v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে কৃষি ক্ষেত্রের সাফল্য
2009-06-08 18:24:10

    খাদ্য সমস্যা ছিল একসময় চীনের বড় সমস্যা। ১৯৪৩ সালে মধ্য চীনের ছাংশা শহরে লোং ইয়ো থু'র জন্ম হয়। এখন তিনি বোয়াও এশিয়া ফোরামের মহাসচিব। চীনে তিনি একজন গণমান্য ব্যক্তি। অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'আমাদের এ প্রজন্মের মানুষ অনাহারের কষ্ট ও নানা কঠিন অবস্থা অতিক্রম করেছি। আমরা পেট ভরে খেতে পারতাম না। আমরা খিদে লাগলে মিষ্টি কুমড়া সিদ্ধ করে খেতাম। ফলে শেষে যখন আমি মিষ্টি কুমড়ার গন্ধ পেতাম তখন বমি বোধ করতাম।'

    চীন একটি ঐতিহ্যিক বড় কৃষি প্রধান দেশ। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই হচ্ছে কৃষক। গত শতাব্দীর ৪০'র দশকে কৃষি উত্পাদনের পদ্ধতি অনুন্নত হওয়া, অনাবৃষ্টি ও বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চীনের কৃষি উত্পাদনের অবস্থা মন্দ ছিল। প্রধান কৃষিজাত দ্রব্যের গুরুতর ঘাটতি ছিল। তা ছাড়া তখন যুদ্ধও অব্যাহত থাকায় অসংখ্য লোক পেট ভরে খেতে পারতো না এবং গায়ে গরম কাপড় পরতে পেতো না। ১৯৪৯ সালে চীনের কৃষকের মাথাপিছু বরাদ্দ খাদ্যশস্যের পরিমাণ ছিল কেবল ১৮০ কেজি।

    ১৯৪৯ সালে চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর চীন সরকার তিন বছর সময় ধরে ভূমি সংস্কার করেছে। জমিদারদের হাতে কেন্দ্রীভূত জমি, কৃষি যন্ত্রপাতি ও গবাদি পশু কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। এ নীতি কৃষকদের নিরংকুশ সমর্থন পেয়েছে। কৃষি উত্পাদন ব্যবস্থা দ্রুত পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন হয়েছে। খাদ্যশস্য ও তুলা উত্পাদনের পরিমাণ অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৫২ সালের পর চীন ফসলের ক্ষেতে জলসেচের ব্যবস্থা নির্মাণ আর কৃষি প্রযুক্তির সংস্কার করে, এর মধ্য দিয়ে চীনের কৃষি উত্পাদনের পরিবেশ স্পষ্টত উন্নতি হয়েছে। কৃষিজাত দ্রব্যের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি হয়। বিংশ শতাব্দীর ৭০'র দশকের শেষ দিকে চীনের খাদ্যশস্য ও তুলা উত্পাদনের পরিমাণ ১৯৫২ সালের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে।

    খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হলেও জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির কারণে চীনের কৃষিজাত দ্রব্যের সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি ছিল। আনহু প্রদেশের ছিচৌ শহরের বিশাং গ্রামের কৃষক ইয়াং চি লিয়াং বলেছেন, 'গত শতাবদ্ধীর ৬০ ও ৭০ দশকে খাদ্য সমস্যা ছিল। খিদে পেলে বুনো শাকপাতাও খেতাম।'

    তখন চীনের আবাদী জমি গ্রামের অধীনে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালিত ছিল। কৃষকরা সবাই একসাথে শ্রম দিতেন এবং সমান সমান শ্রমের ফসল ভাগ করতেন। ফলে কৃষকদের কাজের সক্রিয়তা কম ছিল। ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে আনহুই প্রদেশের সিয়াওকাং গ্রামের কৃষকরা সবার আগে আবাদী জমিকে কৃষকদের হাতে ভাগ করে নিজের ইচ্ছে মতো জমি চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে বছর এ গ্রামের খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণ এর আগের দশ বছরের বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণের চেয়ে চার গুণ বেশি হয়েছে। চীন সরকার ১৯৮০ সালে সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে সিয়াওকাং গ্রামের অভিজ্ঞতা সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ ব্যবস্থাকে পরিবারভিত্তিক সংযুক্ত উত্পাদনের ঠিকা ব্যবস্থা নাম দেয়া হয়।

    ইয়াং চি লিয়াং বলেন, '৮০ ও ৯০'র দশকে সংযুক্ত উত্পাদনের ঠিকা ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর কৃষকদের স্বাধীনতা আর খাদ্যশস্য চাষ করার সক্রিয়তা বেড়েছে। খাদ্য সমস্যার মোটামুটি সমাধান হয়েছে।'

    পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত চীনের কৃষি ক্ষেত্রে উত্পাদনের পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধির হার বাস্তবায়িত হয়েছে। তখন থেকেই চীনের খাদ্যশস্য উত্পাদনে একটানা স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রয়েছে। ২০০৮ সালে চীনে খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণ ৫০ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে।

    চীনের জাতীয় খাদ্যশস্য ব্যুরোর খাদ্যশস্য মজুদের পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মকর্তা মাদাম লিউ তুং চু বলেছেন, চীনারা নিজেদের প্রচেষ্টায় তাদের খাওয়া পরার সমস্যা সমাধান করেছে। চীন বিশ্বের ৭ শতাংশ আবাদী জমিতে বিশ্বের ২২ শতাংশ জনসংখ্যা লালনপালন করতে সক্ষম হয়েছে। এটা একটা বিস্ময় বলা যায়।

    'খাদ্যশস্যের ব্যাপারে চীন সবসময় অভ্যন্তরীন ভিত্তিতে খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার নীতি অনুসরণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের খাদ্যশস্যের ব্যয়ের পরিমাণ আর উত্পাদন পরিমাণে মোটামুটি ভারসাম্য রয়েছে। খাদ্যশস্যের আত্মনির্ভরশীলতার হার ৯৫ শতাংশের ওপর বজায় রয়েছে।'

    কৃষকদের খাদ্যশস্য চাষের সক্রিয়তা আরো বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে চীন সরকার গত কয়েক বছর ধরে কৃষকদের খাদ্যশস্য চাষ ও কৃষিজাত যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সরাসরি ভর্তুকি দিয়েছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত চীন সরকার কৃষকদেরকে মোট ৬০ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি রেনমিনপি ভর্তুকি দিয়েছে। চীন সরকার ধারাবাহিকভাবে কৃষি ক্ষেত্রের ভর্তুকি দেয়ার মাত্রা বাড়াচ্ছে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধির নিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে সরকার খাদ্যশস্য কেনার সর্বনিম্ন দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, দেশের খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল ও শূকরের মাংস মজুতের পরিমাণ সম্প্রসারণ করেছে, খাদ্যশস্যের প্রধান উত্পাদন অঞ্চলকে আর্থিক সহায়তার মাত্রা বাড়িয়েছে। চীন সরকার মফস্বল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন আর গ্রামাঞ্চলের অতিরিক্ত শ্রমশক্তিকে শহরে কর্মসংস্থানের উত্সাহ দেয়ার মাধ্যমে গ্রামের জনসংখ্যার কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান করেছে এবং পল্লী অর্থনীতি ত্বরান্বিত করেছে। তা ছাড়া চীন ৮ বছর আগে থেকে ধাপে ধাপে কৃষি কর বাতিলের কাজ শুরু করে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত চীন সার্বিকভাবে কৃষি কর বাতিল করে ২৬০০ বছর ধরে চীনা কৃষকদের জমি চাষের ওপর শুল্ক আদায় করার ইতিহাস অবশান করেছে। এ ব্যবস্থার ফলে প্রতি বছর কৃষকদের মোট ১৩০ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপির কর মওকুফ হয়েছে।

    এ সব ব্যবস্থার মাধ্যমে চীনের কৃষকরা আগের চেয়ে অনেক ধনী হয়েছে। তাদের জীবনযাপনের মান অনেক উন্নত হয়েছে। বিশাং গ্রামের বর্তমান জীবন সম্পর্কে বলতে গেলে কৃষক ইয়াং চি লিয়াংয়ের হাসিভরা মুখ আর বন্ধ হয় না। তিনি বলেন, 'এখন আমাদের বৈদ্যুতিক বাতি, টেলিফোন, উচ্চ ভবনের বাড়ি, আধুনিক পরিবহন যন্ত্র ও টেলিযোগাযোগের সাজসরঞ্জাম সবই উন্নত হয়েছে।'

    এখন চীনা কৃষকের মাথাপিছু আয় ১৯৭৮ সালের ৩০ গুণ। চীনের অত্যন্ত দারিদ্র্য জনসংখ্যা ২৫ কোটি থেকে নেমে ১ কোটি ৫০ লাখেরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China