Web bengali.cri.cn   
চীনের সেরা টায়ার উত্পাদক হাংচৌ চোংছে রবার গোষ্ঠী
  2013-03-04 18:01:09  cri

 টায়ার নির্মাণ সবসময় ইউরোপীয় দেশ, আমেরিকা ও জাপানের শক্তিশালী খাত। দীর্ঘকাল ধরে মিছেলিন, পায়ারলি ও ব্রিজস্টোনের মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক টায়ার বাজারের সেরা দশটি ব্র্যান্ড ছিল। এ খাতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুমুল ছিল। তবে ২০১২ সালে চীনের একটি টায়ার ব্র্যান্ড প্রথম বারের মতো বিশ্বের সেরা দশটি ব্র্যান্ডের সারিতে প্রবেশ করে। এটা হচ্ছে চীনের বৃহত্তম টায়ার উত্পাদন প্রতিষ্ঠান হাংচৌ চোংছে রবার গোষ্ঠীর ব্র্যান্ড।

চীনের টায়ার শিল্পের ঐতিহাসিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে চোংছে রবার গোষ্ঠীর বোর্ডের চেয়ারম্যান শেন চিন রোং মনে করেন, বিগত দশ-বারো বছরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিশেষ করে গাড়িশিল্পের দ্রুত বিকাশ চোংছে গোষ্ঠীর উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। গত বছর চীনে টায়ারের বার্ষিক চাহিদা ছিল প্রায় ৭ কোটি। চোংছে গোষ্ঠী ১ কোটি ৭ লাখ লোড অল স্টিল রেডিয়্যাল টায়ার উত্পাদন করেছে। শেন চিন রোং বলেন, "আমরা তিন চার বছর আগেকার সরঞ্জাম বাতিল করছি। আগে চীনের শিল্পের সবসময় সস্তার সুনাম ছিল। ফলে এর গুণগত মান ছিল মোটামুটি। ইদানীং ব্যবস্থাপনার চিন্তাধারা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। সরঞ্জাম বা প্রযুক্তি হোক, উপকরণ বা জ্বালানি ব্যয় হোক, আমরা সবই শ্রেষ্ঠ মানে নিতে চাই।"

চোংছে গোষ্ঠীর কারখানায় সাংবাদিক লক্ষ্য করেন, সারি-সারি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের ওপর লাল ও সবুজ বাতি জ্বালিয়ে কাজ করছেন কর্মীরা, তবে কর্মীর সংখ্যা অপ্রত্যাশিত রকমের কম। কর্মীদের প্রধান কাজ হচ্ছে তৈরি টায়ারকে যন্ত্র থেকে নামিয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়ার মুখে রেখে দেওয়া এবং সময় সময় সরঞ্জামের সূচনা পরীক্ষা করা।

চোংছে গোষ্ঠী তার সরঞ্জামের মান উন্নত করার পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয় ও দূষিত পদার্থ নির্গমন হ্রাস করার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে। শেন চিন রোং সংবাদদাতাকে বলেন, একাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা চলাকালে চোংছে গোষ্ঠীর জ্বালানি ব্যয়ের পরিমাণ ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এক বছর আগে চোংছে গোষ্ঠী জ্বালানি সাশ্রয় পানি-পাম্প বদলে দিয়েছে। উত্পাদনের দক্ষতা একই রয়েছে, তবে দাম আগের তুলনায় সাত গুণ হয়েছে। কিন্তু এ গোষ্ঠীর পরিচালকরা বিনা দ্বিধায় এ পরিবর্তনে সম্মতি দিয়েছেন। শেন চিন রোং বলেন, "টায়ার শিল্পের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যয় ও মুনাফা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। আয় ও ব্যয়ের তফাত্ হয়তো মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে। জ্বালানি সাশ্রয় ও দুর্ষিত পদার্থ নির্গমন হ্রাস না হলে নিঃসন্দেহে ব্যর্থ হবে। সুতরাং সরকার জ্বালানি সাশ্রয় ও দুর্ষিত পদার্থ নির্গমন হ্রাস করার আহ্বান না জানালেও আমরা স্বেচ্ছায় তা করবোই।"

গত দশ বছরে চীনের মোটরগাড়ি শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন টায়ার বাজারে সমৃদ্ধি এনেছে। ২০১০ সালে চীন বিশ্বের শীর্ষ গাড়িক্রেতা দেশে পরিণত হয়। এটা চোংছে গোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য আরো বড় ক্ষেত্র যুগিয়েছে। গত বছর চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে চোংছে গোষ্ঠী-উত্পাদিত টায়ারের বিক্রি এবং বিদেশে রপ্তানির অনুপাত ছিল ৭৭:২৩। অভ্যন্তরীণ বাজার দখল করার পাশাপাশি চোংছে নতুন আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় তার রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির ধারা শুরু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত টায়ারের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে চীন থেকে রপ্তানিকৃত টায়ারের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করে। এটা মোকাবিলা সম্পর্কে শেন চিন রোং বলেন, "বিশেষ সংরক্ষণ পর্যায়েও চীনের চোংছে গোষ্ঠীর পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছিল। কারণ মার্কিন নাগরিকরা সেটা ব্যবহারে করতে অভ্যস্ত হয়েছে এর ওপর তাদের নির্ভরশীলতা গড়ে উঠেছে। রপ্তানি করার সময় আমরা সব পণ্য এক স্থানে দিই নি। তথাপি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলেও অপেক্ষাকৃত ভারসাম্যমূলতভাবে রপ্তানি করি।"

এখন হাংচৌতে চোংছের কারখানায় প্রতি দিন দশ হাজারেরও বেশি টায়ার তৈরি হয়। তারপর সেগুলোর ওপর চোংছে গোষ্ঠীর অধীন বিভিন্ন ব্র্যান্ড দেওয়ার পর বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশের পথে চলে যায় টায়ারগুলো। গত বছর চোংছের উত্পাদিত টায়ারের মধ্যে ৯৮ শতাংশ হচ্ছে তার নিজস্ব ব্র্যান্ডের। অন্য কোম্পানির ব্র্যান্ডের টায়ার ২ শতাংশেরও কম।

শেন চিন রোং মনে করেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থায়ী উন্নয়নে অবশ্যই স্বতন্ত্র ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি বলেন,"যদিও চীন একটি বড় রপ্তানিকারক দেশ, তবে ব্র্যান্ডের বড় দেশ নয়। সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের দিক থেকে চিন্তা করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবশ্যই নিজস্ব ব্র্যান্ড দরকার। না হলে টেকসই উন্নয়ন হবে না। আরেকটি কথা হচ্ছে ব্র্যান্ড দশ-বিশ বছর পরও নিজে নিজে ব্র্যান্ড গড়ে উঠতে পারে না। তবে এখন থেকে প্রচেষ্টা চালালে হয়তো দশ-বিশ বছর পর বিখ্যাত ব্র্যান্ড সৃষ্টি করা যেতে পারে।" (ইয়ু/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক