Web bengali.cri.cn   
সাং ছুয়াং ছত্রাক বাগান
  2013-03-13 15:09:01  cri

চীনের দ্বাদশ গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন এবং জাতীয় গণকংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পেইচিংয়ে। চীনের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা এ অধিবেশনে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও চিকিত্সাসহ জনগণের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং পরার্মশ উত্থাপন করেন।

প্রাচীনকাল থেকে চীন একটি বৃহত্ কৃষিপ্রধান দেশ এবং চীনের জনসংখ্যার মধ্যে কৃষকের অনুপাত ৪০ শতাংশেরও বেশি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও সরকার সবসময় কৃষি, কৃষক ও গ্রামসংশ্লিষ্ট সমস্যাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নিয়ে এসবের সমাধানে নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা দেয়।

গত কয়েক বছরে চীনের কৃষি অর্থনীতির কাঠামো পরির্বতন হয়েছে এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও গ্রামীণ পর্যটনসহ তৃতীয় শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। কয়েক দিন আগে আমি পেইচিংয়ের উপকণ্ঠের একটি গ্রামে যাই সেখানকার কৃষিপরিস্থিতি দেখতে এবং কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলতে।

সাং ছুয়াং ছত্রাক বাগান হাই তিয়ান এলাকায় অবস্থিত। সারা বছর এখানে ছত্রাক চাষ করা এবং সেগুলো পেইচিংয়ের সুপার মার্কেটগুলোতে বিক্রি করা হয়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ২০০৮ সাল থেকে 'কৃষক ও সুপার মার্কেটের মধ্যে সংযোগ' শীর্ষক একটি নীতি জনপ্রিয় করে তুলেছে। এ নীতির আওতায় কৃষকরা সরাসরি সুপার মার্কেটে কৃষিজাত দ্রব্য সরবরাহ করে। সুপার মার্কেটগুলো কঠোর পণ্যমান মেনে চলে এবং সে অনুযায়ী কৃষকরা সারা বছর নানা রকমের ভাল গুণগত মানের দ্রব্য সরবরাহ করে। কৃষকদের পক্ষে একা একা সুপার মার্কেটের সঙ্গে সহযোগিতা করা সম্ভব হয় না বলে তারা প্রযুক্তি ও বাজারজাতকরণসহ পেশাদার সহায়তা চায়।

সাং ছুয়াং ছত্রাক বাগানের ম্যানেজার ছাং ইয়োং তে বলেন:

"কৃষকরা ছত্রাক চাষ করতে পারেন, কিন্তু বিক্রয় করতে পারেন না। সুপার মার্কেটের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা তাদের জন্য খুব কঠিন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা একটি ছত্রাক চাষ সমবায় গড়ে তুলি এবং আমাদের নেতৃত্বে কৃষকরা ছত্রাক চাষ করে এবং আমাদের মাধ্যমে সুপার মার্কেটে তাদের ছত্রাক বিক্রয় করে।"

সমবায়ের সদস্যরা কেবল স্থানীয় কৃষক নন, চীনের শান তং, হে পেই, শাং হাই ও ফু চিয়ানসহ বিভিন্ন প্রদেশের কৃষকও এ সমবায়ে যোগ দিয়েছেন। দেশের একেক অঞ্চলের আবহাওয়া একেক রকম হওয়ায় এ সমবায়ের কৃষকরা সারা বছর কোনো না কোনো অঞ্চল থেকে ছত্রাকের যোগান দিতে পারেন। যেমন গ্রীষ্মকালে পেইচিংয়ের কৃষকরা ছত্রাকের চাষ করতে পারেন না। তখন দেশের সমবায়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় চাষীদের কাছ থেকে সেটা সংগ্রহ করা হয়।

সমবায় প্রতিষ্ঠার পর ছত্রাক চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে এবং সমবায়ের সাহায্যে তারা উন্নত ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতা ও পেশাদার চাষপ্রযুক্তি অর্জন করছে। কৃষি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার বিশেষজ্ঞরা চাঁদোয়ায় এসে কৃষকদেরকে সাহায্য করেন। অন্যান্য অঞ্চলের অনেক কৃষক পেইচিং এসে চাঁদোয়া ভাড়া করে ছত্রাক চাষ করেন এবং স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কাজ করার সাথে সাথে পরস্পরের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তারা সমবায় আয়োজিত প্রশিক্ষণেও ছত্রাক চাষ সম্বন্ধে জ্ঞান পান।

কান সু প্রদেশ থেকে আসা মধ্যবয়সী সু তার স্বামীর সঙ্গে ছত্রাক খামারে ছিলেন তিন বছর। তারা তিনটি চাঁদোয়া ভাড়া করে ছত্রাক চাষ করেন এবং প্রতি বছর তাদের আয় হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান। কেন পেইচিংয়ে ছত্রাক চাষ করেন - এ প্রশ্নের জবাবে সু বলেন:

"আমি জন্মস্থানে তেমন পয়সাকড়ি রোজগার করতে পারিনি। তাই আমি একটি ছত্রাক প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কাজ করতাম। তারপর আমি ভাবি সবাই ছত্রাক চাষ করে আমিও সেটা করতে পারি। আমাদের রাজধানী হিসেবে পেইচিংয়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভাল বলে আমি এখানে এসেছি।"

সমবায়ের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানি শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছত্রাক শিল্পের উন্নয়নের পটভূমিতে সাং চুয়াং ছত্রাক খামার একটি শিল্পচেন গড়ে তোলে।

সেখানকার ম্যানেজার ছাং বলেন:

"২০০৮ সালে সমবায় প্রতিষ্ঠার পর কৃষকরা কার্যকরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দুই পা নিয়ে হাঁটি। একটি পা হচ্ছে ছত্রাক চাষ ও বিক্রি এবং অন্যটি ছত্রাক পর্যটন।"

২০১০ সালে সাং চুয়াং জেলা 'ছত্রাক পাড়া' ও 'ছত্রাক ভোজ' শীর্ষক পর্যটন প্রকল্প গড়ে তোলে। বাগানে পর্যটকরা নিজেরা ছত্রাক খামারে কাজ করতে ও তা তুলতে পারেন এবং ছত্রাক নিয়ে তৈরি ৯০-এর বেশি রকমের খাবার খেতে পারেন। তা ছাড়া, এখানে তারা ছত্রাক সংশ্লিষ্ট তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতেও পারেন। এ পর্যটন প্রকল্প খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং সাপ্তাহান্তিক ছুটিতে এক একটি পরিবার এখানে এসে আনন্দময় সময় কাটায়।

মিম ছাং একজন পর্যটক। তিনি বলেন, অন্যান্য গ্রামীণ পর্যটনের চেয়ে ছত্রাক পর্যটন আরো বিশেষ, এখানে আরো মজা।

"বন্ধুদের পরামর্শে আমি প্রথম বারের মতো ছত্রাক বাগানে এসেছি। খুব মজা লাগছে। সাধারণত আমরা ছত্রাক বৃদ্ধির প্রক্রিয়া দেখতে পারি না। তবে এখন আমি কেবল ছত্রাক তুলতেই করতে পারি ন; ছত্রাক খাবার রান্নাও করতে পারি।"

ছত্রাক পর্যটন পর্যটকদের জন্য বয়ে আনছে আনন্দ আর কৃষকদের জন্য কর্মসংস্থান ও অধিক আয়। ছত্রাক খামারের গাড়িচালক, কর্মী ও রেস্তোরাঁর ওয়েটার - সবাই স্থানীয় শ্রমিক।

দ্বাদশ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন এবং জাতীয় গণকংগ্রসের পর অনেক বেশি কৃষিসংশ্লিষ্ট নীতি কৃষকদের জন্য আরো সুবিধা বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের সমর্থনে ছত্রাক বাগানে ২০১৩ সালে একটি আধুনিক প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তোলা হবে। ছত্রাক বাগানের ভবিষ্যত সম্পর্কে ম্যানেজার ছাং বলেন:

"কৃষি সমিতি ও গ্রামের উদ্যোগে আমরা একটি নতুন ছত্রাক প্রক্রিয়াকরণ কারখানা তৈরি করব। এর ফলে আরো বেশি সংখ্যক কৃষক যেমন ছত্রাক চাষ করতে পারবেন, তেমনি অনেকে এখানে কাজ করতে পারবেন। আমরা একটি নতুন এলাকা খুলব যেখানে পযর্টকর ভ্রমণ করতে পারেন।"

ছোট ছত্রাক কৃষকদের জন্য সম্পদ সৃষ্টি করেছে এবং সাং চুয়াং জেলার ছত্রাক বাগান এক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, দুই পা দিয়ে হাঁটা - অর্থাত্ কৃষিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ এবং সাথে সাথে গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়ন করা একটি ভাল পদ্ধতি, যে পথে চীনের কৃষকরা দীর্ঘসময় ধরে এবং স্থিতিশীলভাবে পয়সা উপার্জন করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক