Web bengali.cri.cn   
তা থিয়ান চা চাষীদের স্বপ্ন
  2013-06-26 12:42:01  cri


প্রত্যেক মানুষের নিজের স্বপ্ন থাকে। এ যুগে সাধারণ চীনা মানুষের স্বপ্ন কী? আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ফু চিয়ান প্রদেশের তা থিয়ান জেলার চা চাষীদের স্বপ্ন সম্পর্কে জানব।

সূর্য তখন অস্তমিত; আমাদের সাংবাদদাতা ফু চিয়ান প্রদেশের তা থিয়ান জেলাধীন উ সান উপজেলার হে ইয়াং গ্রামের একটি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। রাস্তার দু পাশে অবস্থিত গ্রামের অধিবাসীদের দুই-তিন তলার লাল ছাদের বাড়ি। প্রতিটি বাড়ির সামনে রাখা চা প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রপাতি। সাংবাদদাতা যখন গ্রামের অধিবাসী ছেন তে ইয়ংয়ের বাসায় প্রবেশ করেন তখন তার স্ত্রী নৈশভোজ করছিলেন। ছেন তে ইয়ংয়ের পরিবারে সদস্য ৫জন। তার দু সন্তান লেখাপড়ার জন্য বাইরে থাকে। ছেন তে ইং ও তার স্ত্রী তিন একরের বাগানে চা চাষ করে। চা-পাতা তোলার মৌসুমে ছেন তে ইয়ংয়ের বাবাও তাদেরকে সাহায্য করেন। ছেন তে ইয়ংয়ের পরিবারের বার্ষিক আয় প্রায় ২ লাখ ইউয়ান। অর্থাত্ স্থানীয় একটি বিখ্যাত চা চাষী পরিবার তারা।

সড়ক নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালে গ্রামের অধিবাসীদের ধানি জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তা থিয়ান জেলার উ সান উপজেলার প্রধান চেন তে সু বলেন, জমি অধিগ্রহণ করার পর তারা চা চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন,

"২০০৬ সালে গ্রামের কয়েকজন চা চাষ শুরু করে এবং তা থেকে আয় খুব ভাল হওয়ায় গ্রামের সবাই চা চাষ বেছে নেয়। দু-তিন বছরের ব্যবধানে চা চাষের ব্যাপ্তি বেড়ে যায়।"

আসলে ২০০২ সাল থেকেই তা থিয়ান জেলার কয়েকজন গ্রামবাসী বিচ্ছিন্নভাবে চা চাষ করত; কিন্তু সে চাষের পরিধি তেমন বড় ছিল না। গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টি ক্যাডারদের উদ্যোগে ২০০৫ সালে কয়েকটি চা চাষের 'দৃষ্টান্ত অঞ্চল' প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সে 'দৃষ্টান্ত অঞ্চলের' ইতিবাচক প্রভাবে চা চাষীর সংখ্যা ও চা উত্পাদনের পরিমাণ বেড়ে যায়।

যদিও চেন তে ইয়ং প্রথম থেকেই চা চাষ করেন, কিন্তু গোড়ার দিকে তিনি শুধু চা-জাত কাঁচামাল বিক্রি করতেন, যা তেমন লাভজনক ছিল না। পরে তিনি চা প্রক্রিয়াকরণ শুরু করেন। তিনি বলেন,

"২০০৬ সালের আগে আমি শুধু চা-জাত কাঁচামাল বিক্রি করতাম এবং চা পাতা তোলার জন্য কর্মী নিয়োগ করতে হতো। এক কেজি চা-জাত কাঁচামাল মাত্র ২০ ইউয়ানে বিক্রি হতো বলে তেমন আয় হতো না।"

তা থিয়ান জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ চা চাষের জন্য খুব উপযোগী। যেমন এ জেলায় পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার মিটার। সারা বছর সেখানকার গড় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৭০০ মিলিলিটার। জমিও চা চাষের জন্য খুব ভাল; সেখানকার মাটি হলুদ ও লাল। ভাল প্রাকৃতিক পরিবেশে উত্পাদিত তা থিয়ান চার মানও খুব ভাল। দশ বছরের অগ্রযাত্রায় তা থিয়ান ফু চিয়ান প্রদেশের বিখ্যাত একটি উঁচু পাহাড় চা-উত্পাদন অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে চা চাষীরা বিচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করার এবং বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রবল হওয়ার কারণে তা থিয়ান চা কঠিন সময়ে পড়ে। তা থিয়ান জেলার উ সান উপজেলার প্রধান চেন তে সু মনে করেন, একতাবদ্ধ ব্যবস্থাপনার চেয়ে চা চাষীদের বিচ্ছিন্ন ব্যবসার প্রভাব অনেক কম। তিনি বলেন,

"চাষীরা বিচ্ছিন্নভাবে চা চাষ ও বিক্রি করলে ভোক্তা ও চাষীদের মাঝখানের মধ্যস্বত্বভোগীরা অধিকাংশ মুনাফা নিয়ে নেয়। তাছাড়া, আমাদের চা ব্যবসা শুরু করার সময় দীর্ঘ নয় এবং বাজারে আমাদের প্রভাবও খুব বেশি নয়। চা সমবায় প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তাদের অন্যতম হিসেবে আমি ট্রেডমার্ক ও সংশ্লিষ্ট অনুমতিপত্রের জন্য আবেদন করেছি।"

পেশাদার সমবায় প্রতিষ্ঠার পর চাষীরা একসাথে পণ্য বিক্রি এবং চা বাগান ব্যবস্থাপনা করতে পারে। এতে চার মান যেমন নিশ্চিত হয়, তেমনি উত্পাদন ব্যয়ও হ্রাস পায়। চেন তে ইয়ং অবিলম্বে সমবায়ে যোগ দেন এবং এ থেকে উপকৃত হন। তিনি বলেন,

"সমবায়ে যোগ দেওয়ার পর আমি যখন সার ও কীটনাশক কিনি, তখন প্রতিব্যাগে আমার ২০ ইউয়ান কম ব্যয় হয়। যদি আমাদের সমবায় নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারে, তাহলে আমরা নিজেদের নামের পণ্য বিক্রি করতে পারব এবং তার মুনাফা আরও বেশি হবে।"

চা চাষের অধীন ভূমির আয়তন, প্রক্রিয়াকরণের মান, বাজারের আকার ও চা সংস্কৃতির উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে তা থিয়ান ফু চিয়ান নতুন চা উত্পাদন অঞ্চল একটি দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, প্রদেশের অর্থ ও কৃষি বিভাগের সমর্থনে ২০০৮ সাল থেকে তা থিয়ান জেলার প্রাকৃতিক চা বাগান দ্রুত প্রসারিত হয়।

চা চাষীরা অনুর্বর পাহাড়ে চা বাগান গড়ে তোলার মাধ্যমে পানি ও ভূমির ক্ষয় হ্রাস করার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করতে পারছে। পাহাড়ে গাছগাছড়া যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য চাষীরা টুপি ও জুতো পরে।

হে ইয়াং গ্রামের প্রধান ছেন তে সু বলেন, সারা গ্রামের চা চাষীরা উচ্চতর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে চা চাষ করে এবং তাদের চার মান নির্ভরযোগ্য। তিনি বলেন,

"আমরা জৈব চা এবং অক্ষতিকর চা উত্পাদনের সিদ্ধান্ত নেই। এটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রাকৃতিক উপায়ে কীট দূর করি এবং জৈবসার ব্যবহার করি।"

গত বছর হে ইয়াং গ্রামের অধিবাসীদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ছিল ৯ হাজার ইউয়ান। এক সময়ের পশ্চাত্পদ এ গ্রাম বর্তমানে উন্নয়নের একটি দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। তবে শহরের অধিবাসীদের আয়ের চেয়ে কৃষকদের আয় কম। ২০২০ সাল নাগাদ কৃষকদের আয় যাতে দ্বিগুণ হয়, স লক্ষ্য অর্জনের জন্য তা থিয়ানের চা চাষীরা যৌথ ব্যবস্থাপনা করার মাধ্যমে নিজেদের ব্র্যান্ড তৈরি করবে। 'পা সিয়ান লেই ছি' স্থানীয় একটি কিংবদন্তী এবং তারা এ কিংবদন্তীকে তাদের চা ব্র্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করবে। ছেন তে সু বলেন,

"পা সিয়ান লেই ছি'র কিংবদন্তী অনুযায়ী, ৮জন দেবতা এখানে একটি পাহাড়ে ওয়েইছি দাবা খেলতেন এবং চা খেতেন। এ পাহাড় এখন ঠিক একটি চা উত্পাদন কেন্দ্র। তাই আমরা এ কিংবদন্তী অনুযায়ী নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই।"

তা থিয়ান জেলার প্রধান থাং জুন সেং মনে করেন, হে ইয়াং গ্রামের চা উত্পাদনের ব্যাপ্তি খুব বেশ নয় এবং এ কারণে চাষ প্রযুক্তি ও চার মান খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি তারা উন্নত চা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে, তাহলে তাদের আয়ও বাড়বে। তাছাড়া, বাজার উন্নয়ন ও ব্র্যান্ডের প্রচারও খুব গুরুত্বপূর্ণ। উত্পাদনের চেয়ে পণ্যের বাজারজাতকরণে মুনাফা বেশি এবং চাষীরা বাজারজাতকরণে যোগ দিলে আরও বেশি পয়সাকড়ি রোজগার করতে পারবে।

তা থিয়ান জেলার হে ইয়াং গ্রামের প্রধান চেন তে সু মনে করেন, তার স্বপ্ন হলো জীবনযাত্রার মান এবং তাদের চা সমবায় দিন দিন উন্নত হবে এবং তাদের চা বাজারে জনপ্রিয়তা পাবে ও স্বীকৃতি অর্জন করবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক