Web bengali.cri.cn   
চীনের দ্রুতগতি রেলপথ
  2013-02-08 15:32:30  cri

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের দীর্ঘতম দ্রুতগতির রেললাইন পেইচিং-কুয়াং চৌ রেলপথ চালু হয়েছে। এ রেলপথ দিয়ে পেইচিং থেকে কুয়াং চৌ যেতে সময় লাগে মাত্র ৭ঘন্টা ৫৯ মিনিট।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পেইচিং-থিয়ান চিন রেলপথের মধ্য দিয়ে চীন প্রথম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণে নিজের মেধাস্বত্ব অধিকার অর্জন করে। এরপর হার্বিন-তা লিয়ান রেলপথ চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে চীনের দ্রুতগতির রেল প্রথম হাড়কাঁপানো শীত অঞ্চলে প্রবেশ করে। কয়েক বছরে চীনের দ্রুতগতির রেলখাতে অতি দ্রুত উন্নয়ন এসেছে। আজকের অনু্ষ্ঠানে আমরা চীনের দ্রুতগতির ট্রেন নিয়ে কথা বলব।

পেইচিং-কুয়াং চৌ দ্রুতগতির রেললাইন পেইচিং থেকে শুরু হয়ে সি চিয়া চুয়াং, চেং চৌ, উ হান ও ছাং সার মধ্য দিয়ে কুয়াং চৌ পৌঁছেছে। এ রেলপথের দৈর্ঘ্য ২২৯৮ কিলোমিটার। এটি পেইচিং-থিয়ান চীন-হে পেই অর্থনীতি অঞ্চল, চু চিয়াং নদীর বদ্বীপ অঞ্চল ও হংকংকে সংযুক্ত করেছে। এ রেলপথ বরাবর ৬টি প্রদেশের কয়েক কোটি মানুষের জীবন এবং নগরের অর্থনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে পেইচিং-কুয়াং চৌ রেলপথ। এ রেললাইনে ট্রেনের গতি ঘন্টায় ৩০০ কিলোমিটার। এ ট্রেন দিয়ে মাত্র ৭ ঘন্টা ৫৯ মিনিটে পেইচিং থেকে কুয়াং চৌ পৌঁছানো যায়। আগের রেল সার্ভিসের চেয়ে এতে সময় লাগবে সাড়ে ১২ ঘন্টা কম।

গ্রীষ্মকালীন ছুটি, জাতীয় দিবসের ছুটি এবং বসন্ত উত্সবের ছুটির সময় পেইচিং-কুয়াং চৌ রেলপথ যাত্রী পরিবহণের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে। বিমান ভ্রমণে দ্রুতগতিতে গন্তব্যে যাওয়া গেলেও যাত্রাপথের দৃশ্য দেখা যায় না, কিন্তু এমন রেলপথে দ্রুতগতি গন্তব্যে পৌঁছানোর সাথে সাথে পাশের দৃশ্যও উপভোগ করা যায়। চীনের দক্ষিণাঞ্চলের যে সব নাগরিক শীতকালে বরফ উপভোগ করতে উত্তরাঞ্চলে যান এবং উত্তরাঞ্চলের যে সব নাগরিক শীতকালে দক্ষিণাঞ্চলের ফুল উপভোগ করতে যান, তাদের জন্য এ নতুন রেল লাইন খুবই সহায়ক হয়েছে। জানা গেছে, পেইচিং-কুয়াং চৌ রেলপথ যে ৮টি প্রদেশের ৩১টি শহর অতিক্রম করেছে, তারা একটি পর্যটন প্রচারণা ইউনিয়ন গঠন করবে এবং পেইচিং-হংকং-ম্যাকাও পর্যটন ও অবকাশ শিল্প গড়ে তুলবে।

পেইচিং-কুয়াং চৌ রেলপথ এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্যও সহায়ক হবে। বর্তমানে চীনের এক্সপ্রেস ডেলিভারির ৮০ শতাংশ গাড়িতে এবং ১৫ শতাংশ বিমানে বহন করা হয়। একটি এক্সপ্রেস ডেলিভারি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, দ্রুতগতির রেলসেবার মাধ্যমে বিমানের চেয়েও তাড়াতাড়ি পণ্য স্থানান্তর করা সম্ভব হয়, অথচ পরিবহণ ব্যয় কম হয় ৫০ শতাংশ। আর আবহাওয়ার কারণে পরিবহণ বিঘ্নিতও হয় কম।

আগের যেসব রেলের গতি ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার বা তার বেশি ছিল এবং নতুন যেসব রেলের গতি ঘন্টায় আড়াই শ' কিলোমিটার বা তার বেশি সেগুলোকে দ্রুতগতির ট্রেন বলা হয়। গত বছরের শেষ নাগাদ চীনে দ্রুতগতির রেললাইনের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১০ হাজার কিলোমিটারে। এছাড়া ১৭ হাজার কিলোমিটার দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণাধীন রয়েছে। চীনের রেল নেটওয়ার্কের বিস্তৃতির মাত্রা ও গতি বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। উপ-রেলমন্ত্রী সুন ইয়ং ফু বলেন, ২০২০ সালে চীনের দ্রুতগতির রেললাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২০ হাজার কিলোমিটার এবং সব প্রদেশের রাজধানী ও শহর রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ছিন হয়াং তাও-সেন ইয়াং যাত্রীবাহী রেলপথ চীনের প্রথম দ্রুতগতির রেললাইন। দশ বছর ধরে চীনের দ্রুতগতির রেলপথ দ্রুত উন্নয়ন অর্জন করে। বর্তমানে চীন কেবল গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিই অধিকার করে না, উন্নত একটি দ্রুতগতির রেলপথের মান ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে দেশটি। চীন হলো ৩০০ কিলোমিটার গতির রেলপ্রযুক্তি অর্জনকারী চতুর্থ দেশ। বর্তমানে চীনের দ্রুতগতির রেলপ্রযুক্তি বিদেশি বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়া, ব্রাজিল ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ এ ব্যাপারে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।

(সংগীত)

প্রিয় শ্রোতা, এখন আমি চীনের কয়েকটি বৈশিষ্টপূর্ণ দ্রুতগতির রেলপথ সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরবো।

বিশ্বের সর্বোচ্চ শীতাঞ্চলীয় রেলপথ

গত ডিসেম্বরে চালু হার্বিন-তালিয়ান রেলপথ চীনের তথা বিশ্বের প্রথম দ্রুতগতির রেললাইন, যা হাড়কাঁপানো শীত অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। উপকূলীয় শহর তা লিয়ান থেকে হে লং চিয়াং প্রদেশের রাজধানী হার্বিনে পৌঁছেছে এ রেলপথ। ৯২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ রেললাইন চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি প্রদেশ অতিক্রম করেছে।

চীনের প্রথম নিজস্ব মেধাস্বত্বের দ্রুতগতির রেলপথ

২০০৮ সালের আগস্টে চালু পেইচিং-থিয়ান চিন রেলপথ হলো চীনের প্রথম দ্রুতগতির রেললাইন, যার মধ্য দিয়ে চীন নিজস্ব মেধাস্বত্ব অর্জন করে। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ রেলপথে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৪৯৫ কিলোমিটার হলেও সাধারণত ট্রেন চলাচল করে ৩০০-৩৫০ কিলোমিটার গতিতে। এ ট্রেনে পেইচিং থেকে থিয়ান চিন যেতে মাত্র ৩০ মিনিট লাগে। পেইচিং-থিয়ান চিন দ্রুতগতির রেলপথের সাহায্যে এ দু'টি বড় নগরের মধ্যে একটি '৩০ মিনিট পরিবহন বৃত্ত' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ রেলপথ ট্রেনের গতি, জ্বালানি সাশ্রয় ও অর্থনৈতিক ফলপ্রসূতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম স্থান অর্জন করে।

পেইচিং-শাংহাই দ্রুতগতির রেলপথ

পেইচিং-শাংহাই দ্রুতগতির রেলপথ চালু হয় ২০১১ সালে ৩০ জুন। এ রেললাইন পেইচিং দক্ষিণ রেলস্টেশন থেকে শাংহাই হং ছিয়াও স্টেশনে পৌঁছেছে। ১৩১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২২০.৯ বিলিয়ন ইউয়ান। নকশা অনুযায়ী এ রেলপথে ট্রেনের গতি ঘন্টায় সাড়ে তিন শ' কিলোমিটার হলেও ট্রেন চলে সাধারণত ৩০০ কিলোমিটার গতিতে। এ পথে পেইচিং থেকে শাংহাই যেতে সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। পেইচিং-শাংহাই রেলপথ চালু হওয়ার পর বো হাই সাগর ও ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ - এ দুই অঞ্চল এবং তার আশপাশ অঞ্চলের মানুষ, পণ্য, তথ্য ও অর্থের মধ্যে বিনিময় বেড়েছে দ্রুত গতিতে এবং সেখানকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক