Web bengali.cri.cn   
আফগান তরুণীর শিল্পী হয়ে ওঠা
  2013-02-08 17:40:26  cri

রক্তাক্ত দেয়ালের পটভূমিতে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে আছে বোমার আগুনে কয়লা হয়ে যাওয়া ক্ষতবিক্ষত লাশ। আফগানিস্তানে এ দৃশ্য খুব স্বাভাবিক হলেও এটি তা নয়। এটি রক্তলাল রঙে রঞ্জিত দেয়ালে টাঙানো চিত্রকর্ম। এই শিল্পকর্মের স্রষ্টা আফগান তরুণী মালিনা সুলাইমান (২৩)।

দেশটির রক্ষণশীল অনগ্রসর সমাজে প্রতিকূলতা জয় করে নিজেকে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন মালিনা। এ বিষয়ে সম্প্রতি রয়টার্সে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

মালিনার জন্ম আফগানিস্তানে তালেবানের জন্মভূমি বলে পরিচিত কান্দাহার প্রদেশে। এমন এক রক্ষণশীল এলাকার বাসিন্দা হওয়ার পরও ছোটবেলা থেকেই তিনি শিল্পের প্রতি দারুণ অনুরক্ত। তালেবানের চোখ এড়াতে দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে ফ্ল্যাশলাইটের আলোতে শিল্পচর্চা করে গেছেন তিনি।

কান্দাহারে বেশি দিন টিকতে পারেনি মালিনার পরিবার। তালেবানের শাসন কঠোর হয়ে উঠলে তাঁরা কাবুলে চলে যান। সেখানে গত ডিসেম্বরে দুটি প্রদর্শনী করেছেন তিনি।

মালিনা সর্বশেষ প্রদর্শনী করেন নিজের জন্মস্থান কান্দাহারে। তাঁর চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যে উঠে এসেছে দেশ ও নিজের প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নানা সমস্যা-সংকটের কথা। কান্দাহারে তিনি প্রদর্শনীর আয়োজন করলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেগুলো দেখতে যান এবং শিল্পকর্মগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেন।

নিজের 'যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলা' ছবিটি সম্পর্কে মালিনা সুলাইমান বলছিলেন, 'অনেকেই কখনো এমন শিল্প অলংকরণ দেখেননি...কেউ বিরক্ত হয়েছেন, আবার কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন এগুলো দেখে...কারণ, এমন দৃশ্যের মধ্য দিয়েই তো দিন কাটাতে হয় তাঁদের।' এ ছবিটিতে আত্মঘাতী হামলার পর হতাহতসহ যে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা তুলে ধরা হয়েছে।

এই প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে মালিনা বলেন, 'আমি খুব আতঙ্কে ছিলাম। কারণ, যখনই সরকারি কর্মকর্তারা কোনো জায়গায় জড়ো হন, তখন তা সন্ত্রাসীদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।' জানালেন, পরিবারের সদস্যরা তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে খুব শঙ্কিত ছিলেন। তাঁকে বলেছিলেন, 'এই যে যাচ্ছ, আর ফিরে আসতে পারবে না।'

কাবুলে এখন মালিনার শিল্পকর্ম বেশ প্রশংসিত হয়েছে। কান্দাহারে জন্ম নেওয়া দেশের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই গত বছর মালিনাকে রাজধানী কাবুলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রেসিডেন্টকে নিজের শিল্পকর্ম দেখিয়ে আসেন মালিনা।

যুদ্ধ-বিগ্রহে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে গত তিন দশকে শিল্পকর্মের বিকাশ ঘটেছে সামান্যই। আর কোনো নারীর এভাবে শিল্পকর্মের প্রদর্শনী করা একেবারে নতুন। মালিনা মনে করেন, তাঁর এই সাহসী উদ্যোগ অন্য নারীদের এ পথে আসতে অনুপ্রাণিত করবে।

মালিনা এক বছর আগে কান্দাহার ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশনে একমাত্র নারী সদস্য হিসেবে যোগ দেন। এ সংগঠনটি স্থানীয়ভাবে শিল্পকর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। মালিনা এখন স্বপ্ন দেখছেন, কান্দাহারের শিল্পকলা ভবনটিকে আরও বড় করার। সেখানে তিনি নতুন শিল্পীদের জন্য কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ দিতে চান।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক