Web bengali.cri.cn   
তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক চা অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী
  2013-05-08 13:03:04  cri

প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে চীনে নতুন উত্পাদিত চা বাজারে প্রবেশ করে। এ বিক্রির গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমে চীনা চা উত্পাদকদের জন্য বিক্রির প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার জন্য তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক চা অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। তিন শতাধিক চা উত্পাদক প্রতিষ্ঠান এবারের প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। তারা আশা করে যে, তাদের উদ্ভাবন ফল প্রদর্শন করার মাধ্যমে চায়ের বিক্রি বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাস্তবায়িত হবে। আজকের অনুষ্ঠানে রয়েছে এবারের প্রদর্শনী নিয়ে একটি প্রতিবেদন।

চায়ের জন্মস্থান চীন। চীনের একটি প্রবাদে বলা হয় যে, চীনাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি জিনিস হচ্ছে জ্বালানি কাঠ, চাল,তেল, লবণ, সস্, ভিনেগার ও চা। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি চীনাদের জীবনে চায়ের অবস্থান কত গুরুত্বপূর্ণ। চীনে ছয় ধরনের চায় হয়। এগুলো হলো সবুজ চা, কালো চা, সাদা চা, উলং চা, হলুদ চা ও ডার্ক চা। চীনে ২০টি প্রদেশে চা উত্পাদিত হয় এবং চা চাষীর সংখ্যা ৮ কোটি। বর্তমানে চীন বিশ্বের বৃহত্তম চা উত্পাদনকারী দেশ। চীনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের গ্রামীণ অর্থনীতি নীতি গবেষণা কার্যলয়ের উপপরিচালক সেন কুই ইন বলেন:

 

"চীন চায়ের জন্মস্থান এবং চা সম্পদে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ এবং বৃহত্তম চা উত্পাদন, ভোক্তা ও বাণিজ্যদেশ। চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের সংখ্যা ৮ কোটির বেশি এবং এ শিল্পের নবায়ন আর উদ্ভাবন এবং গুণগত মান বিপুল মাত্রায় উন্নত হয়েছে। চা শিল্প চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ করে কৃষকের আয় ও গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে একটি স্তম্ভশিল্পে পরিণত হয়েছে।"

গত ২০ বছরের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে চীনের চা শিল্প অনেক উন্নত হয়েছে। বর্তমানে চীনের চা শিল্পের উত্পাদন টাকার অঙ্কে ১৪০ বিলিয়ন ইউয়ান। তবে চীনে চা শিল্পে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রবল। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে আরো বেশি উত্পাদককে নবায়ন ও উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা নিতে হয়। ইউয়ুন নান প্রদেশের ফু এর শহরে একটি ফু এর চা উত্পাদক প্রতিষ্ঠান এক বছর আগে Cordyceps ফু এর চা আবিষ্কার করে। এ প্রতিষ্ঠান আধুনিক জৈবপ্রযুক্তির সাহায্যে চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও চায়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটায়। বর্তমানে এ চা ভোক্তাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং এ চা অন্য চায়ের তুলনায় আরও বেশি মুনাফা সৃষ্টি করছে। তাইওয়ানের ডক্টর ছাই ছি ছাং এ চা আবিষ্কার কাজে অংশ নেন। তিনি বলেন:

 

"আমরা অণুজীব দিয়ে চা চাষ করি। আমাদের চা জৈব খাদ্য সনদ অর্জন করেছে। পরে চা পণ্য বিষয়ে আরও কিছু উন্নয়ন করতে চাই। আমরা Cordyceps ও চা সমন্বিত করে একটি নতুন চা সৃষ্ট করি এবং আমাদের ভোক্তা বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ এ চা খুব পছন্দ করে। এখন চা চাষের প্রক্রিয়ায় প্রবৃদ্ধির জন্য আমরা কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করি এবং জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে চা পণ্য উত্পাদন করি। আমরা মনে করি, এটা আমাদের নবায়ন ও উদ্ভাবন।"

অন্যান্য উত্পাদকরাও চা পণ্য উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পেইচিং একটি চা প্রতিষ্ঠান ফু এর চায়ের নির্যাস নিয়ে তাত্ক্ষণিক প্রস্তুতযোগ্য চা-ক্রিম তৈরি করে। চায়ের চেয়ে ক্রিমের বিশুদ্ধতা বেশি। আসলে প্রাচীনকাল থেকে চীনারা চা-ক্রিম তৈরি করে আসছে। চীনারা বিশ্বের প্রথম তাত্ক্ষণিক চা আবিষ্কার করে। তবে চা-ক্রিমের উত্পাদনের পরিমাণ খুবই কম বলে প্রাচীনকালে শুধু রাজপরিবার এ ক্রিম খেতে পারতো। বর্তমানে, চা-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপুল মাত্রায় চা-ক্রিম উত্পাদন করতে পারে এবং এতে শুধু প্রাচীন চা তৈরির উপায় সংরক্ষিত হচ্ছে না; বরং আরও বেশি ভোক্তা ঐতিহ্যবাহী উপায়ে চা খেতে পারছে। চা-ক্রিমের একজন বিক্রেতা বলেন:

"চায়ের স্বাস্থ্যকর উপাদানের নির্যাস থেকে চা-ক্রিম তৈরি করি। প্রাকৃতিক নিদর্শন চা-ক্রিম নিরাপদ এবং শুধু গরম পানি দিয়ে খাওয়া যায়।"

চা ছাড়া, চায়ের মোড়কিকরণের ক্ষেত্রেও দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। এবারের চা প্রদর্শনীতে একটি চন্দ্রমল্লিকা চায়ের প্যাকিং অনেক ভোক্তাকে আকর্ষণ করে। প্রতিটি প্লাস্টিক বাক্সে রাখা হয়েছে শুধু একটি চন্দ্রমল্লিকা। এতে এ চা দীর্ঘ সময় সংরক্ষিত থাকবে এবং বহনে খুব সুবিধা হবে। তা ছাড়া, খাওয়ার সময় চন্দ্রমল্লিকার আকার পরিবর্তন হয় না বলে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। এ চা-সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তি মাডাম লি বলেন:

"চন্দ্রমল্লিকা সংরক্ষণের জন্য আমরা প্যাকিংয়ে Deoxidizer দেই এবং এতে চন্দ্রমল্লিকা এক বছর সংরক্ষণিত থাকে। আমরা প্রথম প্রতিষ্ঠান যারা এ উপায়ে চন্দ্রমল্লিকা প্যাকিং করি।"

চীনের পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয় যে, সেন নং নামে এক ব্যক্তি চা আবিষ্কার করেন। প্রথমে চা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে খাবারের তালিকায় এটা অন্তর্ভূক্ত হয়। বর্তমানে চা একটি পানীয়। চীনারা চা খাওয়া ছাড়াও, চা-সংশ্লিষ্ট পণ্য ভোগ করে। চা দিয়ে তৈরি নানা রকমের খাবার ও স্বাস্থ্যরক্ষাকারী খাদ্য আবিষ্কৃত হয়েছে। চা খাওয়ার অনুষ্ঠানও একটি সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

চা অনুষ্ঠান, চাখানা ও চা-বিষয়ক উন্নত চেম্বার জনপ্রিয় হয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী এ সুযোগে চা অনুষ্ঠানের কাপড় তৈরি করে। চাও সিন ওয়ে পেইচিং একটি চা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি জানান, তার কোম্পানি প্রথমে শুধু চা বিক্রি করতো। তিনি চা অনুষ্ঠানের একজন অনুরাগী এবং এ কারণে দুই বছর আগে তিনি চা অনুষ্ঠান-বিষয়ক কাপড়ের স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কাপড় নকশা করেন এবং সুতিকাপড়, শণের কাপড় ও রেশমসহ প্রাকৃতিক উপকরণ নিয়ে কাপড় তৈরি করেন। তার কাপড় প্রতিটি ১ হাজার ইউয়ান হলেও সমঝদার গ্রাহকদের মধ্যে সেগুলো অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চাও সিন ওয়ে বলেন:

 

"প্রাকৃতিকতা আমার কাপড়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট। কাপড়ের লাইন খুব সরল। আমার মনে হয়, টেটা সরল সুখী জীবনের সূচনা।"

২০১১ সালে থেকে অনুষ্ঠিত চীন আন্তর্জাতিক চা অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর প্রভাব দিন দিন বেড়েছে এবং চীনের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী বসন্ত চা প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিদেশে চীনের চায়ের বাজার উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। ইউয়ুন নান প্রদেশের একটি চা কোম্পানির ব্যবস্থাপক মা কুই ওয়েন বলেন:

 

"চা ও চা-ক্রিম চীনা জাতির সংস্কৃতি। আমরা বিদেশের বন্ধুদের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে চাই। চীনের চা ও চা পণ্য বিদেশের বাজারে প্রবেশ করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আশা করি, এ প্রদর্শনীর উদ্যোক্তারা আমাদের জন্য আরও বড় প্ল্যাটফর্ম যোগাবে।"

দেশবিদেশ বাজারের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলার জন্য চীনা চা প্রতিষ্ঠানগুলো নবায়ন ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেয়। আশা করি, নবায়ন ও উদ্ভাবনের সাহায্যো চীনা চা চীনাদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে ভাল অবস্থান তৈরি করবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক