Web bengali.cri.cn   
দুই দিনব্যাপী পঞ্চম বিশ্ব 'চীন গবেষণা' ফোরাম
  2013-04-10 15:41:56  cri

দুই দিনব্যাপী পঞ্চম বিশ্ব 'চীন গবেষণা' ফোরাম সম্প্রতি শাংহাইয়ে শেষ হয়েছে। চীনের শান্তি বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর কী কী প্রভাব ফেলে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কীভাবে উপকারিতামূলক সম্প্রদায় গড়ে তোলা যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা ফোরামে আলোচনা করেন। আজকের অনুষ্ঠানে এ ফোরাম সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন শোনাব।

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের সংবাদ কার্যালয় ও শাংহাই সরকার যৌথভাবে এবারের ফোরাম আয়োজন করে। বিশ্ব 'চীন গবেষণা' ফোরাম উচ্চ পর্যায়ের, সার্বিক ও উন্মুক্ত একটি গবেষণা ফোরাম। বিশটিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ২৪০জন বিশেষজ্ঞ 'চীনের আধুনিকীকরণ: উপায় ও ভবিষ্যত' প্রতিপাদ্যের ওপর আলোচনা করেন।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে, বিশেষ করে চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের 'চীন হুমকি তত্ত্ব' পাশ্চাত্য দেশে বেশ প্রচারিত হচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এমন কথা প্রায় শুনতে পাওয়া যায় যে, চীনের উন্নয়ন পাশ্চাত্য দেশের স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ।

এ সম্পর্কে বেলজিয়াম Vrije Universiteit Brussels-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক, ব্রাসেলস আধুনিক চীন গবেষণালয়ের পরিচালক Gustaaf Geeraerts বলেন:

"চীনের উত্থানে কেবল বিশ্ব শক্তির পুনর্বিন্যাস হচ্ছে না, প্রত্যেক দেশের মর্যাদাও পরিবর্তিত হচ্ছে। সংস্কৃতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও উন্নয়নের ধারাসহ বিভিন্ন বিষয়ে চীনের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের চেয়ে আলাদা। এ কারণে পাশ্চাত্য দেশগুলোর মূল্যবোধ ও নীতি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে শিল্পোন্নত দেশগুলো আশা করে, তারা যে বিশ্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেছে, চীন তার উপযোগী হবে এবং এ ব্যবস্থাকে রক্ষা করবে। তারা আরও আশা করে, চীন এ ব্যবস্থার অনুকরণ করবে।"

বিশ্ব বিন্যাসের পরিবর্তন এবং চীনের সম্পর্কে পাশ্চাত্য দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পার্টি স্কুলের সাবেক উপ-প্রধান ছেং পি চিয়ান ২০০৩ সালে 'চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থান' তত্ত্ব তুলে করেন। এবারের ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছেং পি চিয়ান বলেন, শান্তি অর্জনের জন্য চীন ও বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে একসাথে 'স্বার্থ সংগ্রাম' ও 'স্বার্থ গোষ্ঠি' প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ছেং পি চিয়ান বলেন:

"একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে চীন দৃঢ়ভাবে শান্তি উন্নয়নের পথে চলে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হবে এবং বিশ্বের সঙ্গে আরও প্রণালীবদ্ধ, গভীর ও অবিরাম অভীন্ন স্বার্থ গড়ে উঠবে। চীন 'যৌথ স্বার্থ' নীতি অনুযায়ী চীনা জনগণের স্বার্থ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের স্বার্থের সম্মিলনে বিভিন্ন ক্ষেত্র, পর্যায় ও বিষয়ে 'স্বার্থ গোষ্ঠি' গড়ে তুলবে এবং এ গোষ্ঠি চীন ও বিশ্বশান্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।"

ফু তান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয় গবেষণালয়ের উপ-পরিচালক উ সিন পো উত্থাপিত 'যৌথ শক্তি' তত্ত্ব ছেং পি চিয়ানের 'স্বার্থ গোষ্ঠি'র তত্ত্বের অনুরূপ। উ সিন পো বলেন:

"বর্তমানে আমাদের বিশ্ব আন্তঃনির্ভরশীল ও বিশ্বায়ন একটি বিশ্ব। এ পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত্ নতুন ধারণা ও নীতি নিয়ে যৌথ স্বার্থ গোষ্ঠি গড়ে তোলা। উ সিন পোর মতে, প্রথমত, 'যৌথ শক্তি' কোনো একটি দেশের সর্বোচ্চ স্বার্থের নিশ্চয়তা নয়, বরং উভয়ের লাভের ওপর গুরুত্ব দেয়। দ্বিতীয়ত, যৌথ স্বার্থ মানে আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক দেশের স্বার্থ অন্বেষণ করা নয়, বরং যৌথ উন্নয়ন থেকে সবাই উপকৃত হতে পারে। তৃতীয়ত, একটি দেশ বড় বা ছোট যাই হোক না কেন নিজের মূল স্বার্থ থাকে এবং সে স্বার্থের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত্।"

বর্তমানে চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রদায় উন্নয়ন-বৈষম্য দূরীকরণ ও উপকার-কাঠামো পরিবর্তনসহ ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য সমাজীভূত উত্পাদনের উন্নয়ন আগামী দশকে চীনের প্রধান কাজ হবে। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের সংবাদ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ছেন সিও ছিয়ান বলেন, চীনের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্র, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ ও শান্তি উন্নয়নের পথে চীন অটল রয়েছে। তিনি বলেন:

"চীনের উন্নয়ন বিশ্বের উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে এবং শান্তি উন্নয়ন চীনের অবশ্যম্ভাবী দিক। চীনের উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা খুব প্রয়োজন এবং চীনের উন্নয়ন বিশ্বশান্তি রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হবে।"

ফোরাম অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের উন্নয়ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। চার বছর আগে ব্রিটেনের লন্ডন রাজনীতি ও অর্থনীতি একাডেমির ঊর্ধ্বতন গবেষক মার্টিন জ্যাকুইস প্রকাশিত 'When China rules the world' শীর্ষক একটি গ্রন্থ তার জন্য ব্যাপক সুনাম কুড়িয়ে এনেছে। চীন সম্পর্কে তার গবেষণা বিষয়মুখ। তিনি মনে করেন, তার বইয়ের শিরোনামে যে 'rule' শব্দটি আছে, সেটি দ্বৈত অর্থবোধক। একটির অর্থ শাসন এবং আরেকটার মানে রীতি ও নিয়ম। তিনি বলতে চান যে, চীন বিশ্বের অন্য ধরনের রীতি ও নিয়ম গ্রহণ করে এবং কোনো দেশ এ বিশ্ব শাসন করতে পারে না। তিনি বলেন:

"আমি বইতে বলেছি যে চীন অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশে পরিণত হবে। তবে তার জন্য কিছু সময় লাগবে। আগামী ৫-৭ বছরে চীনের অর্থনীতির আকার সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে দারিদ্র্যের বিচারে যুক্তরষ্ট্রের চেয়ে চীন পশ্চাত্পদ। নিশ্চয়ই, বিপুল জনসংখ্যা ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দৌলতে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনে উন্নয়নের গতি বেশি দ্রুত হবে।"

মার্টিন আরও বলেন, বর্তমান সময় থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চীনে আধুনিকীকরণ চলতে থাকবে এবং বিশ্বের আধুনিকীকরণের উপর প্রভাব ফেলবে। চীনে বিপুল লোকসংখ্যা গ্রাম থেকে শহরে আসবে এবং অর্থনীতি উন্নয়নের আদল পোক্ত হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক