তুরস্ক জাতীয় গীতিনাট্য ও ব্যালে নৃত্য একাডেমির শতাধিক শিল্পী ও দশ-বারোজন চীনা শিল্পী একসঙ্গে দর্শকদের জন্য একটি সৃজনী সাংস্কৃতিক ভোজ উপহার দেন। আজকের অনুষ্ঠানে শুনবেন 'তুরস্ক সাংস্কৃতিক বর্ষ-২০১৩' সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন।
তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং চীনে তুরস্কের দূতাবাস যৌথভাবে এবারের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। তুরস্কের বিখ্যাত নৃত্য পরিচালক বেইহান মার্ফি এ অনুষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে ৭০ মিনিটে ২৫টি নৃত্যে তুরস্কের বাজার, হস্তনির্মিত ট্যাপেষ্ট্রি, আনাতোলিয়ার সৃন্দর দৃশ্য ও অটোমান সাম্রাজ্যের হারেমসহ তুরস্কের বৈশিষ্টপূর্ণ উপাদান প্রদর্শন করেন।
তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী ওমার সেলিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বক্তৃতাকালে 'তুরস্ক সাংস্কৃতিক বর্ষের' সাফল্য প্রত্যাশা করেন। তিনি সি আর আইয়ের সাংবাদদাতাকে জানান, চীন ও তুরস্কের সম্পর্ক অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চেয়ে ভিন্ন। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর রাজনীতি, অর্থ ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশ অগ্রগতি অর্জন করলেও তাদের দীর্ঘ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তুলনায় বিনিময় ও সহযোগিতা তেমন নয়। এ কারণে দু'দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়াও যথেষ্ট নয়। এ বিষয়টি অতিক্রম করা এবং দু'দেশের সাংস্কৃতি বিনিময় বাড়ানো সাংস্কৃতিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন:
"গত বছরে তুরস্কে অনুষ্ঠিত 'চীনা সাংস্কৃতিক বর্ষ' তুরস্কের জন্য অর্থবহ। এখন 'তুরস্ক সাংস্কৃতিক বর্ষের' সুচনা গত কয়েক বছরে দ্রুত উন্নত দু'দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য একটি সংযোগস্থল। আমরা আশা করি, এবারের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আরও বেশি চীনা তুরস্ককে জানতে পারবেন এবং তুরস্ক তাদের মনে গভীর ছাপ ফেলবে। "
সাংস্কৃতিক বর্ষ ছাড়া ওমার সেলিক চীন ও তুরস্কের সাংস্কৃতিক সহযোগিতার টেকসই উন্নয়নের উপর গুরুতর দেন। তিনি বলেন, পর্যটন ও ক্রীড়া বিষয়ে দু'দেশের সহযোগিতা জোরদারকরণ দু'দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন:
"আমরা চীনে এবারের সাংস্কৃতিক বর্ষের অনুষ্ঠানগুলোর উপর গুরুতর দিচ্ছি। তবে সেটা যথেষ্ট নয়। এ বছরের অনুষ্ঠানমালা শেষ হওয়ার পর আমাদের সাংস্কৃতিক বিনিময় কীভাবে অব্যাহ্ত রাখা যায় – সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি? দু'দেশে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করতে একমত হয়েছি আমরা।"
চীনে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুরাত সালিম ইসেনলি বলেন, চীন ও তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরে, বিশেষ করে গত ৪ বছরে, তাদের সম্পর্কে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি আশা করেন, এবারের অনুষ্ঠান দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় সাধন করবে এবং দু'দেশের জনগণের মৈত্রী নিবিড়তর করবে। তিনি বলেন:
"সাংস্কৃতিক বর্ষ-২০১৩ হচ্ছে দু'দেশের সংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি সূচনাস্থল এবং এ ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৪ সালে আমরাও চীনা জনগণের বৈশিষ্টপূর্ণ ও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দেবে। আমি বিশ্বাস করি, এবারের অনুষ্ঠান উপভোগ করার পর চীনা জনগণ এ রকমের অনুষ্ঠান পছন্দ করবে। দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় এগিয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালাব আমরা।"
চীনে তুরস্ক দূতাবাসের সাংস্কৃতিক ও তথ্য কাউন্সিলার ইল্কনুর ইজিত বলেন, চীন ও তুরস্কের সাংস্কৃতিক বর্ষ অনুষ্ঠান ভবিষ্যতে দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এ বছর তুরস্কের শিল্পীরা চীনা জনগণের জন্য উত্কৃষ্ট সাংস্কৃতিক পরিবেশনার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি বলেন:
"এবারের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা তুরস্কের শিল্পীদের চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাবো। চীনা দর্শকরা তুরস্কের জনপ্রিয় শিল্পকর্ম এবং ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক চিত্রশিল্পীদের শিল্পকর্ম উপভোগ করতে পারবেন। আমরা তুরস্কের অতীত ও বর্তমান চীনের দর্শকদের সামনে তুলে ধরবো।"
চীন ও তুরস্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবারের অনুষ্ঠান আয়োজনে অনেক সহযোগিতা দিয়েছে। অনেক বার 'ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিমান-পরিবহন কোম্পানি' হিসেবে নির্বাচিত তুর্কি এয়ারলাইনস এবারের অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ইস্তাম্বুল থেকে পেইচিং, শাংহাই, কুয়াং চৌ ও হংকং – এ চারটি রুটে এয়ারলাইনসের বিমান চলাচল করছে এবং তুরস্ক থেকে চীন অভিমুখী যাত্রীরা এ থেকে উপকৃত হচ্ছেন। তুর্কি এয়ারলাইনসের একজন কর্মকর্তা বলেন:
"এবারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য তুরস্ক থেকে চীনে আগত দু'থেকে আড়াই হাজার যাত্রীকে আমরা কম দামে টিকিট দিচ্ছি। গত বছরে তুরস্কে চীনা পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ লাখ। আমি বিশ্বাস করি, এবারের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চীনারা তুরস্কের ইতিহাস, পুরাকীর্তি ও প্রাকৃতিক দৃশ্যকে আরো বেশি জানতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে তুরস্কে চীনা পর্যটকের সংখ্যাও দুই-তিন গুণ হবে।"
জানা গেছে, 'তুরস্ক সাংস্কৃতিক বর্ষ' চলাকালে এ বছরজুড়ে চীনের ১২টি শহরে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেমন প্রদর্শনী, সংগীত, নৃত্য, অপেরা ও সাহ্যিত, চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। তা ছাড়া, চীন ও তুরস্কের শিল্পীরা নতুন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিনিময় করবেন এবং যৌথভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন।
দুই দেশে পরস্পরের সাংস্কৃতিক বর্ষ আয়োজন হচ্ছে তাদের নেতাদের মতৈক্যের অন্যতম। গত বছর তুরস্কে অনুষ্ঠিত 'চীনা সাংস্কৃতিক বর্ষ' সাফল্য অর্জন করে। ও সময় তুরস্কে অনুষ্ঠিত ৭০টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুরস্কের জনগণ চীনকে অনেক ভালভাবে জানতে পারেন।