Web bengali.cri.cn   
চীনের জৈব কৃষি উন্নয়ন
  2013-03-11 15:06:58  cri

 সম্প্রতি ক্ষুদ্র আকারের জৈব কৃষিপণ্য মেলা পেইচিংয়ের রাজধানী জিমনেসিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের ১৫টি জৈব কৃষি খামার এ মেলায় নিজেদের চাষ করা নানা ধরনের কৃষি ও পশুপালন পণ্য প্রদর্শন করে। এ মেলা অনেক পেইচিংবাসীকে আকর্ষণ করেছে।

জৈব কৃষিপণ্য মেলা

পেইচিং, শানশি ও কানসুসহ বিভিন্ন প্রদেশের ১৫টি জৈব কৃষি খামার যৌথভাবে এ মেলায় অংশ নেয়। মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের জৈব কৃষি ও জৈব কৃষিপণ্যের উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া। এ মেলার উদ্যোক্তা সিয়াও লিয়াং জানান, তাদের এমন একটি মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জৈব কৃষিপণ্যের উত্পাদক আর ভোক্তাদের সামনাসামনি হওয়ার প্লাটফর্ম সৃষ্টি করা। প্রায় সকল ভোক্তা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য পেতে চান। পেইচিংয়ের আশেপাশে কিছু কৃষি খামারের মালিক স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কৃষি ও প্রাণীজাত পণ্য উত্পাদনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এ কৃষিপণ্যগুলোর ব্র্যান্ড ছোট বলে তাদের বাজার সম্প্রসারণ হয়না এবং বিক্রির পথ ও পণ্য স্থানান্তরের সমস্যাও সম্মুখীন হয় তারা। সেজন্য একটি প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করে উত্পাদক ও ভোক্তাদের জন্য একটি সরাসরি বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করতে চান মেলার আয়োজকরা।

তিনি বলেন, "প্রথম মেলাকে আমরা ভুল-পরীক্ষা সংস্করণ বলছি। আমরা চেষ্টা করছি নতুন সমস্যা ও নতুন উন্নয়নের পথ খুঁজে বের করা। একটু আগে আমি কৃষিখামারের মালিক ও ভোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। এ খাতে তাদের উভয়ের চাহিদা আছে। এ মেলা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে।"

অনেক অধিবাসী শুধু জৈব কৃষিপণ্য কেনার জন্য মেলায় এসেছেন। একটি জৈব শাকসবজি স্টলের সামনে আমাদের সংবাদদাতা শহরবাসী মাদাম কিন লিংকে দেখেন। তাঁর শপিং ব্যাগ সবেমাত্র কেনা শাকসবজি ও ফলমূলে ভরা। তিনি বলেন, "বাজারের টমেটোর তুলনায় এখানকার টমেটো বেশি সুস্বাদু ও টাটকা। আমাদের ছোটবেলায় যে টমেটো খেয়েছি, সেগুলোর স্বাদ পেয়েছি এখানে। আমি পালং শাক ও সেলিরি কিনেছি।"

চীনে অর্থনীতির টানা দ্রুত-গতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জনগণের আয় এবং জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে। এর সাথে সাথে জীবনযাপনের মৌলিক খাদ্যের চাহিদাও বেড়েছে। মানুষ এখন আরো স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য খেতে চায়। কিন্তু কোন খাবারের মধ্যে পুষ্টি উপাদান বেশি আছে এবং কোন খাদ্য বেশি নিরাপদ? শানশি প্রদেশের কৃষিপণ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা উন্নয়ন কমিটির অনারারি ভাইস-চেয়ারম্যান হান নোং এর উত্তরে বলেন, "আমাদের উচিত প্রথমে একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, খাদ্যকে চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। সর্বোচ্চ শ্রেণী হচ্ছে জৈব খাদ্য। এর নিচে হচ্ছে সবুজ খাদ্য। তারপর অক্ষতিকর খাদ্য। সবচেয়ে নিম্ন শ্রেণীতে হচ্ছে সাধারণ খাদ্য।"

জৈব কৃষিপণ্য

হান নোং আরো বলেন, জৈব কৃষিপণ্য হচ্ছে বর্তমান পর্যায়ে চাওয়া পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্য। জৈব কৃষিপণ্যের প্রসঙ্গ এলে জৈব কৃষির কথা উল্লেখ করতেই হয়। জৈব কৃষি উন্নয়নের প্রধান উদ্দেশ্য কিন্তু কেবল জৈব কৃষিপণ্য উত্পাদন করা নয়। আন্তর্জাতিক জৈব কৃষি আন্দোলন ফেডারেশন নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুসারে, জৈব কৃষি মানে গুণগত মান নিশ্চিত করা সাপেক্ষে উত্পাদন বাড়ানো, পরিবেশ রক্ষা করা, পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা এবং টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া।

কানসু প্রদেশের থিয়েনসুই থেকে চেন সিয়াও ইয়াং মেলায় 'সবচেয়ে মিষ্টি' আপেল নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, "মি. ফান শি ছির দাতব্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি ছিল থিয়েনসুইয়ের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলগুলোকে মোট ৪৬টি পায়খানা দেওয়া। এর মধ্যে ১৫টি পানি দিয়ে পরিষ্কার করা পায়খানা আর ৩১টি বাস্তুববিদ্যাসংক্রান্ত পায়খানা রয়েছে। এর জন্য প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ইউয়ান ব্যয় করা হয়েছে। এটা হচ্ছে আমার বাস্তুববিদ্যাসংক্রান্ত পায়খানা অন্বেষণের ভিত্তি।"

চেন সিয়াং ইয়াং উল্লেখিত বাস্তুববিদ্যাসংক্রান্ত পায়খানা হচ্ছে এক ধরনের বিশেষ টয়লেট। এটা থেকে আলাদাভাবে মল ও মূত্র সংগ্রহ করা যায় এবং পানি দিয়ে পরিষ্কার করা লাগে না। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, মূত্রের মধ্যে মানুষদেহ নির্গত ৮০ শতাংশ এনপিকে (NPK) আছে। এটা হচ্ছে প্রাকৃতিক জৈবসার। জানা গেছে, প্রতি বছর এক জন প্রায় ৫০০ কেজি মূত্র ত্যাগ করে। তারপর প্রতি বছর একজন লোক পায়খানা পরিষ্কার করার জন্য প্রায় ১৫ টন পানি ব্যবহার করে। পরিকল্পনা করা হয়, থিয়েনসুইতে এ রকম শুকনো টয়লেট নির্মাণের পর পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি মূত্র সংগ্রহ করে জৈব কৃষিপণ্যের জন্য জৈবসার উত্পাদন করা হবে। চেন সিয়াং ইয়াংয়ের পরিকল্পনায় বিনা খরচে এ জৈবসার কৃষক পরিবারকে দেওয়া হবে এবং কৃষক পরিবারের সাথে চুক্তির আওতায় জৈবসার দিয়ে চাষ করা কৃষিপণ্য কেনা হবে।

চেন সিয়াং ইয়াং বলেন, "২০১০ সাল থেকে শুকনো পায়খানার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। একই বছর কয়েক ডজন কৃষককে এটা ব্যবহার করার প্রস্তাব করি, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারা বিশ্বাস করেন না, মল ও মূত্র আলাদা করে সংগ্রহ করার পর সার উত্পাদনের কোনো মূল্য থাকতে পারে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এ পায়খানা নির্মাণের ব্যয় তারা বহন করতে পারেন না। ওই বছর আমার নিচের টাকা দিয়ে জৈবসার কিনি। তখন এক কৃষক পরিবার তা ব্যবহার করতে রাজি হয়। সেবছর তার ক্ষেতে ৫ হাজার কেজি আপেল উত্পাদিত হয়। তিনি আমার কাছে দশ হাজার ইউয়ান দাম চান। কিন্তু আমি তাকে বিশ হাজার ইউয়ান দিই। এটা ছিল গোটা গ্রামে একটা বড় ঘটনা।"

চেন সিয়াং ইয়াংয়ের জৈব কৃষি চাষের আকার অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০১২ সালে তিনি বিনা খরচে ২২টি কৃষক পরিবারকে জৈবসার সরবরাহ করেন। একই বছর তিনি ১ লাখ ৬০ হাজার কেজি জৈব কৃষিপণ্য সংগ্রহ করেন। জৈব সার ব্যবহারে চাষকৃত ফল ও সবজি আপেল থেকে নাশপাতি, চেরি ও আলু পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে।

চীনে কৃষিখাতের মোট উত্পাদনের মধ্যে এই এক লাখ কেজি জৈব কৃষিপণ্যের অনুপাত খুব সামান্য। তবে এ থেকে আমরা চীনের জৈব কৃষি উন্নয়নের একটি টেকসই উন্নয়নের পথ দেখতে পাই। (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক