খ. আচ্ছা, তুমি শ্রোতাদের সামনে কয়েকটি খাবারের পরিচয় তুলে ধরছো না কেন?
ক. প্রথমেই আমি সিহু হ্রদ সম্পর্কিত একটি খাবারের পরিচয় দিতে চায়। এর নাম 'সিহু ছু ইউ'। চীনা ভাষায় সিহু'র অর্থ হল পশ্চিম হ্রদ। ছু'র অর্থ হল ভিনেগার এবং ইউ'র অর্থ হল মাছ। এ কারণে সিহু ছু ইউ'র অর্থ হল 'হাংচৌ শহরের পশ্চিম হ্রদের ভিনেগার মাছ'। তবে এ খাবার রান্নার প্রক্রিয়াটি খানিকটা জটিল। তাই, আমরা কেবল এ খাবারসম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরছি।
খ. প্রায় ৮০০ বছর আগে, প্রাচীনকালের নান সোং রাজবংশের সময়, হাংচৌ শহরে একটি পরিবারে দু'টি ছেলে ছিল। তাঁরা সুপণ্ডিত ছিল। তবে সরকারের কর্মকর্তা হতে না-চেয়ে, তারা মাছ ধরার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। বড় ভাইয়ের স্ত্রী ছিল সুন্দরী। স্থানীয় এক পেয়াদা তার রূপে পাগল হয়ে গেল এবং বড় ভাইকে হত্যা করে তার স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাইল। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর, ছোট ভাই ও তার ভাবীর অনেক দুঃখে দিন কাটে। তাঁরা বড় ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য স্থানীয় সরকারের কাছে ওই পেয়াদার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। কিন্তু তত্কালীন সরকারের কর্মকর্তা পেয়াদার কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে তাঁদের অভিযোগ আমলে নিল না। ফলে ছোট ভাই ও তার ভাবী নিজেদের জন্মস্থান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হল। বিদায় নেয়ার সময় ভাবী ছোট ভাইয়ের জন্য রুই মাছ, চিনি ও ভিনেগার দিয়ে 'সিহু ছু ইউ' রান্না করেছিলেন এবং বলেছিলেন, 'এ খাবার খেতে মিষ্টি ও টক লাগে। আশা করি, ভবিষ্যতে তুমি একজন বড় লোক হওয়ার পর, আজকের দুঃখ-কষ্টের দিনগুলোর কথা ভুলে যাবে না।' এরপর ছোট ভাই সেনাবাহিনীতে যোগ দিল, বিদেশী শত্রুদের আগ্রাসন প্রতিরোধ করল এবং একজন জেনারেলে পরিণত হল। জেনারেল হাংচৌ শহরে ফিরে তাঁর বড় ভাইর হত্যাকারী পেয়াদাকে শাস্তি দিলেন এবং নানা জায়গায় ভাবীকে খুঁজে বেড়ালেন। একসময় তিনি একটি রেস্তোরাঁয় নিজের পরিচয় দিতে অনিচ্ছুক ভাবীকে খুঁজে বের করলেন। তিনি ভাবীকে খুঁজে পেলেন এ-কারণে যে, রেস্তোরাঁয় শুধু তাঁর ভাবীর রান্না করা 'সিহু ছু ইউ' পাওয়া যেত। ছোট ভাই ও ভাবী অবশেষে আবারো একসঙ্গে হতে পেরেছিলেন।
ক. এ সুন্দর গল্প শোনার পর এখন আমরা শ্রোতাবন্ধুদের জন্য একটি গান প্রচার করবো। গানের নাম 'এত কাছে এত দূরে'। গানের শিল্পী চাং লিয়াং ইং। তার কন্ঠটি খুবই মিষ্টি।
খ. গানের কথায় বলা হয়েছে: আমি ছিয়ান থাং ত্যাগ করেছি ৩ বছর হয়েছে/ তবে এখন আমার মনে সবসময় তিন বছর আগের একরাতের দৃশ্য ভেসে ওঠে/ তখন পুরনো শহরের দেয়ালের কাছে রাস্তায় হাঁটলাম/ রাতের বাতাসের গন্ধ এবং আমার কাছে আসা-যাওয়া করা লোকদের চেহারা আমি কিভাবে মিস না করি?/ আমার চোখে সবই অন্ধকার রাতের দৃশ্য/ বিভিন্ন দরজা আমার সামনে বাধা দেয়/ গান গাওয়ার সময় আমার কন্ঠ পুরনো দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়...
ক. সুন্দর একটি গানটি শোনার পর এখন আরেকটি সুস্বাদু খাবার সম্পর্কে বলছি। এ খাবারে নাম 'ভিক্ষুক মুরগী' বা 'ধনী মুরগী'। একই খাবারের নাম দুটি কেন? এ সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে। প্রাচীনকালের ছিং রাজবংশের একজন বিখ্যাত রাজার নাম ছিল ছিয়ান লোং। তিনি প্রায়ই রাজপ্রাসাদ ছেড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শনের উদ্দেশে বের হয়ে যেতেন। পরিদর্শনের সময় তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো সাধারণ পোশাকে রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে বেড়াতেন। একদিন তিনি চিয়াং সু প্রদেশের ছাংসু শহরে এসে সঙ্গে রাখা সব টাকা-পয়সা হারিয়ে ফেললেন। এখন কী উপায়? টাকা ছাড়া তিনি খাবার কিনবেন কীভাবে? হাঁটতে হাঁটতে তিনি ক্লান্ত হলেন, ক্ষুধার্ত হলেন। তখন রাজা ছিয়ান লোং একজন ভিক্ষুকের দেখা পান। ভিক্ষুক তাঁকে দেখে বুঝতে পারে যে সে অনেক দিন খাবার খায় নি। ভিক্ষুকটি তখন মুগরী, মাটি ও শাপলার পাতা দিয়ে 'ভিক্ষুক মুরগী' রান্না করেন।
খ. রাজা ছিয়ান লোং এ খাবার খেয়ে অনেক মজা পান এবং ভিক্ষুককে এর নাম জিজ্ঞেস করেন। ভিক্ষুক ভাবলেন, খাবারের আসল নাম 'ভিক্ষুক মুরগী' নামটি অতিথির ভালো না-ও লাগতে পারে। ভিক্ষুক তাই খাবারটি নাম বলল: 'ধনী মুরগী'। তখন থেকেই 'ভিক্ষুক মুরগী' ও 'ধনি মুরগী'-- এ দুটি নামে খাবারটি পরিচিত হয়। এটা খুবই মজার একটি খাবার। হাংচৌতে বেড়াতে গিয়ে আমিও খেয়েছিলাম। সত্যি অসাধারণ! আচ্ছা, এবার আবারো গান হোক। গানের নাম 'হাংচৌ শহরের প্রেমিকা'।
ক. গানের কথা এমন: এ সুন্দর চেহারা আমি হয়তো কোথাও দেখেছিলাম/ আমার প্রেমিকার চেহারা দেখে প্রাচীনকালের হাংচৌর দৃশ্য স্মরণ করি...