Web bengali.cri.cn   
দার্শনিক গল্প: 'বতর্মান সুখ আঁকড়ে ধরুন'
  2013-01-22 19:50:20  cri
রেলগাড়িতে একজন অর্থনীতিবিদের সামনে বসে ছিল এক যুবক। যুবকের মুখে দুশ্চিন্তার ভাব ফুটে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দু’জনের পরিচয় হল। এক পর্যায়ে যুবকটি অর্থনীতিবিদকে বলল: ‘সাত বছর আগে আমি বিয়ে করেছি। আমার একটি ৫ বছরের মেয়ে আছে। আমার স্ত্রী আর আমি একই ক্লাশে পড়াশোনা করতাম। সে ভালো মানুষ। কর্মক্ষেত্রে আমিও যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু এক বছর আগে একটি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে এবং আমি তাকে ভালবাসি।’ ‘এ-পরিস্থিতিতে তুমি কী করবে বলে ঠিক করেছো?’ অর্থনীতিবিদ যুবককে জিঙ্গেস করলেন। ‘আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাই। কিন্তু এখনো এ-ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তাই ভয়ানক দুশ্চিন্তায় আছি।’ ‘দুটোর মধ্যে একটি বাছাই করা সত্যিই সহজ কাজ নয়। এ-নিয়ে তোমার মনে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে তা খুবই স্বাভাবিক।’ এ-কথা বলে অর্থনীতিবিদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন; তারপর বললেন: ‘কিন্তু অর্থনীতির তত্ত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করলে তোমার সমস্যার সমাধান করা যায়। ধরা যাক, তুমি তোমার বসের হয়ে একটি বড় কাজ করলে। এখন তিনি তোমাকে পুরষ্কৃত করতে চান। তিনি তোমাকে দুটো পুরষ্কারের একটি বেছে নিতে বললেন। পুরষ্কার দুটি হচ্ছে: তোমাকে নগদ দুই লাখ টাকা দেয়া হবে; অথবা তিন বছর পর তোমাকে তিন লাখ টাকা দেয়া হবে। তুমি কোনটি নেবে?” ‘অবশ্যই আমি নগদ পুরষ্কারই নেবো’, যুবক কোনোকিছু না-ভেবেই উত্তর দিল। ‘কেন?’ অর্থনীতিবিদ জিজ্ঞেস করলেন। ‘কারণ, ভবিষ্যত অনিশ্চিত। কে জানে কয়েক বছর পর কী ঘটবে? তিন বছর পর আমার বস না-ও থাকতে পারেন। অথবা তিন বছর পর টাকার মূল্যমানও হ্রাস পেতে পারে।” যুবক বিজ্ঞের মতো জবাব দিল। অর্থনীতিবিদ হেসে বললেন: ‘তুমি ঠিকই বলেছ। ভবিষ্যতের টাকার চাইতে বতর্মান টাকার মূল্য অনেক বেশী। ঠিক তেমনি, ভবিষ্যতের সুখের চাইতে বতর্মান সুখের মূল্য বেশী। কেননা, ভবিষ্যত সবসময় অনিশ্চিত। কে জানে ভবিষ্যতে হয়তো সেই সুন্দরী মেয়ে আর তোমাকে ভালোবাসবে না; তোমাদের দু’জনের সুসম্পর্ক তখন না-ও থাকতে পারে। তোমার বর্তমান স্ত্রী সম্পর্কে তুমি জানো; সে তোমাকে ভালোবাসে এবং সে ভালো মানুষ। তাই তোমার উচিত বর্তমানের ওপর ভরসা করা, বর্তমান সুখকে আঁকড়ে ধরা; ভবিষ্যতের সুখের আশায় বর্তমান সুখকে ত্যাগ না করা।” অর্থনীতিবিদের কথা শুনে যুবকের মনের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব একমুহূর্তে দূর হয়ে গেল। সে বলল: ‘আমি পরের ষ্টেশনে নামবো। আমি আমার মেয়েবন্ধুর কাছে যাবো না, যাবো আমার স্ত্রীর কাছে। গোটা বিষয়টি এখন আমার কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমাকে ভালো পরামর্শ দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।” (চিয়াং/আলিম)
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক