v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
নয়া চীনের ৬০ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সাফল্য
2009-07-06 23:15:19

   'শেনচৌ-সাত নভোযানের ক্যাবিনেটের বাইরে এসেছি। শারীরিক অবস্থা ভালো। শেনচৌ-সাত সারা দেশ এবং সারা বিশ্বের জনগণের কাছে শুভেচ্ছা জানায়।'

   ২০০৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথিবী থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে মহাশূন্যে চীনের নভোচারী চাই চি কাং মহাশূন্যে চীনা ব্যক্তির প্রথম পদক্ষেপ এগিয়েছেন। আপনারা এই মাত্র মহাকাশে চাই চি কাংয়ের চীনা জনগণ ও বিশ্বের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা জানানোর রেকর্ডিং শুনলেন। এ ঐতিহাসিক তাত্পর্যসম্পন্ন প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হয়েছে যে, চাই চি কাং মহাকাশে পদচারণা করা প্রথম চীনা ব্যক্তি হয়েছেন এবং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন পৃথিবীতে মহাশূন্যে নভোযানের বাইরে যাওয়ার প্রযুক্তির অধিকারী তৃতীয় দেশে পরিণত হয়েছে।

   মানববাহী নভোযানের প্রযুক্তি হচ্ছে বহু বিজ্ঞান মিশ্রিত মহান প্রযুক্তি। তার মধ্য দিয়ে এক দেশের সার্বিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি প্রতিফলিত হয়। এটা রকেট, নভোযান ও টেলিযোগাযোগসহ সাতটি বিশাল ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। মহাকাশ প্রযুক্তি হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জটিল, সবচেয়ে বিশাল ও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিসম্পন্ন প্রকল্প। চীনের মানববাহী নভোযানের প্রকল্পের উপ-মহাপরিচালক চাং চিয়ান ছি বলেছেন, যদি উচ্চ মানের উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও গবেষণার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে মহাশূন্যে নভোযানের বাইরে গিয়ে তত্পরতা চালানো সম্ভব নয়।

   চীনের মানববাহী মহাকাশযান প্রকল্পের জন্য ১ লাখেরও বেশি প্রযুক্তিবিদ এবং একশ'টিরও বেশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংস্থা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। এখন চীনে ৩ কোটি ৫০ লাখ প্রযুক্তিবিদ আছেন। প্রতি বছর গোটা দেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি রেনমিনপি ব্যয় করা হয়। কিন্তু ৬০ বছর আগে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে সারা চীনে বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাত্র ৫০০ জন। তখন মহাকাশে যাওয়া ছিল চীনাদের জন্য একটি সূদূর স্বপ্ন।

   নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে চীন সরকার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শিল্পের উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। ১৯৬৪ সালে উত্তর-পশ্চিম চীনের মরুভূমিতে চীনের প্রথম পারমাণবিক বোমার সাফল্যের সঙ্গে বিস্ফোরন ঘটানো হয়েছে। এ খবরটি সারা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। তিন বছর পর চীনের প্রথম হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণও সফল হয়। ১৯৭০ সালে চীনের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ –তুংফাংহোং এক নম্বরকে সাফল্যের সঙ্গে মহাকাশে পাঠানো হয়। 'দুটি বোমা ও একটি উপগ্রহ' চীনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি আর প্রতিরক্ষামূলক শক্তি বৃদ্ধি করেছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা স্থাপন করেছে এবং মহাশূন্যে চীনের আরো বেশি অন্বেষণের জন্য প্রযুক্তি ও দক্ষ ব্যক্তিসহ নানা প্রয়োজনীয় শর্ত প্রস্তুত করেছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মেই ইয়োং হোং বলেছেন, 'আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অপেক্ষাকৃত উচ্চ মানের এবং পরিপূর্ণ। তা ছাড়া আমাদের সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জনশক্তি আছে। এসব ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে।'

   ১৯৭৮ সালে চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর করে। তখন থেকে চীন 'বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হচ্ছে প্রথম উত্পাদন শক্তি' এ কৌশলগত চিন্তাধারা নির্ধারণ করে এবং সক্রিয়ভাবে কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্প কার্যকরের সাংগঠনিক কাজ শুরু করে। এখন প্রতি বছর চীনে কাঠামোগত গবেষণা, জ্বালানি, কৃষি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণসহ নানা ক্ষেত্রের প্রায় ২০ হাজারটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য পরিলক্ষিত হয়। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং জনগণের জীবনযাপনের ওপর এর প্রভাবও দিন দিন বাড়ছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা কার্যালয়ের পরিচালক সুয়ে হো পিং বলেন, 'আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি আন্তর্জাতিক উন্নত মানের ব্যবধান আরো কমেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম সারিতে প্রবেশ করেছে। বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর চীনের প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ সমর্থন দিয়েছে।'

   চীনারা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্যের সৃষ্ট বিরাট পরিবর্তন উপভোগ করার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে গর্বিত বোধ করছেন। মানববাহী নভোযান সাফল্যের সঙ্গে উতক্ষেপনের পর কয়েক জন শহরবাসী সাক্ষাত্কার দিয়েছেন।

   মাদাম ওয়াং বলেন, 'আমার খুব গর্ব বোধ হয়। আমি মনে করি, আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় শক্তি বৃদ্ধির প্রমান করেছে। এর সুদূরপ্রসারী তাত্পর্য আছে। আমি চীনা নভোচারীদেরকে বলতে চাই, আপনারা হচ্ছেন জাতীয় বীর।'

    মিঃ লিউ বলেন, 'শেনচৌ-সাতের সাফল্যের সাথে উতক্ষেপণ হচ্ছে চীনের মহাকাশযান ইতিহাসের আরেকটি অগ্রগতি। এটা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। আমরা খুব গর্বিত বোধ করি।'

    গত শতাব্দীর ৯০'র দশকের প্রথম দিক থেকে চীনের মানববাহী মহাকাশযান প্রকল্পের কাজ শুরু করে। প্রথম মানববাহী নভোযান উতক্ষেপনের আগে চীন নিজের তৈরি ১৫ ধরনের ৫০টিরও বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ উতক্ষেপন করেছে। তা ছাড়া চীন নিজেই দশ বারো ধরনের 'লং মার্চ' ধারাবাহিক পরিবাহন রকেট উত্পাদন করেছে এবং তা দিয়ে ৭০টিরও বেশি দেশি-বিদেশি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়েছে।

    ২০০৩ সালের অক্টোবরে চীন প্রথম বার মানুষবাহী মহাকাশযান তৈরী করেছে। নভোচারী ইয়াং লি ওয়েই মহাশূন্যে ২১ ঘন্টা ভ্রমণ করেছেন। ২০০৫ সালে চীন দ্বিতীয় বার মানববাহী মহাকাশযান উতক্ষেপন করে, চীনের দু'জন নভোচারী মহাশূন্যে পাঁচ দিন উড্ডয়নের পর সাফল্যের সঙ্গে ফিরে এসেছেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনজন নভোচারী শেনচৌ-সাত মানববাহী নভোযানের সাহায্যে মহাশূন্যে প্রায় তিন দিন কাটিয়েছেন। এবার নভোচারী চাই চি কাং মহাশূন্যে প্রথম চীনা ব্যক্তি হিসেবে পদচারণা করেছেন।

    এর পাশাপাশি চীনাদের দৃষ্টি এখন আরো দূরে চন্দ্রের দিকে। ২০০৭ সালের অক্টোবরে চীনের প্রথম চন্দ্র অনুসন্ধান উপগ্রহ –ছাংও-এক নম্বর উতক্ষেপিত হয়েছে। এরপর এক বছরে ছাংও-এক সাফল্যের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত নানা অনুসন্ধানের কাজ সম্পন্ন করেছে। চীনের চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের সাধারণ স্থপতি সুন চিয়া তোং আমাদের সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, 'এর আগে আমাদের সব মহাকাশের তত্পরতা মোটামোটি সবই পৃথিবীর নিকটে হয়েছে। অর্থাত্ পৃথিবী থেকে কয়েক শ কিলোমিটার, কয়েক হাজার কিলোমিটার বা আরো একটু দূরের দিকে অভিযান চালিয়েছে। যখন আমরা মহাকাশযানের কিছু প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পেরেছি তখন আমরা অবশ্যই আরো গভীর মহাশূন্যে অন্বেষণের কাজ শুরু করবো। এর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে চন্দ্র অনুসন্ধান।'(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China