Web bengali.cri.cn   
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান শক্তি উন্নয়নশীল দেশগুলো: জাতিসংঘ
  2013-03-18 15:40:30  cri
বিগত ২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে মানবউন্নয়ন সূচক (এইচ ডি আই)-এ দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ওই সময়ে এ অঞ্চলের এইচ ডি আই-এ প্রবৃদ্ধি হয় ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। চলতি বছরের জাতিসংঘ মানবউন্নয়ন প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উচ্চহারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে হয়েছে আফগানিস্তানে। দেশটির প্রবৃদ্ধি হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। পাকিস্তানে এ হার ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ভারতে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ঐতিহাসিকভাবে উচ্চ মানবউন্নয়ন সূচকের দেশ শ্রীলঙ্কায় হয়েছে অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি।

'দক্ষিণ এশিয়ার উত্থান: বৈচিত্রের বিশ্বে মানবউন্নয়ন' শীর্ষক এ প্রতিবেদনে ৪০টি উন্নয়নশীল দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবউন্নয়ন খাতে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতিবেদনে ভারত, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশের মানবউন্নয়নকে বৈশ্বিক কর্মশক্তি প্রবাহের চালিকাশক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, যারা কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার বাইরে নিয়ে এসেছে এবং মধ্যবিত্তের সংখ্যা বিপুল হারে বাড়িয়েছে।

সার্বিকভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে – একথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট মধ্যবিত্ত মানুষের ৮০ শতাংশই হবে পৃথিবীর দক্ষিণের দেশগুলোতে। এছাড়া বিশ্বের মোট ভোগব্যয়ের ৭০ শতাংশ হবে এখানে।

প্রতিবেদনে এ সাফল্যের জন্য দেশগুলোর শক্তিশালী জাতীয় অঙ্গীকার, উন্নত জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা, অভিনব দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে কৌশলগত সংশ্লিষ্টতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক প্রতিবেদনের মুখবন্ধে বলেন, "কয়েক শতকের মধ্যে এই প্রথম দক্ষিণের দেশগুলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক পরিবর্তনের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।"

প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০২০ সাল নাগাদ ব্রাজিল, চীন ও ভারত – এই তিনটি প্রধান উন্নয়নশীল দেশের সম্মিলিত অর্থনৈতিক উত্পাদন কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মোট উত্পাদনকে ছাড়িয়ে যাবে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের সুযোগ গ্রহণ এবং চৌকস সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশগুলো সাফল্য অর্জন করে চলেছে – একথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়: "একদিকে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনার ধারণা পরিহার করছে, অন্যদিকে ওয়াশিংটন ঐকমত্য-সমর্থনপুষ্ট শৃঙ্খলামুক্ত উদারনীতি থেকে সরে যাচ্ছে।

ভারতের নীতি এ সব বিকল্পের জটিল সমন্বয়ে তৈরি। বিশ্বমানের তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষায় বিনিয়োগ, মানবদক্ষতা সৃষ্টি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্মুক্তকরণ ভারতকে তার প্রযুক্তি খাতের দক্ষ কর্মীদের উপযুক্ত উপায়ে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ খাত থেকে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। ভারতের ওষুধ, গাড়ি, কেমিক্যাল ও সেবা খাতেও রয়েছে একই রকম সাফল্যগাথা, যারা আন্তর্জাতিক বাজারে জোরালোভাবে প্রতিযোগিতা করে চলেছে।

২০১০ সালে ভারতের বাণিজ্যে উত্পাদনের অনুপাত পৌঁছায় ৪৬.৩ শতাংশে। অথচ ১৯৯০ সালে এ অনুপাত ছিল মাত্র ১৫.৭ শতাংশ। ২০০৮ সালে সরাসরি বৈদেশিক বাণিজ্যও পৌঁছায় মোট দেশজ উত্পাদনের ৩.৬ শতাংশ, যেখানে ১৯৯০ সালে এ হার ছিল মাত্র ০.১ শতাংশ।

২০১১ সালে বিশ্বের ৫০০ বৃহত্তম কর্পোরেশন নিয়ে যে ফরচুন তালিকা তৈরি হয়, তাতে ৮টিই ছিল ভারতীয় কোম্পানি। এ তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত যদিও অগ্রগতির সর্বোত্তম উদাহরণ, তবে অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশও ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে।

এতে বলা হয়, ভারতের চেয়ে ধীর গতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রায় অর্ধেক মাথাপিছু আয় নিয়েও বাংলাদেশ কেবল ভারতের মতো অগ্রগতি অর্জন করেনি; কোনো কোনো সূচকে তার চেয়ে বরং ভালো করেছে। ২০১০ সালে বিশ্ব পোশাক বাজারের প্রায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশই সরবরাহ করে বাংলাদেশ, যেখানে ১৯৯০ সালে এ হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। (এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক