Web bengali.cri.cn   
চীনের ইউয়ান রাজবংশের নাম-করা মহিলা আবিস্কারক হুয়াং ডাও পো সম্পর্কে
  2013-03-05 19:05:04  cri

এ-কথা শুনে হুওয়াং ডাও পো তো মহাখুশী। তিনি বললেন: 'চমত্কার! আমিও তুলা চাষ করতে পারি। বস্ত্রবয়নের কাজও পারি।' কয়েক দিন ও কয়েক রাত পর জাহাজটি হাইনান দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের য়াযৌতে পৌছাল। হুওয়াং ডাও পো দয়ালু নাবিকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একাই নতুন জীবনের পথে এগিয়ে গেলেন।

য়াযৌ পৌছার পর হুওয়াং ডাও পো যেমন উত্তেজিত তেমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। তিনি হেটে যাওয়ার পাশাপাশি রাস্তার দু'পাশের সবকিছু কৌতুল নিয়ে দেখছিলেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। উপরন্তু বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। নিরুপায় তিনি একটি বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ালেন বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য। ঠিক সেই সময় ঘরের ভেতর থেকে লি জাতির এক মহিলা হুওয়াং ডাও পোকে দেখলেন। তিনি হুওয়াং ডাও পোকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন। হুওয়াং ডাও পো ঘরের ভিতরে প্রবেশ করার পর এই মহিলা তাকে জিজ্ঞেস করলেন: 'তুমি কোথা থেকে এসেছ? দেখলে বোঝা যায়, তোমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। আমাকে বল, তুমি কোথায় যেতে চাও?" মহিলার দরদভরা কণ্ঠ শুনে হুওয়াং ডাও পো তার মনের সমস্ত কথা মহিলাকে খুলে বলে দিলেন। মহিলা তার কথা শুনে আন্তরিকভাবে বললেন: 'তুমি কোথাও যাবে না। আমার বাসায় থাকবে। আমি তোমাকে আমার আপন মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করবো।' এই দয়ালু মহিলার কথা শুনে হুওয়াং ডাও পো অত্যন্ত মুগ্ধ হলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে 'মা' বলে ডেকে মহিলাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন।

নতুন জীবন হুওয়াং ডাও পোকে নতুন আনন্দ এনে দিল। গ্রামের লি জাতির লোকজন সবাই হুওয়াং ডাও পোর গল্প জেনে ফেলল। সুতরাং তারা হুওয়াং ডাও পোকে সাহায্য করতে শুরু করলেন। কেউ তাকে লি জাতির ভাষা শিখিয়ে দিলেন, কেউ তাকে দিলেন বস্ত্রবয়নের আধুনিক প্রযুক্তি শিখিয়ে । হুওয়াং ডাও পো নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের কাছ থেকে বস্ত্রবয়নের প্রযুক্তি শিখে নিলেন। কাজ করতে করতে একদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গ্রামের মেয়েরা তাকে দেখতে এলেন। তারা তাকে বললেন: 'এখানে তো খাওয়া-পড়ার কোন চিন্তা তোমার নেই। কেন এত পরিশ্রম কর?' হুওয়াং ডাও পো হেসে হেসে তার মনের কথা বললেন: 'আমার জন্মস্থানে একটি প্রবাদ প্রচলিত হয়। প্রবাদ এমনি: গাছটি যত উচু হোক না কেন, তার পাতা অবশেষে গাছের নিচে পড়বে। আমার শিকড় তো সংচিয়াং উনিচিনে। ভবিষ্যতে একদিন আমি অবশ্যই সেখানে ফিরে যাবো। আমার জন্মস্থানে বংশপরষ্পরায় বস্ত্রবয়নের ওপর নির্ভর করা হয়। কিন্তু বস্ত্রবয়নের প্রযুক্তি অত্যন্ত পশ্চাতপদ। সুতরাং আমার জন্মস্থানের বস্ত্রবয়নের প্রযুক্তি উন্নত করা জন্য আমাকে এখানকার আধুনিক প্রযুক্তি ভালভাবে শিখতে হবে।' তার কথা শুনে উপস্থিত মেয়েরা খুব মুগ্ধ হলেন। হুওয়াং ডাও পো-এর প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ আরো বেড়ে গেল। অধিক আগ্রহ নিয়ে তারা হুওয়াং ডাও পোকে আধুনিক প্রযুক্তি শেখাতে লাগল। কয়েক বছর পর, হুওয়াং ডাও পো আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠলো।

দেখতে দেখতে হাইনান দ্বীপে হুওয়াং ডাও পোর ৩০ বছর কেটে গেল। তখন তার বয়স পঞ্চশের মতো। একদিন এক ঝাক পাখিকে উত্তর দিকে উড়তে দেখে তার নিজের জন্মস্থানের কথা মনে পড়ল। কিছুদিন পর হুওয়াং ডাও পো অশ্রুপূর্ণ হয়ে লি জাতির মা ও গ্রামের অন্যান্য লি জাতির ভাইবোনদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। তিনি আধুনিক বস্ত্রবয়নের প্রযুক্তি নিয়ে তার জন্মস্থানে ফিরে গেলেন।

অনেক বছর পর হুওয়াং ডাও পো জন্মস্থানে ফিরে আসলেন দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে আড়ম্বরপূর্ণভাবে স্বাগত জানালো। হুওয়াং ডাও পোর তত্ত্বাবধানে লি জাতির আধুনিক প্রযুক্তি সেখানে প্রচলিত হলো। স্থানীয় লোকজন অল্প সময়ের মধ্যে এই আধুনিক প্রযুক্তি রপ্ত করলেন। কিন্তু হুওয়াং ডাও পো সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি বস্ত্রবয়নের যন্ত্রপাতির সংস্কার করতে শুরু করলেন। তার অবিরাম প্রচেষ্টায় বেশ কয়েকটি যন্ত্রপাতির আবিস্কার হয়েছে।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক