Web bengali.cri.cn   
প্রসঙ্গ:খাদ্যনালীর ক্যান্সার ও তার চিকিত্সা
  2012-12-19 14:21:20  cri

প্রিয় শ্রোতা,আপনি জানেন কি খাদ্যনালীর ক্যান্সার কী ধরনের ক্যান্সার?এটি খাদ্যনালীর এপিথেলিয়ামের একধরনের মারাত্মক ক্যান্সার। প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ২ লাখ মানুষ খাদ্যনালীর ক্যান্সারে মারা যায়। যেসব দেশের মানুষ এ-ধরনের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়, চীন সেগুলোর মধ্যে প্রথম। চীনে পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্তদের পরই খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্তদের সংখ্যা সবচে বেশি। তা ছাড়া, এ-ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে: মানুষ কেন খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়? এর কী কী লক্ষণ আছে? কীভাবে এর প্রতিরোধ করা যায় বা কিচিত্সা করানো যায়? আজকের 'স্বাস্থ্যের সন্ধানে' আসরে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আমি চুং শাওলি।

চীনারা গরম খাদ্য খেতে পছন্দ করেন; যেমন, গরম চা, গরম কফি, গরম ডাম্পলিং বা গরম নুডল্স। এদিকে, গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, অতিরিক্ত গরম খাদ্যের সাথে খাদ্যনালীর ক্যান্সারসহ বেশকিছু হজমনালী ব্যাধির সম্পর্ক নিবিড়।

খাদ্যনালীর ক্যান্সার হয় খাদ্যনালী এপিথেলিয়ামে। চীনের ১.৬৭ লাখসহ প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৩.১ লাখ লোক এ-রোগে আক্রান্ত হয়। রোগটিতে আক্রান্তদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে চীনের স্থান প্রথম। সাধারণত ৪০ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে এবং মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে রোগটি বেশি হয়। গত কয়েক বছর ধরে চল্লিশের কম বয়সীরাও ক্রমাগতভাবে রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। চীনের যে-অঞ্চলগুলোতে খাদ্যনালী ক্যান্সার বেশি হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর চীন, চিয়াংসু প্রদেশের উত্তরাঞ্চল, চেচিয়াং প্রদেশের পূর্বাঞ্চল, ফুচিয়েন ও চিয়াংসি প্রদেশ এবং কুয়াংতুং প্রদেশের ছিয়াও-ছান এবং মেইচৌ অঞ্চল। হোনান প্রদেশের লিনচৌ শহরে ৩৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে খাদ্যনালী ক্যান্সারে আক্রান্তের হার লাখে ৪৭৮.৯। অথচ বিশ্বে প্রতি লাখে এ-রোগে আক্রান্তের হার গড়ে ২১ জন। খাদ্যনালীর ক্যান্সার কেন হয়? এ-সম্পর্কে ডাক্তার চাং সিয়াওতুং বলেন, নানা কারণে খাদ্যনালীর ক্যান্সার হতে পারে, যেমন: খাদ্যনালীর ঝিল্লি ক্ষয়,বংশগত কারণ এবং পচা খাদ্য গ্রহণ। এগুলোর মধ্যে কোনটির ভূমিকা প্রধান? আসলে ভিন্ন শরীরে ভিন্ন উপাদান প্রধান ভূমিকা পালন করে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,কোনো কোনো উপাদানের দীর্ঘকালীন উপস্থিতি বা খাদ্যের মধ্যে 'ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এমন পদার্থ' বিশেষ করে নাইট্রাটি পদার্থের অতিরিক্ত উপস্থিতি খাদ্যনালীর ক্যান্সারের মূল কারণ হতে পারে। পাশাপাশি, খাদ্যের মধ্যে ক্ষুদ্র উপাদান এবং মলিবডেনাম,দস্তা,সিলিনিয়মসহ নানা খনিজপদার্থের অভাব,মদ্যপান, ধূমপান,জিনের আকস্মিক পরিবর্তন এবং বংশগত কারণেও খাদ্যনালী ক্যান্সার হতে পারে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে,৯৫ শতাংশ খাদ্যনালী ক্যান্সার ৫০ বছরের বেশী বয়সীদের মধ্যে ঘটে। কাচা, ঠান্ডা ও শক্ত খাদ্যের ভূমিকা ছাড়া অতিরিক্ত কড়া মদ খাওয়াও ক্যান্সারটির প্রধান কারণ। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা থেকে জানা গেছে, বেশিরভাগ খাদ্যনালী ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মদ্যপানের ইতিহাস আছে। গবেষণা থেকে জানা যায়, ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা এর কম তাপমাত্রার চা খাওয়া লোকদের তুলনায় গরম চা অর্থাত ৬৫-৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপের চা খাওয়া লোকদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্তের হার দ্বিগুণেরও বেশি। অল্প গরম বা ঠান্ডা চা যারা পান করেন, তাদের তুলনায় খুব গরম চা অর্থাত কমপক্ষে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার চা যারা পান করেন তাদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৮ গুণেরও বেশি। গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, অতিরিক্ত গরম তরল পদার্থ গলবিলের এপিথেলিয়াম ক্ষয় এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে । খাদ্যনালী ক্যান্সারের চিকিত্সাপদ্ধতি শল্যচিকিত্সা এবং রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপিসহ অ-শল্যচিকিত্সায় বিভক্ত। শল্যচিকিত্সা খাদ্যনালী ক্যান্সার চিকিত্সার প্রথম পদ্ধতি। রোগীদের বিভিন্ন অবস্থা অনুযায়ী ক্যান্সারটির বহুমুখী চিকিত্সা করানো দরকার । এ-সম্পর্কে ডাক্তার চাং বলেন, বহুমুখী চিকিত্সা করানোর আগে রোগীর অবস্থাকে সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে এবং তারপর সে-অনুযায়ী বহুমুখী চিকিত্সা করাতে হবে। যথেচ্ছা চিকিত্সা করানো উচিত নয়।

ডাক্তার চাং বলেন, যে-দেশগুলোয় খাদ্যনালী ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেশি, চীন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদেশের গ্রামাঞ্চলের রোগীরা সাধারণত হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য আসেন রোগের মধ্য বা শেষ পর্যায়ে। কারণ, রোগটিতে আক্রান্ত হবার প্রথম দিকে রোগীর শরীরে ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ রোগী রোগাক্রান্ত হবার পর আরো ৫ বছর জীবিত থাকতে পারেন। তবে, প্রথম দিকে চিকিত্সা নিলে, পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকাদের হার ৭০ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। সুতরাং আগে সনাক্ত করা,আগে চিহ্নিত করা এবং আগে চিকিত্সা করানো দরকার। কিন্তু প্রথম দিকে লক্ষণ তেমন স্পষ্ট নয় বলে ডাক্তার চাং বলেন: যাদের হজমনালীর রোগের লক্ষণ আছে,যাদের খাদ্যনালী ক্যান্সার ও পাকস্থলী ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, যাদের খাদ্যনালী বা পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ হয়, এবং যারা অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান করেন ও যারা দীর্ঘকাল ধরে পচা খাদ্য খেয়ে আসছেন---তাদের সবার উচিত খাদ্যনালী ক্যান্সারের পরীক্ষা নিয়মিতভাবে করানো। যেসব রোগীর খাদ্যনালীতে প্রদাহ হয় বা খাদ্য গ্রহণের সময় কষ্ট হয় বা গলা ব্যথা হয় বা খাদ্যনালীতে ভিন্ন জিনিস অনুভূত হয়---তাদের উচিত খাদ্যনালী ক্যান্সারের পরীক্ষা করানো।

দৈনিক খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর উচিত একবারে কম খাওয়া এবং বার বার খাওয়া এবং শুরুতে তরল খাদ্য দিয়ে শুরু করে ধাপে ধাপে শক্ত খাবার যেমন ভাত বা রুটি খাওয়া। তা ছাড়া, খেতে হবে ধীরে ধীরে ও চিবিয়ে চিবিয়ে। খাদ্যনালী ক্যান্সার রোগীকে শল্যচিকিত্সার পর নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করাতে হবে। শেষ পর্যায়ের রোগীর খাদ্য সম্পর্কে ডাক্তার চাং বলেন,এ-ক্ষেত্রে রোগীকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে হবে। লবণাক্ত,তেলে ভাজা বা বার্বি কিউ জাতীয় খাবার কম খেতে হবে ।

ডাক্তার চাং সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, "অতিরিক্ত ধূমপান করবেন না, মদ খাবেন না,অতিরিক্ত গরম খাদ্য খাবেন না, মাংস বেশি খাবেন না। মাছ ও চিংড়ি বেশি খেতে পারেন। লবণাক্ত মাংস কম খাবেন। পচা চাল,ময়দা ও বাদাম খাবেন না। রান্নার আগে চাল পরিস্কার করে নিন। জমিয়ে রাখা পানি ২-৩ দিন পরপর পরিবর্তন করুন। মিষ্টি আলুসহ ভিটামিনসম্পন্ন খাদ্য বেশি খান। টাটকা নয় বা পচা-- এমন সব্জি ও ফল খাবেন না । রোস্ট করা মাছ ও মাংস কম খাবেন। তরকারি রান্নার সময় তেল বেশি ব্যবহার করবেন না । গবেষণা থেকে জানা গেছে,স্তন ক্যান্সার,বৃহদন্ত্র ক্যান্সার ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার খাদ্যের সাথে গ্রহণ করা চর্বির পরিমাণের সাথে সম্পর্কিত।"

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক