Web bengali.cri.cn   
ভুটানকে বাণিজ্য-সুবিধা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
  2013-03-19 15:49:47  cri
দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে ভুটানকে ট্রানজিটসহ একগুচ্ছ বাণিজ্য-সুবিধা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে ভুটানের চাহিদা অনুযায়ী ১৮ ধরনের পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধার পণ্যতালিকা পুনর্বিন্যাস করেছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে মাশুল নিয়ে ভুটানকে ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেজন্য হালুয়াঘাট ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্রানজিট প্রদান-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়াও ভুটানের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।

আগামী ২০ ও ২১ মার্চ ঢাকায় দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ভুটানকে দেয় বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের শুরুতে ভুটানের পক্ষ থেকে ট্রানজিট-সুবিধার প্রস্তাব-সম্বলিত একটি প্রটোকলের খসড়া পাঠানো হয় বাংলাদেশের কাছে। খসড়া পর্যালোচনা করে এ সংক্রান্ত পাঁচ সদস্যের কমিটি গত ডিসেম্বর মাসে ট্রানজিট দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়ে চুক্তির একটি খসড়া তৈরি করে। বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি ট্রানজিট দেওয়ার জন্য মাশুল আরোপের সুপারিশ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সে খসড়া আমলে নিয়ে ভুটান কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০ মার্চ থেকে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে খসড়া চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হতে পারে। এরপর চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রটোকলের মাধ্যমে মাশুল আরোপ, শুল্কায়ন-প্রক্রিয়া, পরিবহন, বন্দর ব্যবহারসহ আনুষঙ্গিক বিষয় নির্ধারণ করা হবে।

ভুটানকে ট্রানজিট-সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ প্রথম আলো সংবাদপত্রকে বলেন, দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি তাঁরা টেস্ট কেস হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, মাশুলসহ সব ধরনের আনুষঙ্গিক বিষয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে করতে হবে, যাতে নেপাল, ভারতসহ অন্য দেশকে ট্রানজিট দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় হয়।

তিনি বলেন, কোনো একটি দেশকে ট্রানজিট দেওয়ার পদ্ধতি নির্ধারণ করে ট্রানজিট প্রদানকারী দেশ। সুবিধা ভোগকারী দেশ রাজি থাকলে সেটা গ্রহণ করে, রাজি না হলে গ্রহণ করে না।

ভূবেষ্টিত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদশের সঙ্গে ট্রানজিট-সংক্রান্ত বাণিজ্য চুক্তি করে ভুটান। কিন্তু ভারত তার ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়ায় এই চুক্তি কার্যকর করা যায়নি। অকার্যকর অবস্থাতেই ২০০০ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে এখন ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারে ভুটানি পণ্যবাহী ট্রাক। তাই ভুটানের ট্রানজিট-সুবিধা পাওয়ায় আর কোনো বাধা নেই।

বিগত ২০১০ সালের ২৮ মার্চ থেকে ভুটান বাংলাদেশ থেকে ১৮ ধরনের পণ্যে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি ভুটান আরও ছয়টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা চেয়েছে। ছয়টি পণ্যের মধ্যে আলুবীজ ও প্লাস্টার অব প্যারিসকে কাঙ্খিত সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করা হয়।

ভুটান অন্য যে পণ্যগুলোতে শতভাগ শুল্কমুক্ত পাচ্ছে সেগুলো হলো ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শিম জাতীয় সবজি, সব ধরনের সবজি, কমলা, আপেল, নাশপাতি, আচার ও জেলি তৈরির নাশপাতি, শুকনা মরিচ, এলাচ, আদা, বোতলজাত ফলের রস, নুড়ি, কাঁকর, ডোলামাইট, জিপসাম, চুনাপাথর, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, কাঠ ও লৌহজাতীয় পণ্য।

এসব পণ্য ভুটানে উত্পাদিত হলে এবং রুলস অব অরিজিন-সংক্রান্ত শর্তাদি পূরণ হলে আমদানিকারককে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিতে হয় না।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভুটানকে ট্রানজিট-সুবিধা দিতে হালুয়াঘাট ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে এই দুটি শুল্ক স্টেশনকে ইতিমধ্যে স্থলবন্দর ঘোষণা দিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বুড়িমারী ও তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়।

এ ছাড়া ট্রানজিট-সুবিধার আওতায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে চায় ভুটান। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি করার সুযোগ চায় দেশটি। বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভুটান ট্রানজিটের আওতায় এই দুটি বন্দরও ব্যবহার করতে পারবে।

তবে দুই দেশের বাণিজ্য পরিস্থিতি এখনো ভুটানের অনুকূলে। সর্বশেষ হিসাবমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভুটান থেকে দুই কোটি সাত লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল শাকসবজি, ফল, পাথর, কাঠ ও লৌহজাতীয় পদার্থ। অন্যদিকে একই সময়ে ভুটানে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৯৯ লাখ ডলারের পণ্য। মূলত ওভেন ও নিট পোশাক, রসায়ন পণ্য, ফলের রস, শুকনো খাবার, মেলামাইন পণ্য, ওষুধ ইত্যাদি ভুটানে রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে।(এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক