Web bengali.cri.cn   
বিদেশে চীনাদের ভ্রমণ
  2013-05-15 16:27:12  cri

বসন্তকালে চীনে ফুল ফোটার সময় এবং ছুটিতে প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এবারের পয়লা মে দিবসের ছুটিতে ৬০ শতাংশ চীনা পর্যটক বিদেশে ভ্রমণ করতে যায়। চিয়াং সু প্রদেশের সু ছিয়ান শহরের মিস্টার ছুং একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মী, যিনি কাজকর্মে খুব ব্যস্ত থাকেন। পয়লা মের ছুটি ও বার্ষিক ছুটি যোগ করে এক সপ্তাহের জন্য পরিবারের সঙ্গে হংকং যান তিনি। তিনি বলেন:

"মে মাসের আবহাওয়া খুব ভাল। কাজে খুব ব্যস্ত বলে এবারের সুযোগে স্ত্রীর সঙ্গে ভ্রমণে বেরিয়ে আয়েশ করি।"

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২৪ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত সময়ে ৩৮ লাখ পর্যটক হংকংয়ে প্রবেশ করে এবং হংকং থেকে বাইরে যায়। একটি পর্যটন প্রতিষ্ঠানের সূত্রে জানা গেছে, পয়লা মে অর্থাত্ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ছুটিতে যেসব চীনা পর্যটক বিদেশ ভ্রমণ যায়, তাদের অধিকাংশ যায় আশেপাশের দেশগুলোতে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী পানি-বিচ্ছুরণ উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে অনেকে এ ছুটির সময় থাইল্যান্ড যেতে চায়। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবারের উত্সবের সময় থাইল্যান্ডে পর্যটকদের বুকিংয়ের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। একটি পর্যটন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মিস্টার চু বলেন:

"গত বছর চীনে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল থাইল্যান্ডে শুটিং করা এমন একটি চলচ্চিত্রে দশ হাজার মানুষের পানি বিচ্ছুরণ উত্সব এবং খং মিং লণ্ঠন উড়ানো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেকারণে চলতি বছর আমরা এটিকে মাথায় রেখে একটি পর্যটন রুট নকশা করি।"

লি চুনও একটি পর্যটন সংস্থার ব্যবস্থাপক। তিনি সাংবাদদাতাকে জানান যে, চীনে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে ব্যয় অনেক বৃদ্ধির কারণে অনেক মানুষ বিদেশ ভ্রমণে যায়। লি চুন বলেন:

"পয়লা মের ছুটিকালে চীনে পর্যটনের খরচ অনেক ও দ্রুত বেড়েছে এবং প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে বহু লোকের সমাগম হয়। বিদেশে ভ্রমণ প্যাকেজে খরচ কম এবং দর্শনীয় স্থানে এত বেশি মানুষ থাকে না।"

পর্যটন অনুরাগী তেই ছান চুন মনে করেন, বিদেশ ভ্রমণ চীনা মানুষের একটি জীবনধারণায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন:

"দশ বছরের আগে বিদেশে ভ্রমণ করা, কেনাকাটা করা এবং দিগন্ত প্রসারিত করা ছিল চীনাদের জন্য একটি নতুন বিষয়। তবে অর্থনৈতিক শক্তি বাড়ার সাথে সাথে বিদেশে যাওয়া খুব সাধারণ একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। চীনা পর্যটক আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন দেশ ভিসা বিষয়ে অনেক সুবিধা দেয়। তাদের কাছে চীন খুব বড় একটি বাজার। চীনের লোকসংখ্যা বিপুল এবং অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। চীনারা উন্নতমানের জীবন অন্বেষণ করছে এবং অনেক দেশের জন্য চীন বাজার পর্যটন এমনকি অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি।"

বিশ্বের অনেক দেশ চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠার প্রক্রিয়া থেকে উপকৃত হচ্ছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক চীনা পর্যটক ৬ হাজার ডলার ব্যয় করে এবং এ অঙ্ক সব দেশের পর্যটকদের মধ্যে শীর্ষে। যদি চীনা পর্যটকদের কাছ থেকে অর্জিত আয়কে রপ্তানি আয় হিসেবে হিসাবে ধরা হয়, তাহলে ২০১১ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনুকুল উদ্ধৃত্ত ৪শ' ৪০ কোটি ডলার।

গত ২৪ এপ্রিল চীনের পর্যটন গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকাশিত 'চীনাদের বিদেশে ভ্রমণ বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৩' অনুযায়ী, ২০১২ সালে বিদেশে চীনা পর্যটকদের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৩০ লাখ। এ সংখ্যা ছিল তার আগের বছরের তুলনায় ১৮.৪১ শতাংশ বেশি। ২০১২ সালে বিদেশে চীনা পর্যটকদের ব্যয় ১০ হাজার ২শ' কোটি ডলার ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রথম স্থানে দাঁড়ায়। ওই বছর বিশ্ব পর্যটন অর্থনীতিতে চীনের অবদান হার পৌঁছায় ১৩ শতাংশে। এর আগে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘসময় ধরে প্রথম দুটি স্থানে ছিল। এ বিষয়ে চীনের পর্যটন গবেষণা ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক বিভাগের চিয়াং ই ই বলেন:

"চীনের জনসংখ্যা ১শ' ৩০ কোটি এবং এ বিপুল জনসংখ্যার কারণে চীনের পর্যটকদের সংখ্যাও বিশাল। ২০১২ সালে বিদেশে চীনা পর্যটকের সংখ্যা জার্মানির লোকসংখ্যা ও অস্ট্রেলিয়া লোকসংখ্যার চারগুণের সমান।"

গত দশ বছরে বিদেশে চীনা পর্যটকের সংখ্যা বছরে ১৮ শতাংশ হারে বেড়েছে এবং পর্যটনের ধারাও পরিবর্তিত হয়েছে। অভিজ্ঞতার গভীরতা ও জ্ঞান অন্বেষণের ওপর গুরুত্ব দেয় – এমন চীনা মানুষ পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানসমৃদ্ধ দেশ ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে পদাঙ্ক ফেলেছে।

চীনের উন্মুক্ততা এবং অর্থনীতির বিশ্বায়নের কারণে চীন ও বিশ্বের মধ্যকার ব্যবধান কমে গেছে। ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বোআও এশিয়া ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন:

"চীন এবং এশিয়া ও বিশ্বের স্বার্থ ব্যাপক ও গভীরভাবে মিলে যাচ্ছে। আগামীতে চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং বৈদেশিক পুঁজিবিনিযোগ বিপুল মাত্রায় বাড়াবে। আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, আগামী ৫ বছরে চীন ১০ লাখ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করবে, বৈদেশিক বিনিযোগের আকার ৫০ হাজার কোটি ডলার হবে এবং বিদেশে চীনা পর্যটকের সংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। চীনের উন্নয়ন এশিয়া ও বিশ্বের জন্য উন্নয়নের সুযোগ বয়ে আনবে।"

যদি আগামী ৫ বছরে ৪০ কোটি চীনা মানুষ বিদেশ ভ্রমণ করে তাহলে চীন ও বিশ্বের জন্য তার তাত্পর্য কী? চীনের অবসর অর্থনীতি গবেষণালয়ের পরিচালক ওয়েই সিয়াং বলেন:

"চল্লিশ কোটি পর্যটক মানে চীনা পর্যটকরা আগামী ৫ বছরে ১ লাখ কোটি ডলার এ খাতে ব্যয় করবে। এক লাখ কোটি ডলার চীনের এক বছরের জি ডি পির সমান।"

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও পর্যটনমন্ত্রী জন কেই বলেন, নিউজিল্যান্ডে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে চীনা পর্যটকের সংখ্যা দ্বিতীয় এবং চীন সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল একটি বাজার। চীনা পর্যটকরা ১ মে থেকে নিউজিল্যান্ডে দুই বছরের মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারছে। ফ্রান্সের পর্যটনমন্ত্রী সিলভিয়া পিনেল সম্প্রতি বলেন, ফ্রান্স চীনা বাজারের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং চীনের সঙ্গে পর্যটন উন্নয়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির আওতায় চীনা পর্যটকের ভিসা আবেদনের সময় কমানো হবে। ২০১২ সালে ব্রিটেন ৩ লাখ চীনা নাগরিকের ভিসা আবেদন গ্রহণ করে এবং ৯৬ শতাংশকেই ভিসা দেয়। ২০০৯ সালের তুলনায় এ হার ৭৫ শতাংশ বেশি। চীনাদের বিদেশ ভ্রমণ বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০১৩ সালে চীনাদের বিদেশে ভ্রমণ বাজার দ্রুত উন্নয়নের ধারা বজায় রাখবে। আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩ বিদেশে ভ্রমণকারী চীনা মানুষের সংখ্যা ৯ কোটি ৪৩ লাখ হবে এবং বিদেশে তাদের ব্যয়ের পরিমাণ পৌঁছাবে ১১ হাজার ৭শ' ৬০ কোটি ডলারে। এ দু'টি সংখ্যা গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৫ শতাংশ ও ২০ শতাংশ বেশি।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক