Web bengali.cri.cn   
শুভ নববর্ষ
  2013-04-09 10:04:53  cri

আলিমুল হক

আর কদিন পরই বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা মহাসমারোহে পালন করবে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন 'পহেলা বৈশাখ'। বাংলা সন শুরু হয় পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ থেকে। সে-হিসেবে বৈশাখের প্রথম দিনটি হচ্ছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। এপার বাংলা ও ওপার বাংলা---দুই বাংলায়ই এ-দিনটি নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে বেশ ঘটা করে পালিত হয়। আসলে, পৃথিবীর যে-খানেই বাঙালি আছে, সেখানেই নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর বরণ করে নেয়া হয় পহেলা বৈশাখকে। গ্রেগরিয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে, বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয় প্রতিবছর ১৪ই এপ্রিল।

পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেয়ার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বসে 'বৈশাখী মেলা', 'বউমেলা', 'ঘোড়ামেলা' ইত্যাদি। রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক রমনা বটমূলে ছায়ানট-এর উদ্যোগে প্রতিবছরই আয়োজিত হয় বিশেষ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানট এ-অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। পহেলা বৈশাখে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ছায়ানটের শিল্পীরা 'এসো হে বৈশাখ এসো এসো' রবীন্দ্র সঙ্গীতটির মাধ্যমে বৈশাখকে বরণ করে নেয়। পাশাপাশি চলে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম। চারিদিকে তখন উত্সবের আমেজ। এ ছাড়া, এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় সমাজের নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ রং-বেরঙয়ের মুখোশ ও কাগজের তৈরীর বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে অংশ নেয়। ১৯৮৯ সাল থেকে এটি চালু হয়।

ঢাকার বাইরে সোনারগাঁয়ে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বসে 'বউমেলা'। মেলা চলে পাঁচ দিন ধরে। ধারণা করা হয় যে, এ-মেলা গত প্রায় ১০০ বছর ধরে চলে আসছে। প্রাচীন একটি বটগাছের নিচে এই মেলা বসে। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অবশ্য 'সিদ্ধেশ্বরীদেবী'র পুজো করার জন্য এসময় এখানে সমবেত হয়।

এছাড়া, ঢাকার অদূরে সোনারগাঁ থানার পেরাব গ্রামের পাশে আরেকটি মেলার আয়োজন করা হয়। সে-মেলার নাম 'ঘোড়ামেলা'। কথিত আছে, এক সময় 'জামিনী সাধক' নামক এক লোক ঘোড়ায় চড়ে এসে সবার মাঝে নববর্ষের প্রসাদ বিতরণ করতেন। তার মৃত্যুর পর ওই স্থানে তাঁর স্মরণে তৈরী করা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে ওই স্মৃতিস্তম্ভে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একটি করে মাটির ঘোড়া রাখে। এ-কারণে এই মেলার নাম হয়েছে 'ঘোড়ামেলা'। মেলায় নাগরদোলা, পুতুল নাচ ও সার্কাসের আয়োজনও করা হয়।

এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও প্রতিবছর সাড়ম্বরে পালিত হয় পয়লা বৈশাখ। তবে, সেখানে বাংলাদেশের মতো ১৪ই এপ্রিলই তা পালিত হয় না। সেখানে পহেলা বৈশাখ পালিত হয় পঞ্জিকার হিসেব অনুসারে। সেটা ১৩, ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল হতে পারে। তবে, পশ্চিমবঙ্গে সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাত্ চৈত্রসংক্রান্তির দিন পালিত হয় 'চড়কপূজা'। এদিন বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজন করা হয় চড়ক মেলার। গ্রামাঞ্চলে এবং কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ হয় মাসব্যাপী 'বৈশাখী মেলা'। পয়লা বৈশাখের দিন কলকাতার বিখ্যাত কালীঘাট মন্দিরে প্রচণ্ড ভীর হয়। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ভোর থেকে প্রতীক্ষা করতে থাকেন দেবীর পূজার মাধ্যমে 'হালখাতা' শুরু করার জন্য। অন্যরাও কালীঘাটে যান পুজো দিতে। এইদিন বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী ধুতি-পাঞ্জাবি এবং শাড়ি পরিধানের রেওয়াজ আছে।

1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক