Web bengali.cri.cn   
চীনের হ্যান রাজবংশ আমলের বিখ্যাত নারী কবি ছাই ওয়েন চিন সম্পর্কে।
  2013-03-19 20:12:46  cri
ছাই ওয়েন চিন জন্মগ্রহণ করেন চীনের হ্যান রাজবংশ আমলে। তার বাবা পূর্ব হ্যান রাজবংশের শেষ দিকের একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সংগীতবিদ ছিলেন। গোটা জীবনে ছাই ওয়েন চিন অনেক কবিতা লিখেছেন। চীনের সাহিত্যে ছাই ওয়েন চিনের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ছাই ওয়েন চিনের বাবা ছিলেন পন্ডিত মানুষ। কিন্তু তার রাজনৈতিক পথ সুগম ছিল না। কোনো এক কারণে তিনি তত্কালীন রাজার কাছ থেকে নির্বাসনের দণ্ড পেয়েছিলেন। ছাই ওয়েন চিনও তার বাবার সঙ্গে দক্ষিণ চীনে নির্বাসিত জীবন কাটাতে গিয়েছিলেন। বাবা তাকে খুব আদর করতেন। মাঝে মাঝে বাবা তাকে সাহিত্য ও সঙ্গীতের জ্ঞান শিক্ষা দিতেন। ছাই ওয়েন চিন অবশ্য মেধাবী মেয়ে ছিলেন। তিনি নতুন কিছু শিখতে সবসময় আগ্রহী ছিলেন। তার বাবার প্রভাবে ছোটবেলা থেকে ছাই ওয়েন চিন সঙ্গীতের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তখন থেকে তিনি গানও লিখতে শুরু করেন। তিনি কয়েক ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। পাশেপাশি তিনি কবিতাও লিখতেন। তার প্রতিভার কথা তখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। স্থানীয় লোকজন তার খুব প্রশংসা করতেন।

ছাই ওয়েন চিনের বয়স যখন ১৬ বছর, তখন দেশের সর্বত্র বিশৃংখলা দেখা দিল। ঠিক সে-সময় তার বাবা-মা পর পর মারা যান। তার স্বামীও তাদের বিয়ের দু'বছর পর মারা যান। ছাই ওয়েন চিন অত্যন্ত অসহায় বোধ করলেন। নিরুপায় হয়ে তিনি জন্মস্থানে ফিরে গেলেন; আশ্রয় নিলেন চাচার বাড়িতে। কিন্তু তার জন্মস্থানের পরিস্থিতিও তখন ভাল ছিল না। বিভিন্ন দলের মধ্যে লড়াই তীব্রতর হয়ে উঠেছিল। তিনি তার চাচার পরিবারের সঙ্গে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে গেলেন। একদিন ছাই ওয়েন চিন ও বেশ কয়েকজন শরর্ণাথী একদল সৈন্যের হাতে ধরা পড়লেন। চাচার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিছিন্ন হল। তারা সৈন্যদের সঙ্গে অনেক দূরত্ব অতিক্রম করে চীনের উত্তরাঞ্চলে এসে পড়লেন। একদিন তারা একটি বড় তৃণভূমিতে এসে পৌছালেন। পরে জানা গেল, ওটি উত্তর শংনো জাতির এলাকা। তখন ছাই ওয়েন চিন ও অন্যান্য লোকেরা স্থানীয় জাতির লোকদের দাসে পরিণত হলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় লোকদের গরু ও ঘোড়া দেখাশুনা করতে লাগলো এবং কেউ কেউ স্থানীয় লোকদের সেবক হয়ে গেল। ছাই ওয়েন চিন দেখতে সুন্দর ছিলেন বলে তাকে সেই জাতির প্রধান কর্তার কাছে নিয়ে যাওয়া হল। কর্তা ছাই ওয়েন চিনকে দেখে খুশী হলেন। তিনি ছাই ওয়েন চিনকে ব্যক্তিগত সেবক হিসেবে রেখে দিলেন। কিছুদিন পর কর্তা ছাই ওয়েন চিনকে স্ত্রীর মর্যাদা দিলেন।

শংনো জাতির বাস ছিল বতর্মান ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে। এ-জাতির লোকদের জীবনযাপন প্রণালী হান জাতির লোকদের তুলনায় ভিন্ন ছিল। তারা তাবুতে বাস করত এবং যাযাবর জীবন কাটাতো। তা ছাড়া, এ-জাতির নিজস্ব ভাষাও ছিল। সুতরাং প্রথম প্রথম ছাই ওয়েন চিন অসহায় বোধ করলেন। যদিও তার স্বামী তাকে খুব ভালবাসতেন, তবুও সবসময় নিজের জন্মস্থানের কথা তার মনে পড়ত। তিনি মনে মনে জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করলেন। একদিন যখন ছাই ওয়েন চিন বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছিলেন, তখন তার স্বামী তাবুতে ঢুকলেন। তিনি ছাই ওয়েন চিনকে বললেন: 'তুমি বাজনা বন্ধ কর। একজন গুরুত্বপূর্ণ অতিথি আসবেন এখন; তাকে স্বাগত জানাতে হবে।' ঠিক তখন এক সৈন্য একজন অতিথিকে নিয়ে তাবুর ভিতরে ঢুকলেন। অতিথির শরীরে ছিল হ্যান জাতির পোষাক। তিনি হান ভাষায় ছাই ওয়েন চিনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করলেন। ছাই ওয়েন চিন অত্যন্ত খুশী হলেন। তিনি আবেগের সঙ্গে এই লোককে রাজদরবার এবং নিজের জন্মস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এই লোক ছাই ওয়েন চিনকে বললেন, তিনি জন্মস্থান সম্পর্কে বেশি জানেন না। কারণ, তিনিও অনেক বছর ধরে জন্মস্থানে ছিলেন না। তিনি এখানে ব্যবসা করতে এসেছেন এবং এই সুযোগে ছাই ওয়েন চিনকে দেখতে এলেন। অতিথির বিদায়ের পর ছাই ওয়েন চিন হতাশ হয়ে পড়লেন। জন্মস্থানের চিন্তা তাকে পেয়ে বসলো। আবেগের বহি:প্রকাশ হিসেবে তিনি লিখে ফেললেন একটি বিখ্যাত কবিতা।

২০৮ খৃষ্টাব্দে অর্থাত শংনোতে ছাই ওয়েন চিনের যাওয়ার ১২ বছর পর, চাও ছাও উত্তর চীনকে একীকরণ করলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাই বাওয়ের মেয়ে ছাই ওয়েন চিনের কথা মনে পড়ল। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানলেন যে ছাই ওয়েন ছিন শংনো জাতির কর্তার স্ত্রী হিসেবে আছেন। তিনি একজন বিশেষ দূতকে মূল্যবান উপহারসহ শংনো জাতির কাছে পাঠালেন। তিনি এ-সব মূল্যবান জিনিসের পরিবর্তে ছাই ওয়েন চিকে ফেরত চাইলেন।

হ্যান রাজবংশের বিশেষ দূতকে দেখে ছাই ওয়েন চিন মহা খুশী হলেন। ততদিনে তিনি দু'সন্তানের মা হয়েছেন। তিনি সন্তানদের নিয়ে জন্মস্থানে ফিরে যেতে চাইলেন। কিন্তু যখন তিনি তার এ-সিদ্ধান্তের কথা স্বামীকে জানালেন, তখন তার স্বামী অনেকক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেন এবং পড়ে বললেন, "তুমি যদি জন্মস্থানে ফিরে যেতে চাও, তবে যেতে পার। তবে, সন্তানরা আমার কাছে থাকবে। কারণ, ওরা এ-জাতির সন্তান।" ছাই ওয়েন চিন এ-কথা শুনে মর্মাহত হলেন। একদিকে তিনি সন্তানদের ছেড়ে যেতে চান না, অন্যদিকে জন্মস্থানে মায়াও ছাড়তে পারেন না। দোটানায় পড়ে তার নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত তিনি জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিলেন। তার জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার দু'ই ছেলেও এ-খবর শুনল। বড় ছেলে ছাই ওয়েন চিনকে আঁকড়ে ধরে বলল: 'মা, শুনেছি, তুমি তোমার জন্মস্থানে ফিরে যাবে, আমাদের ফেলে। এ-কথা কি সত্যি?" ছোট ছেলে তার হাত ধরে বলল: 'মা, তুমি সবসময় আমাদের ভালবেসেছ। কেন তুমি এখন আমাদেরকে চাও না?' দু'ছেলের কথা শুনে ছাই ওয়েন চিন কাঁদতে লাগলেন। কিন্তু অবশেষে তিনি ব্যক্তিগত আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে নিজের জন্মস্থানের দিকে যাত্রা করলেন। এটাই ছিল চীনের ইতিহাসের বিখ্যাত গল্প: 'ছাই ওয়েন চিনের জন্মস্থানে ফিরে আসা'।

ছাই ওয়েন চিন ফিরে আসায়, চাও ছাও খুব খুশী হলেন। কিছুদিনের মধ্যে ছাই ওয়েন চিন একটি জেলার গর্ভনরকে বিয়ে করলেন; শুরু করলেন নতুন জীবন।

একদিন চাও ছাও ছাই ওয়েন চিনকে রাজদরবারে ডেকে পাঠালেন। ছাই ওয়েন চিনকে দেখে চাও ছাও বললেন: 'তোমার বাবা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। শুনেছি তিনি জীবিত অবস্থায় অনেক বই সংগ্রহ করেছেন। নিজেও অনেক নিবন্ধ লিখেছেন। এখন কি এসব লেখা সংরক্ষিত রয়েছে?'

'বাবা মারা যাওয়ার আগে আমাকে প্রায় চার হাজার নিবন্ধ আমাকে দিয়েছিলেন। দু:খের ব্যাপার হল, যুদ্ধের সময় অধিকাংশই ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু আমি প্রায় চার শোটি নিবন্ধ মুখস্ত বলতে পারে।' ছাই ওয়েন চিন বললেন।

'চমত্কার! যদি তুমি এ চার শোটি নিবন্ধ লিখে ফেল, তবে ভালো হয়। তোমার কথা লিখে দেয়ার জন্য আমি একজন লোক পাঠাবো।'

'আমি নিজেই এ-সব নিবন্ধ লিখে দেবো। আপনি কেবল আমাকে কলম ও কাগজ দিন।' বললেন ছাই ওয়েন চিন।

পরে ছাই ওয়েন চিন তার মুখস্ত সব নিবন্ধ লিখে দিলেন। তার আচরণ চাও ছাওয়ের ভূয়সী প্রশংসা পেল। ছাই ওয়েন চিনের বাকী জীবন কিভাবে কেটেছে তা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ নেই।

সুপ্রিয় শ্রোতা, এখন আপনাদের জন্য থাকছে একটি ক্যুইজ। প্রশ্নটি হচ্ছে: ছাই ওয়েন চিন চীনের কোন রাজবংশ আমলের বিখ্যাত মহিলা কবি ছিলেন? দয়া করে, আপনাদের উত্তর বাংলা বিভাগের ইমেলে পাঠাবেন। (চিয়াং/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক