Web bengali.cri.cn   
বিয়ে অর্থনীতি
  2013-04-24 09:22:18  cri

চীনের জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ কেন্দ্র এবং চীনের বৃহত্তম ভালবাসা ও বিবাহবিষয়ক ওয়েবসাইট সি জি জিয়া ইউয়ান প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ১৮ বছর ও তার অধিক বয়সী অবিবাহিত লোকের সংখ্যা ২৪ কোটি ৯০ লাখ। এর মানে চীনে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ তাদের জীবনসংগী খুঁজছেন। চীনে একটি পেশাদার গ্রুপ ঘটকালির কাজ করছে। ঘটকালি এখন একটি ভাল বাণিজ্যিক সুযোগ। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা 'বিয়ে অর্থনীতি' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন শোনাব।

১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণকারী তেং তা এ ঘটকালি গ্রুপের একজন সদস্য। সাত বছর আগে তিনি বার্ষিক ১ লাখ ইউয়ানের একটি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে একটি ভালবাসা ও বিবাহ ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন:

"আমি চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে পছন্দ করি এবং নিজে ব্যবসা করতে চাই। তাছাড়া, একবার আমি 'ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে বিয়ের জন্য মুখোমুখি সাক্ষাত্ সম্পর্কিত অর্থনীতি' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন পড়ি। সে প্রতিবেদন থেকে আমি বিয়ে সম্পর্কে চীনের পরিস্থিতি জানতে পারি। চীনের জনসংখ্যা বিপুল। তাছাড়া শহরায়ন প্রক্রিয়ায় তরুণ-যুবকরা বিয়ে বিষয়ে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এটা দেখে আমি ভাবি এ বিষয়ে মধ্যস্ততাকারী হলে ভবিষ্যত ভাল হবে।"

তেং তা যখন ব্যবসা শুরু করেন, তখন তার হাতে পুঁজি ছিল মাত্র ৫০ হাজার ইউয়ান। আর ব্যয়ও ছিল বেশি। প্রথমে তেং তা অনেক কষ্ট সম্মুখীন হন। তবে তিনি তার ব্যবসা পরিত্যাগ করেন না। তিনি মনে করেন বিয়ে সম্পর্কিত ব্যবসার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। তেং তা বলেন:

"বিয়ে সম্পর্কিত কাজের পরিধি অনেক বড়। যেমন বিয়ের জন্য প্রশিক্ষণ, বিয়ের অনুষ্ঠান ও বিয়ের ছবিসহ বিভিন্ন শিল্পের সংখ্যা কম নয়। বিয়ে ও ভালবাসা প্রতিষ্ঠান এ শিল্পগুলোর কেন্দ্র। তাছাড়া, বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমাকালে ভ্রমণওতো একটি শিল্প।"

তেং তার প্রচেষ্টায় ২০০৭ সালে তার ভালবাসা ও বিয়েবিষয়ক ওয়েবসাইট ফু চিয়ান প্রদেশে চালু হয়। প্রথমে লোকসান হলেও গত ৫ বছরে ওয়েবসাইটের অবস্থা দিন দিন ভাল হয়েছে এবং বর্তমানে তার মুনাফা ৭০ ও ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। এ শিল্পের উন্নয়ন দেখে তেং আবেগের সঙ্গে বলেন:

"প্রথম দু'-এক বছর আমার ব্যবসায় লোকসান হয়। তারপর আমাদের মুনাফা হয়। ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে আমাদের মুনাফা ছিল ৭০ শতাংশ বেশি। সদস্যদের বার্ষিক ফি আমাদের আয়ের প্রথম উত্স। বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের সদস্য ফি ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত।"

তেং তা মনে করেন, চীনের বিয়েসংশ্লিষ্ট খাত ও মুনাফা সবটার উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের ইলেক্ট্রোনিক বাণিজ্য গবেষণা কেন্দ্রে প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, চীনে ভালবাসা ও বিয়ে বিষয়ক ওয়েবসাইটের সংখ্যা ৫০টি। ২০১২ সালে এ ওয়েবসাইটগুলির আয় ছিল ১২৩০ কোটি ইউয়ান এবং ২০১৪ সালে এ পরিমাণ ২০০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে।

বিয়ে একটি শিল্পে পরিণত হতে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপুল মুনাফা সৃষ্টি করতে পারে। আর্থিক বিশ্লেষক উ ছাও বলেন:

"চীনে সি চি চিয়া ইউয়ান নামক ভালবাসা ও বিয়ে বিষয়ক ওয়েবসাইট একটা ভাল উদাহরণ। বর্তমানে এ ওয়েবসাইট NASDAQ-এ তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং এটা এই প্রত্যায়ন করে যে, চীনে বিয়ে ও বিয়ের জন্য মুখোমুখি সাক্ষাত্সংশ্লিষ্ট খাতে বেশ মুনাফা হয় এখন। চীনা জনসংখ্যার ১০ শতাংশ অর্থাত্ ১০ কোটি মানুষ বিবাহযোগ্য। যদি প্রত্যেকে বিয়ে ও বিয়ের জন্য মুখোমুখি সাক্ষাতে ১০০ ইউয়ান ব্যয় করে তাহলে এ পরিমাণ হবে ১০ বিলিয়ান ইউয়ান।"

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিয়ের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট খাতের সংখ্যা ৩০ এবং পরোক্ষ খাতের সংখ্যা ৭০টিরও বেশি।

ছেন হাও সেন চেন শহরে একজন জেড ব্যবসায়ী। অল্পদিন আগে বন্ধুর প্রস্তাবে তিনি বিয়েসংশ্লিষ্ট শিল্পে যোগ দেন এবং তেং তার ওয়েবসাইটের সঙ্গে সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন:

"বর্তমানে তরুণ-তরুণীরা জেড খুব পছন্দ করে এবং জেড দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে। তরুণ-তরুণীরা বিয়ের পর পরিবারের অর্থ খাটানোর জন্য জেড দ্রব্য কিনতে চায়।"

চীনা মানুষের দৃষ্টিতে বিয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রেমিক-প্রেমিকার সাক্ষাত্, প্রেম করা ও বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনসহ বিভিন্ন বিষয়ে খরচ বেশি। অর্থনীতির উন্নয়নের সাথে সাথে বিয়ের ভোজ, উদযাপনী অনুষ্ঠান, বিয়ের পোশাক এবং ছবি তোলার খরচও বেড়েছে। ছাব্বিশ বছর বয়সী মি. লিউ শাংহাই শহরের একজন সাধারণ অফিসকর্মী। তিনি আগামী সেপ্টেম্বরে তার মেয়ে বন্ধুকে বিয়ে করতে চান। বিয়ের খরচের কথা উল্লেখ করে লিউ বলেন, বিয়ের জন্য প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় তিনি অনেক টাকা ব্যয় করেন।

"বিয়ের ভোজ অনেক টাকা লাগে। প্রতি টেবিলের খাবার ৫ হাজার ইউয়ান এবং ১৫ শতাংশ সেবা চার্জ এবং ৮০০ ইউয়ানের সাইট ফি যোগ দিলে প্রতি টেবিলের খাবারের দাম পড়ে ৬৫০০ ইউয়ান। ভোজে ১৫ টেবিল হলে প্রায় এক লাখ ইউয়ান লাগবে, যা প্রায় আমার এক-দেড় বছরের বেতন।"

চীনের ঐতিহ্যবাহী নীতি অনুযায়ী, নবদম্পতি খাওয়ানো জন্য পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানায়। জানা গেছে, ২০১৩ সালে পেইচিংয়ে নবদম্পতির সংখ্যা ছিল ২ লাখ এবং সারা বছর বিবাহযোগ্য তারিখে হোটেল ও রেঁস্তোরার সব বুক হয়ে গেছে। তা ছাড়া, তরুণ-তরুণীদের বিশেষ চাহিদা পূরণের জন্য অনেক বিয়ের অনুষ্ঠানবিষয়ক হোটেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ রকমের হোটেল বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য কাউকে সেবা দেয় না বলে তার খরচ খুব বেশি। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানবিষয়ক হোটেলের পরিকল্পনা পরিচালক লিউ থিয়ে চু বলেন:

"আমার হোটলে বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ সর্বোচ্চ ৩ লাখ ইউয়ান এবং নিম্ন ১ লাখ ইউয়ান।"

ছেন চিং পেইচিং একটি বিয়ে উদযাপন অনুষ্ঠান পরিকল্পনা কোম্পানিতে কাজ করেন। প্রধান পরিকল্পক হিসেবে তিনি খুব ব্যস্ত। তিনি বলেন:

"কখনো কখনো আমরা এত ব্যস্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়ি যে সর্বোচ্চ ২০০টি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করতে পারি। তবে সমাজের চাহিদার তুলনায় এ পরিমাণ যথেষ্ট নয় এবং এ কারণে কিছু কিছু ছোট কোম্পানি আমাদের অতিথি ভাগাভাগি করে।"

বিয়ের প্রস্তুতের জন্য অনেক সময় ও উদ্যম দরকার। নবদম্পতিদের সুবিধা প্রদানের জন্য চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিয়ে অনুষ্ঠান মেলার উদ্ভব হয়েছে। নবদম্পতিরা বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব দ্রব্য এ মেলা থেকে কিনতে পারে। কিছুদিন আগে শাংহাইয়ে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানবিষয়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনে এ মেলায় বাণিজ্যের পরিমাণ রেকর্ড ১ বিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছায়। মেলার একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিয়ে অনুষ্ঠানমেলা তরুণ-তরুণীর মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মেলার বিষয়বস্তু বৈশিষ্টপূর্ণ ও ব্যাপক। বাসর সাজিয়ে দেওয়া, ঘরোয়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন দ্রব্য পাওয়া যায় এ মেলায়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক