Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিয়ে-অনুষ্ঠানে বিশেষ এবং মজার রীতিনীতি
  2013-01-14 19:43:17  cri

চীনের ইতিহাস সুদীর্ঘ, রাষ্ট্রীয় ভুভাগ বিস্তীর্ণ, তাই চীনের বিভিন্ন জায়গায় বিয়ে সম্পর্কিত আচার ও রীতিনীতিও ভিন্ন, তবে মূলবিষয়গুলো প্রায় একই রকম।

প্রাচীন চীনে বিয়ের মোট ছয়টি অনুষ্ঠান আছে, এগুলোর মধ্যে আছে মেয়েপক্ষকে যৌতুক দেওয়া অনুষ্ঠান, বিবাহের বাগদান অনুষ্ঠান, বিয়ের ভোজ ইত্যাদি । অতীতকালে একটি ছেলে যদি এক মেয়েকে পছন্দ করতো, তাহলে তিনি মেয়ের বাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাব করতে ঘটককে পাঠাতেন।

বাংলাদেশে ঘটক কেবল ছেলের পক্ষ থেকে মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যায় তাই নয় বরং মেয়ের পক্ষ হয়েও ছেলের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যায়। আমাদের দেশে ঘটকের প্রধান উদ্দ্যেশ্য হলো ছেলে অথবা মেয়ে উভয়কে একে অন্যের কাছে আকর্ষণীয়, সুদর্শন ও যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করা। আমাদের দেশে পেশাদার এবং শখের এই দুই শ্রেণীর ঘটক দেখা যায়। পেশাদার ঘটক প্রতিটি ঘটকালীর জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করে থাকেন। আর শখের ঘটকালী হচ্ছে যা আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে ঘটকের দায়িত্ব পালন করা।

চীন দেশের ঘটক দু'পক্ষের নাম, বয়স আর পারিবারিক অবস্থা প্রভৃতি তথ্য দু পক্ষকে জানিয়ে দিত । দু পক্ষ মোটামুটি রাজি হলে ঘটক মেয়ে পক্ষের বাড়ীতে ছেলে পক্ষকে যাওয়ার দিন নির্ধারণ করে দিত। ছেলে মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে মেয়েকে দেখা ছাড়া মেয়ের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ও মেয়ের চরিত্র ও মেজাজ-মর্জী যাচাই করে নিতেন। প্রাচীন চীনে বিয়ের আগে মেয়ে ছেলের বাড়ীতে যেত না।

বাংলাদেশে বিয়ের অতীত রীতিনীতি বিষয়ে চীন দেশের সাথে খুব বেশি অমিল নেই। এক্ষেত্রে আমি তোমাকে একটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি- তখন শীতকাল, পিঠা আর টাটকা সবজি খাওয়ার জন্য একবার প্রত্যন্ত এক গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাই। ঘটনাক্রমে সেদিনই ঐ বাড়িতে মেয়ে দেখার জন্য ছেলের পক্ষের লোকজন আসে। সবাই মেয়ে দেখার অপেক্ষা করছে। অবশেষে মেয়েটি শাড়িপড়ে-ঘোমটা দিয়ে এসে দাঁড়াল। ছেলে পক্ষ থেকে তাঁকে হাটতে বললো- মেয়েটি হাটলো, ঘোমটা খুলে চুল দেখাতে বললো- মেয়েটি চুল দেখালো

এরপর একে একে হাসতে বললো, পবিত্র কোরান থেকে কিছু সুরা পাঠ করতে বললো, হাত ও পায়ের নখ দেখাতে বললো আর মেয়েটি একে একে সব কিছু করে দেখালো। অবশেষে ছেলে পক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মেয়ের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিল আর এই পুরো দৃশ্য ছেলেটি উপভোগ করলো এবং তাঁর আত্মীয়দের কাছে বিয়ের সম্মতি প্রকাশ করলো।

বিয়ের দিনে চীনের আরো কিছু মজার রীতিনীতি আছে। যেমন: বিয়ের দিন কনে লাল পোশাক পরে, বর্তমান সময়ে অনেক কনে পাশ্চাত্যের অনুকরণে সাদা রংয়ের লম্বা স্কার্ট পরেন। শ্বশুর বাড়ী যাবার সময় কনেকে কাঁদতে হয়, কেননা সেদিন থেকে মা বাবাকে ছেড়ে মেয়েটি সারা জীবন স্বামীর বাড়ীতে থাকবে। তাইজন্যে বিদায়ের সময় বাবা মাও চোখের জলে বুক ভাসায়। চীনের কোনো কোনো অঞ্চলে স্বামীর ঘরে প্রবেশের আগে কনেকে আগুন জ্বালানো একটি গামলা পার হতে হয়, এই রীতির অর্থ হলো সব অমঙ্গল আগুনে পুড়ে যাক আর নতুন দম্পতির জীবন আগুনের মতো উজ্জ্বল হোক

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও প্রেমোময় দেশগুলোর একটি হচ্ছে ফ্রান্স। তাহলে ফ্রান্সের বিয়ের রীতিনীতি কেমন তা একটু জেনে নেয়া যাক। সাদা রং হল ফ্রান্সের বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রধান রং। সাজগোজের অলংকার, ফুল, কনের কাপড় হোক সবই সাদা রং হতে হবে। কেননা এতে বোঝা যায় ফরাসিদের চোখে বিয়ে হচ্ছে শান্তিময় আর অতি পবিত্র একটি বিষয়।

বিয়ে সর্বদাই পবিত্র হওয়া উচিত। আর তাই পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ-রীতির বিয়ে অনুষ্ঠানে কনে calla ফুল হাতে রাখে। ব্রিটিশদের চোখে এই ফুল সৌভাগের প্রতীক। ব্রিটিশের বিয়ে অনুষ্ঠান সাধারণত দুপুরে আয়োজিত হয়। এদের বিয়ের কেক তৈরীতে হরেক রকম ফল ব্যবহার করা হয়। এবং এ কেকটিকে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয়।

ব্রিটেনের এক দম্পতি যারা ২০১১ সালের জুন মাস থেকে চাকরি ছেড়ে সব সম্পত্তি বিক্রি করে বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছে শুধু বিভিন্ন দেশের রীতি ও আচার অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা আর তা উপভোগ করার জন্য। তাদের পরিকল্পনা হল বিশ্বের ৫০টি স্থানে স্ব স্ব সামাজিক রীতি ও প্রথা অনুসারে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা। তাদের প্রথম বিয়ের অনুষ্ঠান ব্রিটেনের ম্যাচেস্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁরা কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, তাঁরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের সার্টিফিকেট পায় নি। রোমান্টিক এই দম্পতির পরিকল্পনামতে ২০১৪ সালে ৫০তম বিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা এবং এরপর তাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা নির্বাচন করে সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করবে এবং বিয়ের সার্টিফিকেট গ্রহণ করবে।

এদের তুলনায় জার্মানিদেরকে কিছুটা উন্মাদ মনে হতে পারে। যদিও অনেকের ধারণা জার্মানিরা খুব শান্ত প্রকৃতির। তাদের বিয়েতে এক ধরনের বিশেষ পার্টি আয়োজন করা হয়। আর এই পার্টি বর ও কনেকে কেন্দ্র করে নানা রকম মজা তৈরী করা হয়। আর এসবের মধ্যে সবচেয়ে মজার একটি হচ্ছে নাচতে নাচতে আনন্দের সাথে থালা বাসন আছড়ানো। আবার আর একটি পর্যায়ে যদি স্বামী স্ত্রীকে দেখতে চায়, তাহলে স্ত্রীর বন্ধুকে টাকা দিতে হয়। যেন এক রকমের ঘুষ দেয়া। নইলে দেখার অনুমোদন দেবে না তারা।

গ্রীসের বিবাহ রীতিনীতিকে খুব সুস্বাদু একটি মিষ্টি-রীতি বলতে পারো। কারণ গ্রীসের কনেরা নিজের হাতমোজার ভিতরে কিছু মিষ্টি ক্যান্ডি রাখে। মোজার মধ্যে ক্যান্ডি রাখার একমাত্র এবং প্রধান কারণ হচ্ছে নিজের বিবাহ জীবনকে আরো মিষ্টিময় করে তোলা। এ ছাড়াএ গ্রীসেরা ঐতিহ্যবাহী রাউন্ড ডান্সের গোলাকার নৃত্যের মাধ্যমে অতিথিদের অভ্যর্থনা করা হয়।

রাশিয়ার বিবাহ অনুষ্ঠানে যে শব্দ সবচেয়ে বেশি শোনা যায়, তা হল "তিক্ত"। অনুষ্ঠানে যদি কেউ উচ্চস্বরে বলে: তিক্ত, তিক্ত, তাহলে সবাই একসাথে তিক্ত বলবে, এসময় স্বামী ও স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে চুমো খেতে হয়। এরপর যতবার অতিথি মধ্যথেকে উচ্চস্বরে তিক্ত, তিক্ত বলা হবে ততোবার দম্পতিকে মিষ্টি চুমো দিয়ে অতিথিদের প্রতি সাড়া দিতে হবে। অন্তত দশ-বারো বার চুমো খেলে তবেই অতিথিগণ সন্তুষ্ট হয়। কারণ রুশ জনগণের ধারণা, স্বামী-স্ত্রীর চুমো মদের তিক্ততাকে মিষ্টি করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক