Web bengali.cri.cn   
সোং রাজবংশ আমলের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ ওইয়াং শিও
  2013-01-29 16:06:40  cri
যখন ওইয়াং শিওয়ের বয়স ৪ বছর, তখন তার বাবা মারা যায়। ওইয়াং শিওকে নিয়ে তার বিধবা মায়ের অনেক আশা ছিল। মার আশা ছিল ভবিষ্যতে ওইয়াং শিও দেশের একজন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হবেন। অল্প বয়স থেকেই ওইয়াং শিও তার মার কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের গল্প শুনতে শুরু করেন। প্রতিদিন মা তাকে পড়াতেন। কিন্তু পরিবারের অবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। কলম ও কাগজ কেনার টাকাও ছিল না। একদিন তার মার মনে একটি আইডিয়া এলো। তিনি বাইরে থেকে কিছুটা বালি আনলেন এবং সাথে আনলেন গাছের কয়েকটি ডাল। ওইয়াং শিও মাকে জিজ্ঞেস করল: 'মা, তুমি এসব দিয়ে কী করবে?' 'বাবা, এসবের সাহায্যে আমি তোমাকে পড়াবো।' মা জবাব দিলেন। তারপর তার মা বালিগুলো মাটিতে ফেলে কার্পেটের মতো বিছিয়ে দিলেন এবং গাছের ডাল দিয়ে বালির ওপর লিখতে শুরু করলেন। তিনি ছেলেকে বললেন: 'দেখ, কত ভাল কাগজ ও কলম। আজ থেকে এসবের সাহায্যে তুমি লেখাপড়া করতে পার।' ওইয়াং শিও আনন্দের সঙ্গে বললেন: 'কী মজা! আমি কাগজ ও কলম পেয়েছি। আমি এখন থেকে লেখাপড়া করতে পারবো!!' এভাবে চলতে থাকলো তার পড়াশোনা।

পরে ওইয়াং শিওয়ের পরিবারের অবস্থার আরো অবনতি ঘটল। নিরুপায় হয়ে তার মা তাকে চাচার বাড়িতে নিয়ে গেলেন। তার চাচার বাড়ি ছিল বতর্মান হুপেই প্রদেশের শিয়েযৌতে। তার চাচার গ্রামে ছিল এক জমিদারের বাস। ধীরে ধীরে জমিদারের ছেলের সঙ্গে ওইয়াং শিওয়ের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। জমিদারের বাড়িতে অনেক বই ছিল। ওইয়াং শিও মাঝে মাঝে জমিদারের ছেলের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে পড়তেন। একদিন তিনি থাং রাজবংশের বিখ্যাত সাহিত্যিক হ্যান ইউয়ুর একটি বই পেলেন। বইটি পেয়েতো তিনি মহাখুশী। তিনি মন দিয়ে বইটি পড়তে শুরু করলেন। তখন তার বয়স মাত্র ৯। তাই বইয়ের বিষয়বস্তু তিনি পুরোপুরি বুঝতে পারছিলেন না। কিন্তু তারপরও তিনি বইটির মধ্যে ডুবে রইলেন। বইটি পড়ার সময় থেকেই ওইয়াং শিওয়ের মনে একটি উচ্চাভিলাষ দানা বেধে উঠতে শুরু করে। তিনি হ্যান ইউয়ুয়ের মতো বড় সাহিত্যিক হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। যখন ওইয়াং শিওয়ের বয়স ১২, তখন তিনি অনেক বই পড়ে ফেলেছেন। তখন তিনি একটু-আধটু লিখতেনও। ওই বয়সেই তার লেখা নিবন্ধ বড়দের মতোই পরিপক্ক মনে হতো। একদিন তার চাচা ওইয়াং শিওয়ের লেখা একটি নিবন্ধ পড়লেন এবং তার মাকে বললেন: 'তোমার ছেলে একদিন নি:সন্দেহে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হতে পারবে।'

২৩ বছর বয়সে ওইয়াং শিও রাজদরবারের পরীক্ষায় অংশ নেন। একটানা তিনবার তিনি পরীক্ষায় অংশ নেনে এবং প্রতিবারই প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি চিনসি জেলার একজন নিম্নশ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। চিনসি জেলা বতর্মান হোনান প্রদেশের লোইয়াং। এই জেলার গর্ভনর সাহিত্য পছন্দ করতেন। তিনিও এর আগে ওইয়াং শিওয়ের নাম শুনেছেন। সুতরাং একদিন তিনি ওইয়াং শিওয়ের সম্মানে একটি ভোজসভার আয়োজন করলেন। ভোজসভায় গর্ভনর বললেন: 'উপস্থিত সকলেই পন্ডিত। সুতরাং কবিতা ছাড়া চলবে না।' সে-দিনের ভোজসভায় বেশ কয়েকজন নাম-করা কবি উপস্থিত ছিলেন। তারা একে একে তাদের নিজের রচিত কবিতা পাঠ করলেন। ওইয়াং শিওও একটি কবিতা পাঠ করলেন। ভোজসভার মাধ্যমে কয়েকজন বিখ্যাত কবির সঙ্গে ওইয়াং শিওয়ের পরিচয় হলো। এরপর তারা সবাই ওইয়াং শিওয়ের বন্ধু হয়ে গেলেন। তিনি সময় সময় তাদের সঙ্গে সাহিত্য নিয়ে মতবিনিময় করতেন। এসব বিখ্যাত সাহিত্যিকও ওইয়াং শিওকে খুব পছন্দ করতেন। তারা ওইয়াং শিওকে পরামর্শ দিতেন। এরপর ওইয়াং শিওয়ের লেখা নিবন্ধ আরও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়ে উঠল।

চিনসি জেলায় তিন বছর নিম্নশ্রেণীর কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার পর, ওইয়াং শিও রাজদরবারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু ততোদিনে রাজদরবারে দুর্নীতি দানা বেধে উঠেছে। রাজার আশেপাশের অধিকাংশই ছিল দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা। তখন ফান জন ইয়েন নামে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বেশ কয়েক বার রাজাকে সংস্কার চালানোর প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু রাজা তাকে পছন্দ করতেন না। অবশেষে ইয়েনকেই রাজদরবার ছেড়ে চলে যেতে হয়। তাকে অন্য একটি ছোট জায়গায় নিয়োগ দেয়া হল। তখন রাজদরবারের অন্তত দু'জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিশ্বাস করতেন যে, ফান জন ইয়েন ঠিক কথা বলেছেন। তার কোন ভুল নেই। তারা রাজার সামনে ফান জন ইয়েনের পক্ষে কথা বললেন। কিন্তু শেষমেষ তাদেরও রাজদরবার ছেড়ে চলে যেতে হলো। ওইয়াং শিও ছিলেন একজন সত মানুষ। তিনি এসব সহ্য করতে পারতেন না। চারপাশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও তাকে ঘৃণা করতেন। তারা আড়ালে ওইয়াং শিও সম্পর্কে খারাপ কথা বলতেন। আস্তে আস্তে রাজাও তাকে অপছন্দ করা শুরু করেন। কয়েক বছর পর ওইয়াং শিও রাজদরবার থেকে জুযো জেলায় আসেন। সেখানে তিনি একটি নিম্নশ্রেনীর কর্মকর্তার পদ গ্রহণ করেন।

জুযৌ জেলায় আসার পর ওইয়াং শিও স্থানীয় জনসাধারণের জীবনযাপন প্রণালী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেলেন। তিনি স্থানীয় কৃষি উত্পাদনের ব্যাপারে মাথা ঘামাতেন। অল্প সময়ের মধ্যেই স্থানীয় মানুষেরা তাকে পছন্দ করা শুরু করলো। জুযো জেলার চারপাশে পাহাড়। দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দর। সুতরাং সময় পেলে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার জন্য ওইয়াং শিও বাইরে বেড়াতে যেতেন। পাহাড়ে একটি মন্দির ছিল। মন্দিরের সন্যাসীরাও ওইয়াং শিওয়ের বন্ধু হয়ে গেলেন। সন্যাসীদের মধ্যে বেশ কয়েক জন সাহিত্য পছন্দ করতেন। তারা ওইয়াং শিওয়ের সঙ্গে থাং রাজবংশের কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন। সুতরাং অবসর সময়ে ওইয়াং শিও মন্দিরে এসে সন্যাসীদের সঙ্গে কবিতা লেখার ব্যাপার নিয়ে মতবিনিময় করা শুরু করলেন। পরে তিনি সন্যাসীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছেন। তার এই বইতে বর্ণনা করা হয় যে, এসব সন্যাসীর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের পর কীভাবে তার সাহিত্যের মান উন্নত হয়েছে।

কয়েক বছর পর ওইয়াং শিও আবার রাজদরবারে নিয়োগ পান। এবার তার দায়িত্ব ছিল থাং রাজবংশের ইতিহাস লেখা। তখন থেকে তিনি মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে কবিতা সংস্কারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। পরে তিনি রাজদরবারে একজন পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি বিধান প্রণয়ণ করলেন। তার এই বিধান অনুযায়ী, যারা রাজদরবারের পরীক্ষায় অংশকারীদের অবশ্যই প্রাণবন্ত ও সরল ভাষায় নিবন্ধ লেখায় পারদর্শী হতে হবে। তা ছাড়া, তার মতে, যেসব নিবন্ধে সারর্গত বিষয়বস্তু নেই, সেই নিবন্ধ ভালো নয়। ওইয়াং শিওয়ের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে নিবন্ধ লেখার প্রাচীন রীতি বদলে গেল। তার আমলে অনেক যোগ্য লোক পরীক্ষা দিয়ে রাজদরবারে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

চীনের সোং রাজবংশের সাহিত্যের ইতিহাসে ওইয়াং শিওয়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোং রাজবংশের সাহিত্য ক্ষেত্রে তার লেখা নিবন্ধ ও কবিতাগুলোর প্রভাব প্রবল। তিনি ছিলেন সোং রাজবংশের সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক