজ এবং টিসু ব্যবহার করা হয় যা রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহার করা যায়। সুতরাং আপদমস্তক প্রযুক্তি ও যন্ত্র নির্ভর না হয়ে জীবন উপভোগে কিভাবে অধিক বেশি প্রকৃতির সাথে থাকা যায় সে রকম একটি প্রচেস্টাই লক্ষ্য করা যাবে এই সকল উদ্দ্যোগের মাধ্যমে।

সিডনির মেইকা রুই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নির্মিত লাইব্রেরি

চলতি বছরে নিম্ন কার্ব নির্গমনে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরের কিছু পদক্ষেপ ব্যপক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সিডনিতে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্ন কার্বন নিঃসরণ উপযোগি স্থাপত্য বেশ প্রশংসনা অর্জন করছে। সিডনির মেইকা রুই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নির্মিত লাইব্রেরি এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত। গোটা লাইব্রেরিতে বিদ্যুত সংযোগ বিহীন এমন একধরণের পদ্ধতি উদ্ভাবণ করা হয়েছে যার মাধ্যমে বইয়ের বিন্যাস ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে। যার ফলে এই ভবনে গ্রীণ-হাউস নির্গমনের পরিমাণ বার্ষিক ৮১৭ টন কমেছে। লাইব্রেরির বহির দেয়ালে একধরণের অটমেটিক ব্যাফল ব্যবহার করা হয়েছে যেটি সুর্যের কম আলোর শক্তি ব্যবহার করেই অটমেটিকভাবে খুলে যাবে। যাতে প্রাকৃতিক আলো ভিতরে ঢুকতে পারে। আবার প্রখর সুর্যের আলো থেকে রক্ষা পেতে সে ব্যাফল অটমেটিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে, যাতে ভিতরে তাপমাত্রা সর্বক্ষণ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পূর্বে অস্ট্রেলিয়ায় বাই-সাইকেলের ব্যবহার খুব প্রচলিত ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাইকেলের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত দু'বছরে সাইকেলের ব্যবহার ৮২ শতাংশ বেড়েছে।

জাপানে পরিবেশ সংরক্ষণের ধারণাটি পাঠ্যক্রমে বিশেষ গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সে দেশে কিন্ডারগার্টেনে পড়ুয় শিশুদের থেকেই পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত শিক্ষাদান শুরু হয়। জাপানে অনেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ক্লাব আছে। তিন বছর বয়সী শিশু সে সংস্থাগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারে। জাপানের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমও বারবার নিম্ন কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে জীবন-যাপন বিষয়ে অনবরত তথ্য প্রকাশ করে থাকে। যেমন, প্রতিদিন টিভি প্রোগ্রামে এ বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান থাকে। বিস্তারিত পরীক্ষামূলক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে সকল জাপানীকে পানি ও বিদ্যুত্ সাশ্রয় করতে শেখায়। সে সব অনুষ্ঠান খুব জনপ্রিয়।

জাপানে অনেকেই বাথটাবে গোসল করতে পছন্দ করেন। এ সময়ে গোসল করার পর তারা সে পানি দিয়ে কাপড় বা মেঝে ধুয়ে ফেলেন। দোকানে টিস্যুর ব্যবহারের পরিবর্তে রুমালের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। রুমাল টিস্যুর তুলনায় অধিক সুন্দর এবং পরিবেশ বান্ধব। আবার অনেকেই রেস্তোরায় খেতে গেলে সাথে চপস্টিক নিয়ে যান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। গাড়ি থেকে দূষিত বায়ু নির্গমন এবং শিল্পজাত বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কার্বন নির্গমণে আরও কঠোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মার্কিন কমিউনিটিতে অটোমেটিক যন্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে এবং হাত দিয়ে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পেট্রোলের পরিবর্তনে সিএনজি'র ব্যবহার বৃদ্ধি করা হচ্ছে বিভিন্ন খাতে, যাতে কার্বন নির্গমন ব্যাপক হারে কমানো যায়।


সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক