Web bengali.cri.cn   
চীনা যুব স্বেচ্ছাসেবক ছাং ই
  2012-10-08 15:10:48  cri

সি আর আইর সাংবাদদাতা শিশির ও ছাং ই

গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা চীনা স্বেচ্ছাসেবক ছাং ই এক দিনেরও বিশ্রাম না নিয়ে শাংহাই থেকে পেইচিংয়ে আসেন। নিদ্রাহীনযাত্রাপথে অত্যন্ত ক্লান্ত হলেও ছাং ইয়ের মুখে লেগে আছে মৃদু হাসি। ছয় মাস ধরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বাংলাদেশে তিনি কাজ করেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে থাকা সত্ত্বেও তাঁর স্বেচ্ছাসেবার অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে। তিনি সি আর আই সংবাদদাতার কাছে তার সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন: 'স্বেচ্ছাসেবকের কাজ আমার পেশা নয়, আমি এ কাজকে জীবনের পুষ্টিসাধনের একটি উপায় বলে মনে করি। বর্তমানে বড় বড় শহর বিশেষ করে শাংহাই ও পেইচিংয়ের কিছু যুবকযুবতী ভবিষ্যত সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। আমি মনে করি, স্বেচ্ছাসেবকের কাজ আমার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। গণসেবার প্রক্রিয়ায় শুধু ব্যক্তিগত সামর্থ্য নয়, আমার মানসিক উন্নতি জোরদার হতে পারে।"

ছাং ই শাংহাই ফু তান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগ থেকে স্নাতক হন। একটি বিদেশি স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার প্রস্তাব গ্রহণ করে তিনি কম্পিউটার প্রযুক্তি বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বান্দরবনের পাহাড়ি অঞ্চলে কাজ করতে যান। বাংলাদেশ যাওয়ার আগে এ দেশ সম্পর্কে ছাং ই তেমন কিছুই জানতেন না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন,

"বাংলাদেশকে জানার জন্য আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক তথ্য সংগ্রহ করি। তবে বাংলাদেশ যাওয়ার পরই আমি শুধু গভীরভাবে এ দেশকে জানতে পেরেছি।"

বাংলাদেশ পৌঁছার পর ছাং ই ও অন্যান্য দেশের স্বেচ্ছাসেবকরা রাজধানী ঢাকায় এক মাসের প্রশিক্ষণ নেন। বাংলা ভাষা শেখা ছাড়া তাঁদের গণসেবার প্রক্রিয়াও জেনে নিতে হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই তাদের ব্যস্ত দিন শুরু হয়। খাবার ও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারার কারণে বাংলাদেশে থাকার প্রথম কয়েক মাসে দৈনন্দিন জীবনে তাঁকে যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করতে হয়। বান্দরবন বাংলাদেশের তিনটি পাহাড়ি জেলার অন্যতম। সেখানকার ভাষা ও ধর্ম বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা । এ সম্পর্কে ছাং ই বলেন:

"এ পাহাড়ি অঞ্চলের বনায়নের হার ৯৯ শতাংশ। পাহাড়ি অঞ্চলে খুব শীত লাগে। প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সৃন্দর। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। তবে জেলাশহর ছাড়া সেখানে তেমন বেশি মানুষ দেখা যায় না। সেখানকার দোকানে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য খুবই কম। সুপারমার্কেট নেই বলে অনেক জিনিস পাওয়া যায় না।"

ছাং ইর প্রধান কর্তব্য হলো কম্পিউটার ব্যবহার করে অফিসের কাজকর্ম সম্পন্ন করার ব্যাপারে স্থানীয় সরকারকে সাহায্য করা। স্থানীয় সরকারের অফিসে অনেক কম্পিউটার আছে, তবে বিদ্যুত্ সরবরাহ মাঝে মাঝে বন্ধ হওয়া এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে সরকারি কর্মচারীরা এখনও প্রধানত কাগজ-কলম নিয়ে কাজ করেন। ছাং ই মনে করেন, স্থানীয় কর্মকর্তাদের জন্য অফিসের কাজকর্মের তথ্যায়নের চেয়ে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন অধিক প্রয়োজনীয়। তাই তিনি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মৌলিক বিদ্যা তাদের শিখানোর জন্য একটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেন। তিনি আশা করেন, তাঁর চীনে ফিরে আসার পর স্থানীয় সরকারের কর্মচারীরা কম্পিউটার ব্যবহার ও মেরামত করতে পারবেন।

ছাং ই বলেন, প্রশিক্ষণ কোর্সে সকল সরকারি কর্মচারী কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিষয়ক বিদ্যা আয়ত্তের প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছেন। অফিসের কাজকর্মের তথ্যায়ন সম্পর্কে তিনি যে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন, তা স্থানীয় সরকারের কাছে দাখিল করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া গেলে তার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছাং ইকে নানা রকম ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। স্থানীয় সরকারের কাজকর্ম ছাড়া তিনি ইংরেজি ভাষাও শিখান। কারো কম্পিউটার অকেজো হলে তিনি তা ঠিক করে দেন। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থানের চার মাসে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন,

"সেখানকার মানুষের বন্ধু হওয়া খুব সহজ। তাঁরা বিদেশিদের সঙ্গে মেলামেশা করতে চায়। তাঁরা অত্যন্ত সরল এবং অতিথিপরায়ণ।"

পেইচিংয়ে চীনা স্বেচ্ছাসেবকদের একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে ছাং ই স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকার ওপর বক্তৃতা দেন। ছাং ই বাংলাদেশে তার চার মাস অবস্থানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনেক ব্লগও লিখেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা অন্যান্য স্বেচ্ছাসেকদের কাজে লাগবে বলে তিনি আশা করেন। ছাং ইর ব্লগের নাম 'nyahlulu'। 'nyahlulu আসলে বিষুবরেখার ওপর অবস্থিত কেনিয়ার একটি জায়গার নাম। ছাং ই এক সময় ওখানে ভ্রমণ করেছিলেন এবং সেই জায়গা তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। আফ্রিকায় গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করাও তার একটি স্বপ্ন। (শিশির/এসআর)

মন্তব্য
মন্তব্য
লিঙ্ক