Web bengali.cri.cn   
হিলারি ক্লিন্টন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিলেন
  2013-02-08 15:18:35  cri
আধুনিক কালের লৌহ মানবী হিসেবে পরিচিত হিলারী রডহ্যাম ক্লিনটন বিগত পয়লা ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। এর আগে তিনি ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি-তে 'যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের ক্ষমতা' শীর্ষক এক ভাষণ দেন।

ভাষণে তিনি বিভিন্ন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক, বিশেষ করে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, "চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক একটি বিশেষ, গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সম্পর্ক। কী পদ্ধতিতে দু'পক্ষ ভবিষ্যতে এ-সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবে তা দুটি দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।" হিলারি বলেন, "আমরা 'পুরাতন' সমস্যার জন্য একটি নতুন উত্তর খোঁজার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সমস্যাটি হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্রের মত একটি শক্তিশালী দেশ এবং একটি নবোদিত শক্তিশালী দেশের সম্পর্ক কীভাবে উন্নয়ন করা যায়? এ-সমস্যা মোকাবিলার জন্য দু'পক্ষের উচিত একসাথে প্রচেষ্টা চালানো। সেজন্য চীন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দু'দেশের উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় বাড়িয়েছে; উত্তর কোরিয়া, সামুদ্রিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কৌশলগত সমস্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, নেট নিরাপত্তা ও মেধাস্বত্বসহ নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দু'পক্ষ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে।"

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারির চার বছরের মেয়াদ সম্পর্কে চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণালয়ের মহাপরিচালক ইউয়ান ভেং মনে বলেন, "এ-সময়কালে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক মন্তব্য করা হলেও, আসলে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত ৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের 'এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত পুনর্ভারসাম্য' নীতি দু'পক্ষের সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে ছিল।"

গত ৪ বছরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নাটকীয়তা ছিল। যদিও দেশদুটি এসময় প্রত্যক্ষ কোনো মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েনি, তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এসময় স্বাভাবিকও ছিল না। আমি মনে করি যে, হিলারি ও যুক্তরাষ্ট্রের চীন সংশ্লিষ্ট নীতিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের 'এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত পুনর্ভারসাম্য' নীতি হচ্ছে একটি চীন-বিরোধী নীতি। যদিও হিলারি সব সময় বলেছেন যে, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক বজায় রাখা হবে ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং শক্তিশালী দেশ এবং নবোদিত শক্তিশালী দেশের মতবিরোধ মেটাতে নতুন উত্তর খোঁজা হবে, বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা ও নীতির সাথে হিলারির কথার অমিল আছে।"

তবে গত ৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে হিলারির অবদান অস্বীকার করা যাবে না।

গত ৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কগুলো নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে। তবে এসময় হিলারির ইতিবাচক ভূমিকা এ-সম্পর্কগুলোকে প্রভাবিত করেছে। হিলারি তাঁর শক্তিশালী রীতি ও বিশেষ বিশ্বদর্শন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছেন।

পররাস্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারির অবদান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে আছে নানাবিধ মত। বিশেষ করে ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার, আফগানিস্তান সমস্যা, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং ইরানের পরমাণু ইস্যুসহ বিভিন্ন সমস্যায় হিলারির কোনো অবদান ছিল না বলে অনেকে মনে করেন।

সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়েই হিলারি তার ৪ বছরের মেয়াদ শেষ করেছেন। তিনি নতুন জীবন শুরু করছেন। শোনা যাচ্ছিল যে, তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। ইউয়ান ভেং বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুন বা না-করুন, বয়স ও শরীরের কথা বিবেচনা করলে, সেটি হিলারির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।"

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক