Web bengali.cri.cn   
পেইচিংয়ের পাতাল রেলপথ
  2013-03-06 15:09:17  cri

পাতাল রেল পেইচিং শহরের গণপরিবহণ ব্যবস্থার একটি অংশ। গত বছরের শেষ দিকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পেইচিং পাতাল রেললাইনের সংখ্যা ১৬টি এবং এর মধ্যে ১৫টি সাধারণ রেললাইন এবং একটি বিমানবন্দর এক্সপ্রেস লাইন। বর্তমানে পেইচিং পাতাল রেলপথের দৈর্ঘ্য ৪৪২ কিলোমিটার এবং মোট স্টেশন ২৬১টি।

১৯৫৩ সালে পেইচিং পাতাল রেলের পরিকল্পনা শুরু হয় এবং ১৯৫৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে চীনের প্রথম পাতাল রেলপথ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। বর্তমানে দুটি কোম্পানি পেইচিং পাতাল রেল পরিচালনা করছে। একটি হলো রাষ্ট্রায়ত্ত পেইচিং পাতাল রেলপথ কোম্পানি এবং আরেকটি বেসরকারি পেইচিং এমটিআর কর্পোরেশন।

দৈর্ঘ্যের বিচারে পেইচিং পাতাল রেলপথ বিশ্বের বৃহত্তম পাতাল রেলব্যবস্থা এবং যাত্রীর সংখ্যার দিক থেকে এটি চীনের সবচেয়ে ব্যস্ত শহর পরিবহণ ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৮০ লক্ষাধিক যাত্রী এ রেলপথ ব্যবহার করে। গত ১৮ জানুয়ারি এ সংখ্যা নতুন রেকর্ড ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ৯০-এ পৌঁছায়। বর্তমানে পেইচিং রেলপথের বিস্তৃতি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২০১৬ সাল নাগাদ পেইচিং রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ৬৬০ কিলোমিটার এবং ২০২০ সালে দৈর্ঘ্য ১ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে।

আচ্ছা বন্ধুরা, এখন আমি পেইচিং রেলপথের ১৬ লাইনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরবো।

 

লাইন-১-এর অধিকাংশ পেইচিংয়ের প্রধান সড়ক ছাং আন অ্যাভিনিউয়ের নিচ দিয়ে গেছে। লাইন-১ শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সি তান, তং তান, ওয়াং ফু চিং ও সি পি ডি অঞ্চলকে যুক্ত করেছে।

লাইন-২ পেইচিংয়ের প্রথম রিং লাইন। এটি পেইচিং শহরের পুরাতন অঞ্চলকে যুক্ত করেছে। আপনি লাইন-২ ধরে আর্থিক সড়ক ও সি ছি মেনসহ আর্থিক অঞ্চল ও পেইচিং রেলস্টেশন যেতে পারেন।

লাইন-৪ হচ্ছে পেইচিং এমটিআর কর্পোরেশন পরিচালিত একটি লাইন। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত লাইন-৪ সামার প্যালেস বা গ্রীষ্ম প্রাসাদ, ইউয়ান মিং ইউয়ান উদ্যান ও পেইচিং চিড়িয়াখানাকে অতিক্রম করেছে। লাইন ৪ দিয়ে পেইচিং দক্ষিণ রেলস্টেশনও যাওয়া যায়। বর্তমানে লাইন-৪ ও তা সিং লাইন সংযুক্ত হয়েছে।

লাইন-৫ পেইচিং পূর্বাঞ্চলের একটি পাতাল রেলপথ লাইন এবং পেইচিংয়ের কয়েকটি প্রধান আবাসিক এলাকা এ লাইনের পাশে অবস্থিত।

লাইন-৬ সম্প্রতি চালু হয়েছে। এই লাইন ১-এর মতো পেইচিং শহরের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলকে যুক্ত করেছে।

লাইন-৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস চলাকালে চালু হয়। প্রাকৃতিক অরণ্যউদ্যান থেকে অলিম্পিক পার্ক পর্যন্ত এ লাইন অলিম্পিক গেমস চলাকালে খুব কাজে লাগে।

লাইন-৯ পেইচিংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি লাইন। এর দক্ষিণ প্রান্ত ফাং সান লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে এবং পেইচিং পশ্চিম রেলস্টেশন এ লাইনে অবস্থিত।

লাইন-১০ পেইচিংয়ের দ্বিতীয় রিং লাইন। পেইচিং তৃতীয় ও চতুর্থ রিং রোডের মধ্যে অবস্থিত এ লাইনের নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফেং তাই রেলস্টেশনের অবস্থান পরির্বতন সম্ভব হওয়ার কারণে এ লাইনের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের একটি স্টেশন এখনো চালু হয়নি। এ কারণে লাইন-১০ এখন ইংরেজি বর্ণ 'u'-এর আকার ধারণ করেছে।

লাইন-১৩ একটি ইংরেজি বর্ণ 'n' আকৃতির একটি লাইন। লাইন ৫-এর মতো লাইন-১৩-ও প্রধান আবাসিক এলাকাকে সংযুক্ত করেছে। সাং তি তথ্যশিল্প কেন্দ্র এ লাইনের পাশে অবস্থিত।

লাইন-১৫ সুন ই এবং পেইচিং কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে সংযুক্তকারী একটি লাইন।

বা থং লাইন হচ্ছে লাইন-১-এর পূর্ব প্রান্ত থেকে আরও পূর্ব দিকে যাওয়া একটি লাইন। বা থং লাইনে যেতে চাইলে লাইন-১-এর সি হুই বা সি হুই পূর্ব স্টেশন হয়ে যেতে হবে।

তাছাড়া, ছাং পিং লাইন,তা সিং লাইন,ফেং সান লাইন ও ই ছুয়াং লাইন পেইচিং চার দিকের উপকন্ঠ অঞ্চল কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ করে।

এই লাইনগুলো ধরে যে কোনো গন্তব্য যাওয়ার জন্য টিকিটের দাম মাত্র ২ ইউয়ান। এ ক্ষেত্রে যাতায়াতের সময়, এক লাইন থেকে অন্য লাইনে পরিবর্তন বা যাত্রার দৈর্ঘ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। অর্থাত্ একজন যাত্রী ২ ইউয়ানের টিকিট কেটে যতক্ষণ খুশি এ লাইনগুলোতে চড়তে পারেন এবং যতদূর খুশি যেতে পারেন। তবে লাইন থেকে একবার বের হলে আবার টিকিট কেটে ঢুকতে হবে।

বিমানবন্দর এক্সপ্রেস লাইন তং চি মেন থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার একটি বিশেষ লাইন। যদি আপনি এ লাইন ব্যবহার করতে চান তাহলে আলাদা টিকিট কিনতে হবে। এ লাইনের টিকিটের দাম ২৫ ইউয়ান। এ লাইনে রয়েছে কেবল তং চি মেন, সান ইউয়ান ছিয়াও, বিমানবন্দর ৩ নম্বর টার্মিনাল ও ২ নম্বর টার্মিনাল – এই ৪টি স্টেশন রয়েছে।

বর্তমানে পেইচিং পাতাল রেল চীনের মধ্যে সবচেয়ে সুলভ বলে প্রবীণ ও শিশুদের জন্য বিশেষ সুবিধার নীতি নেই।

পেইচিং পাতাল রেল ২০০৮ সালে ৯ জুন থেকে কাগজের টিকিট ব্যবহার বন্ধ করে নতুন এ এফ সি ব্যবস্থা চালু করে। যাত্রীরা স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে টিকিট কিনতে পারেন বা পেইচিং পরিবহণ আইসি কার্ড ব্যবহার করতে পারেন পেইচিং পাতাল রেলে চড়ার জন্য। এই আইসি কার্ড ব্যবহার করে পেইচিংয়ের যে কোনো বাস ও পাতাল রেলে চড়া যায়।

প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমি পেইচিং পাতাল রেলের সর্বশেষ তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এই সুযোগে আমি পেইচিংয় ভ্রমণের জন্য আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখতে চাই। পেইচিং আসলে নিশ্চয়ই এখানের পাতাল রেল চড়তে ভুলবেন না। পেইচিং পাতাল রেলপথ সম্পর্কে আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে তাহলে আমাকে জানাবেন। আমি সেগুলোর উত্তর জানানোর চেষ্টা করবো। (শিশির)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক