Web bengali.cri.cn   
প্রসঙ্গ:স্বাস্থ্য ও খাদ্যের সম্পর্ক
  2012-11-14 18:49:11  cri

প্রিয় শ্রোতা,চীনারা প্রায়ই বলে থাকেন যে,মানুষ হল লোহা, আর খাদ্য হল ইসপাত; একবেলা না-খেলে ক্ষুধা লাগে। এথেকে খাদ্যের সাথে মানুষ বা স্বাস্থ্যের সম্পর্ক বোঝায়। কিন্তু আজকাল জীবনযাপনের মান উন্নতির সাথে সাথে মানুষ শুধু কীভাবে পেটপুরে খেতে পারবে, এমন চিন্তায় বুঁদ হয়ে আছে তা কিন্তু নয়। এখন কী খাবে এবং কীভাবে খাবে—তার ওপরই প্রায় সবাই গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে: আমরা কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করবো এবং কীভাবে গ্রহণ করবো? আজকের'স্বাস্থ্যের সন্ধানে'আসরে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেস্টা করব, আমি চুং শাওলি। চীনে প্রবাদ আছে: মানুষ খাদ্যকে তাদের আকাশ অথবা প্রথম চাহিদা হিসেবে গণ্য করে থাকে। কিন্তু কী বা কীভাবে খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে-- তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমেই প্রয়োজন তিন বেলার খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করা। প্রতিদিন যতো বেশি ধরনের খাদ্য খেতে পারবেন, ততোই ভালো। দিনে পনের ধরনের বেশি খাদ্যদ্রব্য খেতে পারলে সবচে ভালো। কারণ, খাদ্যের ধরণ যতো বেশি হবে, পুষ্টির ভারসাম্যও তত বেশি ঠিক থাকবে বা থাকার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

দ্বিতীয়ত, মন চাইল আর খেয়ে ফেললাম—এমনটা করা চলবে না। ডাক্তার লিউ তুংলি বলেন, "অনেকে মনে করেন, আমি যেটা খেতে চাই বা পছন্দ করি, আমার শরীরের জন্য সেটাই প্রয়োজন। তাই তারা নিয়ন্ত্রলহীনভাবেযথেচ্ছা খেয়ে যান। এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। কারণ, মানুষের খাওয়ার রুচি শুধু নির্দিষ্ট সময়ের পুষ্টি সম্পর্কে দৈহিক চাহিদা প্রকাশ করে।" আর্থিক সমস্যার কারণে একসময় স্রেফ পেট ভরানোটাইএক নম্বর সমস্যা ছিল। এখন সে সমস্যা নেই। এখনকার মানুষ স্বাভাবিক মাছ-মাংসসহ উচ্চ প্রোটিন ও উচ্চ চর্বিযুক্ত খাদ্য খাওয়ার সামর্থ্য রাখে এবং খেতে পছন্দওকরে। আজ আমাদের আর্থিক অবস্থা অনেক ভাল হয়েছে । এখন আমাদের খাবারের টেবিলে মাছমাংসসহ নানা দামি দামি খাদ্যের অভাব নেই । মানুষের শরীরে সহজে ভিটামিন ও খনিজপদার্থের অভাব হয় । অথচ মানুষের শরীর পুষ্টির অভাব এবং অতিরিক্ত ক্যালরি ও কোলেস্টরেলেরউপস্থিতি অনুভব করতে সক্ষম নয় । যদি শুধু খাওয়ার রুচি এবং 'যেটা খাওয়ার ইচ্ছা হয় তা খান ' –এ পুরানো অভ্যাস অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা হয়, তাহলে সহজেই শরীরে পুষ্টিরভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে, খেতে পছন্দ করেন এমন লোকেরা সহজে হৃদ ও মস্তিষ্ক রক্তনালী রোগ, বহুমূত্ররোগ এবং স্থূলতা রোগসহ বেশ কয়েকটি আধুনিক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ-সম্পর্কে ডাক্তার লিউ বলেন,"সত্যিই বেশ কিছু রোগ খাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। অতিরিক্ত চর্বি ও প্রোটিনযুক্ত খাদ্য খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ওজন দ্রুত বেড়ে যায়, শরীরের ভেতরে চর্বিজমে যায় এবং আমরা উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টরেলে আক্রান্ত হই। সুতরাং বিজ্ঞানসম্মতভাবে খাদ্য গ্রহণের ওপর গুরুত্ব না-দিলে কঠিন রোগ হতে পারে।" যথাযথ পরিমাণে প্রাণীজচর্বি গ্রহণ করা মানবদেহের জন্য প্রয়োজন। এর জন্য যথাযথ ও উপযুক্তভাবে খাদ্য গ্রহণ করা দরকার। তা ছাড়া, খাদ্যের মধ্যে যে পুষ্টিগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটা পরস্পরের পরিপূরক এবং কোনো কোনোটা পরস্পরের পরিপন্থী। তাই খাদ্য বেছে নেয়ার সময় খাদ্যগুলোর মধ্যকার সম্পর্কও বিবেচনায় রাখতে হবে। নইলে পুষ্টি ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। বলাবাহুল্য দিনে তিনবেলায় যে খাদ্য গ্রহণ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। গ্রহন করা খাদ্যের ক্যালরির কথা ধরা যাক। সকালে এবং বিকেলে আলাদাভাবে দৈহিক প্রয়োজনের ৩০ শতাংশ এবং দুপুরে ৪০ শতাংশ ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে চীনারা বলে: সকালে ভাল করে খান,দুপুরে পেট ভরে খান এবং রাতে কম খান। নাস্তা না-খাওয়া বা রাতে অতিরিক্ত খাওয়া---দুটোই মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ আজকাল খাদ্য নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। খাদ্য বেছে নেয়ার সময় উন্নত মান এবং টাটকা খাদ্য, ফল ও সব্জি বেছে নিতে হবে। পচা বা টাটকা নয় এমন খাদ্য গ্রহণ করবেন না। ডাক্তার লিউ বিশেষভাবে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, প্রাণীদেহের বেশিরভাগ অংশই খাওয়া যায়; তবে কিছু অংশ কিছুতেই খাওয়া উচিত নয়; খেলে আপনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন, শুকর, গরু ও ছাগল বা ভেড়ার দেহের গলগ্রন্থি, বৃক্কগ্রন্থি এবং লিমফ গ্রন্থি। কিছু বিশেষ রোগীর জন্য বিশেষ খাদ্যতালিকা তৈরী করা দরকার । যেমন, বহুমূত্র রোগীদের পক্ষে সাধারণ মানুষের পুষ্টি মানদন্ড অনুযায়ী খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করলে চলবে না। এসম্পর্কে ডাক্তারলিউ বলেন,"স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বহুমূত্র রোগীর সব্জি গ্রহণেরপরিমাণ অনেক বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু চর্বি গ্রহণের পরিমাণ অনেক কম হওয়া উচিত। কারণ, বহুমূত্ররোগীর রক্তে শর্করা বেশি হলে ভয়ের ব্যাপার নয়। ভয়ের ব্যাপার হল রক্তে শর্করা উচ্চ হওয়ার পর সৃষ্ট নানা জটিলতা । গুরুতর হলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই অল্প চর্বি গ্রহণনিশ্চিত করার পাশাপাশি, কীভাবে স্বাভাবিক প্রাণীপ্রোটিন গ্রহণ নিশ্চিত করা যায়?এ সম্পর্কে ডাক্তার লিউ বলেন, "মাছের প্রোটিন এক ঘন্টার মধ্যে শরীর গ্রহণকরতে পারে,এর গ্রহণ-হার ১০০ শতাংশ। কিন্তু গরুর মাংসের প্রোটিন শরীর তিন ঘন্টার মধ্যে গ্রহণকরতে পারে। সুতরাং মাছ বৃদ্ধবয়সী বিশেষ করে রোগাদের জন্য প্রযোজ্য; মাছের চেয়ে চিংড়ি ভাল । মাছ ও চিংড়ি যতই ছোট ততই ভাল এবং খেলে গোটা মাছ খান । কারণ ছোট মাছ ও চিংড়ির মাথা ও পেটে যে সক্রিয় পদার্থ আছে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।" ডাক্তার লিউ বিশেষভাবে বলেন, "খাদ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খাওয়ার সময়ে পেট ৭০ শতাংশ ভরলে এবং বাকি অংশ খালি রাখলে সারা জীবনে পাকস্থলীর রোগ হবে না।" খাদ্যের অনুপাত সম্পর্কে ডাক্তার লিউ বলেন,"চীনা নাগরিকদের খাদ্যতালিকা সম্পর্কে চীন পুষ্টি সমিতির প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, দৈনদিন খাদ্যতালিকার মধ্যে ফল থাকতে হবে অর্থাত প্রতিদিন সবার উচিত সব্জির সাথে ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম ফল খাওয়া। সব্জির কথা বলতে তিনি বিশেষভাবে টমেটোর কথা উল্লেখ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতিটিপরিবার টমেটো চাষ করে এবং টমেটো খায়। এর উদ্দেশ্য হল ক্যান্সার প্রতিরোধ করা। ডিমের সাথে টমেটো ভাজা করা তরকারির পুষ্টি বেশি। টমেটোর স্যুপ বা টমেটো ও ডিমের স্যুপও পুষ্টিকর। রসুন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে না; কিন্তু garlicin ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু এর জন্য প্রথমে রসুনকে পাতলা পাতলা করে কাটতে হবে এবং রসুনের টুকরাকে খোলা অবস্থায় বাতাসের মধ্যে রাখতে হবে। ১৫ মিনিটের মধ্যে garlicin সৃষ্টি হয় এবং এ-সময়ে তা খেলে, ক্যান্সার প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। ডাক্তার লিউ জানান, নাসপাতি ফুসফুসের জন্য ভাল। আপেল উদরাময় রোধ করতে পারে এবং পুষ্টিকর। শশা দৈহিক ওজন কমাতে সহায়ক । kiwi ফল ক্যান্সার রোধ করতে পারে। টমেটো রক্তের স্বল্পতা পূরণ করতে এবং সৌন্দর্য রক্ষা করতে পারে। সেলারি উচ্চ রক্তচাপের চিকিত্সায় কার্যকর। চীনা বাঁধাকপি মূত্রত্যাগ ও বিষ নির্গমনেসহায়ক এবং ফুলকপি খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক