Web bengali.cri.cn   
চায়ের দাম বৃদ্ধি ভারতীয় কৃষকদের জন্য সুখবর নয়
  2012-10-05 20:28:39  cri

দার্জিলিংয়ের চা বাগান

 আবহাওয়াগত কারণে চলতি বছর ভারত, শ্রীলংকা ও কেনিয়াসহ বিশ্বের প্রধান চা রপ্তানিকারক দেশগুলোতে এ পণ্য উত্পাদনের পরিমাণ অনেক কমেছে। ভারতের প্রকাশিত উপাত্ত থেকে জানা গেছে, এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভারতের চা উত্পাদন ২০১১ সালের একই সময়ের চেয়ে ১১.৪ শতাংশ কমেছে। অনুমান করা হচ্ছে, এ বছরের মোট উত্পাদন প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার টন হবে। গত বছর চায়ের মোট উত্পাদন ছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ বছর উত্পাদন ২০১১ সালের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার টন কমবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সম্প্রতি সিআরআইয়ের সংবাদদাতা ওয়াং ছাও ভারতের প্রধান চা উত্পাদন-স্থান দার্জিলিং গিয়ে সেখানকার চা উত্পাদন ও বিক্রয় পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। এখন শুনুন ওয়াং ছাওয়ের পাঠানো প্রতিবেদন।

নাথমুলস হচ্ছে দার্জিলিংয়ের একটি বিখ্যাত চা বাগান। আশি বছরেরও বেশি সময় আগে এটি গড়ে ওঠে। উচ্চমানের দার্জিলিং চা রপ্তানি করার কারণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে নাথমুলস চা বাগান খ্যাতি অর্জন করেছে। এ বাগানের রপ্তানি বিষয়ক ব্যবস্থাপক গিরিশ সর্দার সংবাদদাতাকে বলেন, "এ বছর বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে আমাদের চা উত্পাদন পরিমাণ অনেক কমেছে। কারণ গত বছরের অক্টোবর থেকে দার্জিলিং অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের ভিন্ন স্থানের উত্পাদন প্রায় সব ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে।"

গিরিশ সংবাদদাতাকে জানান, দার্জিলিংয়ের উত্পাদিত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ চা ইউরোপে রপ্তানি হয়। তবে ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দার কুপ্রভাব দার্জিলিংয়ের চা রপ্তানির ওপর পড়েছে। তাছাড়া উত্পাদন কমার পাশাপাশি দাম বেড়েছে। এখন চা ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে।"

দার্জিলিং পাহাড়ী অঞ্চল

চায়ের দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ভারতের চা সমিতির পরিষদ সদস্য এবং দার্জিলিং চা সমিতির মুখ্য উপদেষ্টা সন্দীপ মুখার্জি বলেন, "সরবরাহ ও চাহিদার সম্পর্ক পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। গত বছর আর চলতি বছর ভারতের চায়ের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলংকাসহ প্রধান চা উত্পাদন অঞ্চলের উত্পাদনের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। সরবরাহ পরিমাণ সত্যি সত্যি হ্রাস হয়েছে, তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাজারে চায়ের চাহিদার পরিমাণে কোনো পরিবর্তিত হয়নি। ফলে সরবরাহ চাহিদার চেয়ে কম। তাই চায়ের দাম বেড়েছে।"

তবে মুখার্জি উল্লেখ করেন, রুপির মূল্যহ্রাস হওয়ার কারণে চায়ের দাম বৃদ্ধি ভারতের চা উত্পাদক ও চা ব্যবসায়ীদের কাছে আসল বৃদ্ধি নয়। তাদের অর্জিত মুনাফায় তেমন পরিবর্তন হয়নি।

মুখার্জি বলেন, "দার্জিলিং হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল। সেখানে চা চাষ করার স্থান আর নেই। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেকে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের চাপ আর বেকারত্ব সমস্যা রয়েছে। চা হচ্ছে এ অঞ্চলের স্তম্ভ শিল্প। এখানে অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চা শিল্পের ওপর নির্ভর করে। পরবর্তী কয়েক বছরে যদি আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারি, তাহলে চা শিল্প দিন দিন সংকোচিত হবে।"

মুখার্জি ব্যাখ্যা করেন, উপযুক্ত ব্যবস্থা হচ্ছে এক দিকে ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারের নীতিগত সমর্থন দরকার, যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের চায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি বাড়ানো যায়। অন্য দিকে সক্রিয়ভাবে অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ করা দরকার।

ভারতের চা দোকান

নাথমুলস চা বাগানের ব্যবস্থাপক গিরিশ বলেন, এখন তারা কেবল রপ্তানি বাজারের ওপর মনোযোগ দিচ্ছেন না। তারা জোরালোভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপরও মনোযোগ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, "রপ্তানি কমার প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। তবে আমি মনে করি, এটা খুব গুরুতর হবে না। কারণ এখন ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে দার্জিলিংয়ের চায়ের বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে আমাদের অনেক ক্রেতা আছে। আমরা আগের মতো কেবল রপ্তানির ওপর নির্ভর করি না। এটা রপ্তানি ক্ষেত্রে আমাদের লোকসান কাটাতে সাহায্য করতে পারে।" (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক