Web bengali.cri.cn   
মিয়ানমারের রাজনীতিতে প্রভাব বাড়ছে সু চির
  2012-12-18 18:21:42  cri

মিয়ানমারের তামাখনিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি অভিযানের ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত কমিশনের প্রধান হিসেবে দেশটির বিরোধীদলীয় নেত্রী অং সান সু চিকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। এতে দেশটির রাজনীতিতে সু চির প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। মনিওয়া এলাকায় অবস্থিত ওই তামাখনিতে গত সপ্তাহে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

সু চির নেতৃত্বে তদন্ত হলে তা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ৩০ সদস্যের ওই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। সামরিক বাহিনী ও চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানাধীন তামাখনিটি চালু রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবে তদন্ত কমিশন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রতি ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন দায়িত্বের ব্যাপারে সু চি এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের উদ্দেশে তিনি এর আগে বলেন, দেশের স্বার্থেই খনি প্রকল্পটি চালু রাখতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগও অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। বিগত সরকার চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে, তার প্রতি সম্মান দেখানো যেতে পারে।

প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হতে চায়। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি। সাবেক সামরিক জান্তার আমলে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন তিনি। বর্তমান বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে মুক্তি দেয়। তিনি ইতিমধ্যে পার্লামেন্ট উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া দেশটিতে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই পদের জন্য থেইন সেইন এবং পার্লামেন্ট স্পিকার শোয়ে মানও লড়াই করবেন। একজন বিদেশি নাগরিকের স্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সু চিকে সাংবিধানিক বাধার মুখে পড়তে হবে। তাই প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সু চিকে সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের সমর্থন পেতে হবে। কারণ, দেশটির পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ এখনো ওই কর্মকর্তাদের দখলে রয়েছে।

সু চি কয়েক মাস ধরে সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোনো অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। এমনকি পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সহিসংতার ঘটনায় সু চির অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এতে দেশ-বিদেশে তাঁর সমর্থকদের অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে সু চি একাধিকবার বলেছেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। তাঁর সহযোগীরা 'রোহিঙ্গা' শব্দটির পরিবর্তে 'বাঙালি' শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। মিয়ানমার সরকারও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে বিবেচনা করে।

মনিওয়া তামাখনিতে পুলিশি অভিযানে কয়েকজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীসহ অন্তত ২৫ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছিলেন। স্থানীয় লোকজন ওই খনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, সাবেক সামরিক সরকারের আমলে ওই খনি প্রকল্পের জন্য বেআইনিভাবে স্থানীয়দের ভূমি দখল করা হয়েছে। তা ছাড়া খনি প্রকল্পে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

খনি এলাকায় বিক্ষোভে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে ইয়াঙ্গুনসহ বড় বড় অন্য শহরে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সমবেত হন। দেশটির প্রভাবশালী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ২০০৭ সালেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক