গ্রাহকদের প্রতি অ্যাপল কোম্পানির ত্রুটিপূর্ণ আচরণ চলতি বছরের মার্চ মাসে চীনের প্রায় প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের নজরে আসে। 'অ্যাপল কোম্পানির নজিরবিহীন উদ্ধত বিক্রয়োত্তর পরিসেবা' শিরোনামে পিপল্স ডেইলি সম্প্রতি আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে বলা হয় যে, চীনে অ্যাপল কোম্পানির বিক্রয়োত্তর পরিসেবার মান বিদেশের মানের তুলনায় অনেক নিম্ন। সিসিটিভি'র বার্ষিক '১৫ মার্চ ভেজাল-বিরোধী অভিযান' অনুষ্ঠানেও এ কোম্পানির বিক্রয়োত্তর পরিসেবার পৃথক মানদণ্ড তুলে ধরা হয়।
অ্যাপল মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর পিপল্স ডেইলি পরিচালিত এক জরিপে একজন ভদ্রমহিলা বলেন, "আমি আমার আইফোন নিজের পাজামার পিছনের পকেটে রেখে বসার পর দেখি মোবাই ফোন twisted হয়েছে।" আরেক ভদ্রলোক মন্তব্য করেন যে, যদি অসাবধানতাবশত আইফোন পড়ে যায়, তাহলে তার স্ক্রিন ভেঙে যাবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস গত বছর এপ্রিল মাসে একটি প্রতিবেদনে জানায় যে, অ্যাপল কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কর ফাঁকি দিয়েছে। তারপর নিউ ইয়র্ক টাইমস সিদ্ধান্ত নয় যে, চীনে অ্যাপল কোম্পানির অবস্থা কী – তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রতিবেদনে বলা হয় যে, নিম্ন কর অঞ্চলে শাখা কার্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অ্যাপল কোম্পানি তার প্রায় ৭০ শতাংশ মুনাফা বিদেশে স্থানান্তর করেছে। এই উপায় অবলম্বন করে অ্যাপল কোম্পানি বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর এড়িয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চীনে অ্যাপল কোম্পানির জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি কোনো সরাকরি উত্তর দেননি।
চীনের গ্রাহকদের জন্য নিম্ন পর্যায়ের বিক্রয়োত্তর পরিসেবা প্রদানের তালিকায় শুধু অ্যাপল কোম্পানি নয়, রয়েছে জাপানের তোশিবাও। ল্যাপটপ মেরামত বিষয়ে তোশিবা কোম্পানি ১২ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়, তবে চীনা গ্রাহকদের শুধু 'পরামর্শ' দেয়।
সেজন্য চীনের বাজারে বিক্রিতে টানা চার বছর ধরে শীর্ষে থাকা তোশিবা পরে তার বাজার হারিয়ে শীর্ষ দশ কোম্পানির বাইরে চলে যায়। আরেকটি কোম্পানি হিউলেট প্যাকার্ড বা এইচপির ল্যাপটপের গুণগত মান নিয়ে ৫ বছর আগে সিসিটিভি'র বার্ষিক '১৫ মার্চ ভেজাল-বিরোধী অভিযানে' তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর চীনে ওই কোম্পানির বাজার ১৬.৬ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে আসে।
তোশিবা ও এইচপির অভিজ্ঞতা নিয়ে অ্যাপল কোম্পানির উচিত দ্বৈত মানদণ্ড নীতির অবসান ঘটানো। অ্যাপল পণ্যের প্রতি চীনের গ্রাহকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও বিক্রয়োত্তর সেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমরা আশা করি যে, চীনে তৈরি মোবাইল ফোনের গুণগত মান উন্নত হবে। তাহলে আইফোনের মতো বিদেশি মোবাইল ফোনগুলো চীনে এত জনপ্রিয় হবে না। আমরা নিজেদের আইনানুগ অধিকার রক্ষা করতে পারবো।