Web bengali.cri.cn   
চীনের ঠাং রাজবংশ আমলের বিখ্যাত কবি ডুমো সম্পর্কে।
  2013-04-30 15:19:58  cri
ডুমো ছিলেন চীনের ঠাং রাজবংশের শেষ দিকের বিখ্যাত কবি। সারা জীবন তিনি কর্মকর্তা পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। তার লেখা কবিতাগুলো স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। চীনের সাহিত্য ক্ষেত্রে ডুমোর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ডুমো একটি অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষদের প্রায় সবাই দেশের কর্মকর্তা ছিলেন। তার দাদা ডুযৌ একসময় ঠাং রাজবংশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবাও রাজদরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ছোটবেলা থেকে ডুমো কড়াকড়ি পারিবারিক শিক্ষা প্রহণ করতে শুরু করেন। তিনি মেধাবী ছিলেন। বই পড়ায় তার আগ্রহ ছিল খুব বেশী। তার বয়স যখন দশ থেকে বার বছর, তখনই তিনি প্রাচীনকালের বিভিন্ন কবি ও লেখকের বই পড়েছেন। এর পাশাপাশি তার বাবা সময়সময় ডুমোকে রাজনৈতিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন। তার বাবার আশা ছিল, পূর্বপুরুষেদের মতো ভবিষ্যতে ডুমোও রাজদরবারের কর্মকর্তা হবেন। সুতরাং পরিবারের প্রভাবে ছোটবেলা থেকে ডুমো রাজনীতি, অর্থনীতি, ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তা ছাড়া ইতিহাসের ওপরও তার আগ্রহ ছিল।

তখনকার রাজা ঠাং চিন জন ছিলেন অযোগ্য ও অথর্ব। তিনি সারাদিন সঙ্গীত ও নাচ নিয়ে পড়ে থাকতেন। বিলাসী ভবন নির্মাণের জন্য দেশের সর্বত্রই গাছপালা কাটা হতো তখন। কৃষকরা কৃষি জমিতে কাজ না-করে রাজধানীতে বিলাসী ভবন নির্মাণ করতে আসত। অন্যদিকে, জনসাধারণের জীবন ছিল শোচনীয়। তখন ডুমোর বয়স ২৩ বছর। এ-দৃশ্য দেখে তিনি মনে মনে উদ্বিগ্ন হলেন। তিনি তার কয়েকজন বন্ধুকে বললেন: 'বতর্মান রাজা জনসাধারণের স্বার্থ উপেক্ষা করে নিজের জন্য বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করছেন। তার এই আচরণ একদিন জনসাধারণের মধ্যে বিক্ষোভ সৃষ্টি করবেই। তিনি কেন এর পরিণাম নিয়ে ভাবেন না? আমি দেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।' তার বন্ধুরা বলল: 'তিনি হলেন দেশের রাজা। তার মনে যা আসে, তিনি তা-ই করেন। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই।' ডুমো বললেন: 'ইতিহাস বলে যে, যখনই কোনো রাজা সাধারণ মানুষের জীবিকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি, তখনই তার পতন হয়েছে। ছিন রাজবংশের রাজাও জনগণের জীবিকার কথা না-ভেবে বিলাসী জীবনযাপনে লিপ্ত ছিলেন। পরিণামে তার পতন হয়েছিল। ইতিহাস একটি আয়নার মত।' ঠিক সে-সময় ডুমোর মনে পড়ল ছিন রাজবংশের রাজার কথা। তিনি সে-ঘটনা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার নিবন্ধ প্রাকশিত হওয়ার পর, যারা এই নিবন্ধ পড়েছেন তারা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলেন যে, নিবন্ধটি বতর্মান রাজাকে মাথায় রেখেই লেখা হয়েছে। অনেকেই ডুমোর জন্য উদ্বিগ্ন হলেন। সৌভাগ্যবশত কিছুকালের মধ্যেই রাজা খুন হন। পরে তার লেখা এই নিবন্ধ জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত হল। ডুমো চারপাশের পরিচিত লোককে বলতেন: 'আমার এই নিবন্ধে ছিন রাজবংশের ঘটনা বর্ননা করা হয়েছে। কিন্তু আসলে এটি লেখা হয়েছে বতর্মান রাজংবশকে মাথায় রেখে।'

যখন ডুমোর বয়স ২৬ বছর, তখন তিনি রাজদরবারের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি এই বিশেষ পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হলেন। তখন থেকে শুরু হয় তার রাজনীতির জীবন। প্রথমে তিনি রাজধানী ছানআনে একটি কর্মকর্তার পদ পান। পরে তিনি দক্ষিণ চীনের কয়েকটি জায়গার স্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি সবসময় দেশের কল্যাণ এবং জনগণের সুখ-দু:খের ওপর গুরুত্ব দিতেন। তখন ঠাং রাজবংশের শেষ আমল। দেশের সবর্ত্রই দাঙ্গাহাঙ্গামা দেখা দিল। তা ছাড়া, স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে রাজদরবার পর্যন্ত----সর্বত্রই দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের প্রাধান্য। জনসাধারণও দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ব্যে অস্থির হয়ে উঠল। এরই মাঝে ডুমো হওয়াংযৌর কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে পৌছে তিনি লক্ষ্য করলেন, ওখানে জনসাধারণের জীবনমান অত্যন্ত খারাপ। তিনি জানলেন, স্থানীয় কর্মকর্তারা অত্যন্ত দুর্নীতিপরায়ণ। তারা সবসময় সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাতো। অনেক লোক ডুমোর সামনে অভিযোগ করলেন যে, এ সব স্থানীয় কর্মকর্তা মাঝে মাঝে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাবার বা জিনিজপত্র নেয়। ডুমো জিজ্ঞেস করলেন: 'তারা কি তোমাদেরকে বিনিময়ে টাকা দেন?' 'না, কোন টাকা দেন না। তারা শুধু আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন জিনিজপত্র নিতে থাকে। তা ছাড়া, আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের করও আদায় করা হয়। আমাদের উপার্জিত প্রায় সব অর্থই ওরা নিয়ে যায়।' জনসাধারণের অভিযোগ শুনে ডুমো খুব রেগে গেলেন। তিনি দ্রুত বিভিন্ন মহলের কর্মকর্তাদেরকে একটি নিদের্শ দিলেন। এই নির্দেশে তিনি জনসাধারণের কাছ থেকে কর ও জিনিসপত্র আদায় নিষিদ্ধ করলেন। তিনি বেশ কয়েকজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাকে পদচ্যুতও করে দিলেন। তখন থেকেই ডুমো জনসাধারণের মধ্যে 'সত কর্মকর্তা' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

একবার ডুমো দক্ষিণ চীনের বিখ্যাত শহর ইয়াংযৌতে কর্মকর্তার পদে নিয়োগ পেলেন। শহরের অর্থনীতি ছিল উন্নত, লোকসংখ্যা ছিল বেশি। শহরের রাস্তার দু'পাশে নানা ধরনের দোকানপাট ছিল। তা ছাড়া, এই শহরে অনেক থিয়েটার ও পতিতালয় ছিল। অফিসের কাজ শেষ করে ডুমো এ-সব জায়গায় যেতেন। তিনি এ-সব নায়িকা ও পতিতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এই শ্রেণীর লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। নায়িকা ও পতিতাদের জীবন নিয়ে তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। এদের প্রতি তার সহানুভূতি ছিল। কিন্তু নায়িকা ও পতিতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ থাকার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। যারা ডুমোকে অপছন্দ করতো, তারা তার ওপর মিথ্যা দোষারোপ করতে শুরু করল। এক বছর পর ডুমো ইয়াংযৌ ত্যাগ করলেন।

ডুমো তার জীবনে সবসময় নিম্ন বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু তিনি তার সারা জীবনে কবিতা লেখা কোনদিন বন্ধ করেননি। ঠাং রাজবংশ আমলের অন্যান্য কবির মতো ডুমোর নাম তখন জনসাধারণের মুখে মুখে ছিল। ডুমোর লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ কবিতায় তিনি নিজের দু:খ প্রকাশ করেছেন। তিনি ভ্রমণ করতে পছন্দ করতেন। তিনি দেশের অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। সুতরাং দর্শনীয় জায়গার সুন্দর দৃশ্য নিয়ে তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। তিনি আন্তরিকভাবে ঠাং রাজবংশকে চাঙ্গা করে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন রাজদরবার অত্যন্ত দুর্নীতিপরায়ণ ছিল। এই অবস্থা পরিবর্তন করার ক্ষমতা তার ছিল না। ধীরে ধীরে তিনি হতাশ হয়ে পড়লেন। তখন কেবল সুন্দর প্রকৃতির সামনে গেলেই তিনি ভালো বোধ করতেন। প্রাকৃতিক দৃশ্য নিয়ে তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন।

যখন ডুমোর বয়স ৫০ বছর তখন তিনি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বিছানায় শুয়ে পড়ে তিনি সারা জীবনে লেখা কবিতা নিয়ে চিন্তা করলেন। তিনি সমস্ত কবিতা প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত পড়তে শুরু করলেন। যে কবিতা তার ভালো লাগতো না, তা পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করলেন। ইতিহাস বলে, তার লিখিত কবিতার মাত্র ৩০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত সংরক্ষিত হয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক