Web bengali.cri.cn   
চীনের পূর্ব হ্যান রাজবংশ আমালের প্রথম নাম-করা মহিলা ঐতিহাসিক ব্যানচাও সম্পর্কে
  2013-03-12 16:52:27  cri
ব্যানচাও ৪৮ খৃষ্টাব্দে পূর্ব হ্যান রাজবংশের ফুফেনআনলিনে বতর্মান সেনসি প্রদেশের ইয়েনইয়াংয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা ব্যানবিও ও বড় ভাই ব্যানগু তত্কালীণ বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন। তার মেজ বড় ভাই সেনাবাহিনীর একজন বিখ্যাত জেনারেল। ব্যানচাও জীবনে অনেক বই লিখেছেন। কিন্তু তার সবচেয়ে অবদান হল: চীনের বিখ্যাত ইতিহাস বই---হ্যানসু সম্পন্ন করেন। চীনের ইতিহাসে ব্যানচাওয়ের অবদান উল্লেখযোগ্য।

যথন ব্যানচাওয়ের বয়স ছ'বছর তখন তার বাবা ব্যানবিও মারা যান। তখন তার বড় ভাই তত্কালীণ রাজধানী লোইয়াংয়ে পড়াশুনা করছিলেন। বারা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি তাড়াহুড়া রাজধানী থেকে জন্মস্থানে ফিরে আসলেন। বাবাকে কবর দেয়ার পর তার বড় ভাই রাজধানীতে ফিরে যাননি। কারণ তখনকার প্র্রথা অনুযায়ী, পরিবারের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা তিন বছরের জন্য বাসা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে না শোক প্রকাশ করার জন্য। সুতরাং ব্যানচাওয়ের বড় ভাই রাজধানীতে ফিরে যাননি। ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। ব্যানচাওয়ের চেয়ে তার বড় ভাইয়ের বয়স দশ বছর বেশী। বড় ভাই ব্যানচাওকে খুব আদর করতেন। ব্যানচাও বড় ভাইকে শ্রদ্ধ করতেন।

কিছু দিন পর ব্যানচাও লক্ষ্য করলেন , বড় ভাই জন্মস্থানে ফিরে আসার পর প্রায় সব সময় ঘরে বসে বই পড়েন। এক দিন ব্যানচাও কৌতুহলভাবে তার বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন: ' বড় ভাই , তুমি সারা দিন বসে বসে কি পড়ছ ? কেন এত কিছু লিখছ? '

' তুমি এখন ছোট। বললেও তুমি বুঝ না' । বড় ভাই উত্তর দিলেন।

' না না, তুমি তো আর ছোট নই। তুমি কেন আমার ওরর অবজ্ঞানের চোখে দেখ ? আমি জানি তুমি বাবার লেখা বইগুলো পড়ছ' ব্যানচাও মিনমিনে বললেন। ব্যানচাওয়ের কথা শুনে বড় ভাই অবাক হয়ে গেলেন। তখন পযর্ন্ত তিনি বুঝতে পেলেন যে , তার ছোট বোন একজন মেধাবী মেয়ে । যখন বাবা জিবিত থাকেন তখন তিনি ছোট বোনকে অনেক জ্ঞান শিখে দিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেলেন, একটু আগে তাকে যে কথা বলা হয়েছে তা ছোট বোনকে আঘাত দিল।

' ছোট বোন, আমি সত্যিই বাবার লেখা বই পড়ছি। আমি ভাবছি যে, আমি বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চাই। আজ রাতে আমি পরিবারের সবাইয়ের সঙ্গে এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবো।' বলছেন ব্যানচাওয়ের বড় ভাই।

ঠিক সে দিনের রাতে ব্যানচাওয়ের বড় ভাই পরিবারের সবাইয়ের সামনে তার আশা-আকাংক্ষা বলে দিলেন। তিনি বললেন: ' বাবা যখন জীবিত ছিলেন তখন তিনি মনে করেছিলেন যে, সি মা ছিয়নের লেখা ' ইতিহাস' বই সমৃদ্ধ হলেও হ্যান রাজবংশ আমলের ইতিহাস সর্ম্পূণ ছিল না। হ্যান রাজবংশ আমলের অনেক কিছু বইতে লিপিব্ধ করা হয়নি। বাবা এ জন্য ৬৫টি অধ্যায় লিখেছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে বাবার লেখা পড়েছি। পড়ে বুঝতে পেয়েছি যে, বাবার লেখাগুলো একটি সংক্ষিপ্ত হয়েছে। সুতরাং বাবার লেখার ভিত্তিতে আমি আরেকটি ইতিহাস বই লিখবো। আমি বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চাই'। মা তো তাতে অবশ্যই সম্মতি প্রকাশ করলেন। পরিবারের অন্যরা মতামত প্রকাশ করার আগে ব্যানচাও চিত্কার করে বললেন: " চমত্কার , বড় বাইয়ের আকাংক্ষা প্রশংসনীয়। এই বই অবশ্যই সম্পাদিত হবে।'

বড় ভাইয়ের আচরণ ব্যানচাওয়ের ওপর বড় প্রভাব ফেলল। তখন থেকে ব্যানচাও বিভিন্ন বই পড়তে শুরু করেন। পড়ার সময় কোন প্রশ্ন পেলে সঙ্গে সঙ্গে বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করেন। সুতরাং কয়েক বছর পর তিনি একজন জ্ঞানী মেয়ে হয়ে গেলেন।

ব্যানচাওয়ের বড় ভাই ব্যানগু বিশ বছরের জন্য বই লিখলেন। ৯২ খৃষ্টাব্দে ' হ্যানসু' বা হ্যান রাজবংশের ইতিহাস বই প্রায় সম্পন্ন হওয়ার প্রক্কালে ব্যানগু বিদ্রোহীদের সমর্থক অভিযুক্ত হলে বন্দিতে দেয়া হল। কিছু দিন তিনি বন্দিরে মারা যান। তার মৃত্যুর খবর শুনে হ্যান তত্কালীন রাজা হ্যাহোডি ও রাজপ্রসাদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা অত্যন্ত দু:খ প্রকাশ করেন। রাজা হ্যাহোডি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদেরকে বললেন: ' আমি কেবল ব্যানগুকে ক্ষমতাচ্যু করতে চেয়েছি। আমি কল্পনা করতে পারি না যে , সে এত অল্প সময়ের মধ্যে মারা গেছে। দু:খের ব্যাপার হল, সে মারা যাওয়ার পর কে হ্যান রাজবংশের ইতিহাস বই সম্পন্ন করবে?"

ঠিক সেই সময় উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন লোক উঠে দাঁড়িয়ে রাজাকে বললেন: ' মহারাজের কোন উদ্বেগ নেই। আমি একজন লোককে শুপালিশ করতে পারবো। সে সেই অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। "

'কে?' রাজা জিজ্ঞেস করলেন।

' ব্যানগুর ছোট বোন। তার নাম ব্যানচাও। সে ছোটবেলা থেকে বাবা ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছে। সে একজন জ্ঞানী মেয়ে। সে ছাড়া কেউ 'হ্যাসু' সম্পন্ন করতে পারে না।'

এই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কথা শুনে রাজা খুব খুশী। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ব্যানচাওকে রাজপ্রসাদে ডেকে পাঠালেন। তখন ব্যানচাওয়ের বয়স চলিশ বছর ছাড়িয়ে গেল। যখন তার বয়স ১৫ বছর তখন তিনি এক জায়গার একজন যুবক চাওসিওয়ের সঙ্গে বিয়ে করে। কিন্তু কয়েক বছর পর তার স্বামী মারা গেল। তিনি আরও বিয়ে করেননি। তিনি নিজেই সন্তানকে লালনপালন করার পাশেপাশি গবেষণা করেন। তার বড় ভাই ব্যানগুর মৃত্যু খবর শুনে ব্যানচাও মর্মান্ত হয়ে পড়লেন। তার পরিবারের লোকজন তাকে রাজি করিয়ে বললেন: ' প্রাচীনকাল থেকে যারা ইতিহাস বই লিখেন তাদেরকে সব সময় সত্য কথা বলতে হবে । কিন্তু অবশেষে তাদের ভাগ্য ভাল নয়। তুমি একজন মহিলা মানুষ। তুমি কেন রাজপ্রসাদের জন্য কাজ করবে? তাড়াতাড়ি একটি কৈফিয়ত খুঁজবে'।

ব্যানচাও একটু চিন্তা করে উত্তর দিলেন: ' বড় ভাইয়ের মৃত্যু খবর শুনে আমি মর্মান্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু আমি জানি মানুষ তো একদিন মারা যাবেই। আমার সবচেয়ে মর্মান্ত ব্যাপার এই যে, বড় ভাই তার আশা-আকাংক্ষা বাস্তবয়ন করতে পারেননি। তার তুলনায় আমার দক্ষতা কম হলেও আমি তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারি। তা ছাড়া , মহিলা মানুষ হলেও আমি দেশের জন্য অবদান রাখতে ইচ্ছুক। সবাই আমাকে আর বাধা দেবে না'।

কিছু দিন পর ব্যানচাও রাজপ্রসাদে গেলেন। তিনি রাজপ্রসাদের একটি লাইব্রলিতে অবস্থান করলেন। ৯৩ খৃস্টাব্দ থেকে ১০৭ খৃষ্টাব্দ পযর্ন্ত ১৪ বছরের মধ্যে ব্যাচাও দিন-রাত এই লাইব্রলিতে কাটলেন। তিনি অজস্র ইতিহাসের বই পড়েছেন। তিনি তার শুরু থেকে বড় ভাইয়ের লেখাগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে পড়লেন। তারপর তিনি বইটির শেষ অংশ সম্পন্ন করলেন।

১২০ খৃষ্টাব্দে ৭০ বছর বয়স্ক ব্যানচাও মারা যান। তার সম্মানে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হল। একজন মহিলা এত উচু মর্যাদা অর্জন করেছেন তা ইতিহাসে অত্যন্ত কম দেখা যায়।

তার জীবনে ইতিহাস বইয়ের সম্পন্ন ছাড়া ব্যানচাও অনেক নিবন্ধ লিখেছেন। সুতরাং তিনি কেবল একজন ঐতিহাসিক তাই নয় তিনি একজন সাহিত্যিকও ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক