সংবাদ পর্যালোচনা: ব্রিক্সভুক্ত দেশসমূহের নেতৃবৃন্দের ত্রয়োদশ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি’র অংশগ্রহণ ও ভাষণ প্রসঙ্গ
2021-09-10 15:22:30

সংবাদ পর্যালোচনা: ব্রিক্সভুক্ত দেশসমূহের নেতৃবৃন্দের ত্রয়োদশ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি’র অংশগ্রহণ ও ভাষণ প্রসঙ্গ_fororder_0910

সেপ্টেম্বর ১০: ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের ত্রয়োদশ সম্মেলন গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে ভিডিও-লিঙ্কের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসা, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জে এম বোলসোনারো এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এতে অংশগ্রহণ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি ‘হাতে হাত রেখে ব্রিক্সের আওতায় সহযোগিতা চালানো এবং অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা’ শীর্ষক ভাষণ দেন। ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চলতি বছর হলো ব্রিক্সভুক্ত দেশসমূহের সহযোগিতা শুরুর পঞ্চদশ বার্ষিকী। বিগত ১৫ বছরে পাঁচটি দেশ উদার ও সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমতার ভিত্তিতে একে অপরের সঙ্গে সহাবস্থান করে আসছে। পাঁচ দেশের মধ্যে কৌশলগত যোগাযোগ ও পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থাও বেড়েছে। দেশগুলো একে অপরের সামাজিক ব্যবস্থা ও উন্নয়নের পথকে সম্মান করে আসছে এবং বাস্তব শৃজনশীলতায় অবিচল থেকে আসছে। পাঁচ দেশ বহুপক্ষবাদকে সমর্থন করে এবং বৈশ্বিক পরিচালনায় অংশ নেয়, যার ফলে ব্রিক্স আন্তর্জাতিক মঞ্চে অপরিহার্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে ওঠে। চলতি বছরেও পাঁচ দেশ, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে, পারস্পরিক সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে আসছে এবং অনেক ক্ষেত্রে নতুন অগ্রগতিও অর্জন করেছে।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বজুড়ে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হচ্ছে ধীরে ধীরে, কঠিনতা মধ্যে। আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলায়ও গভীর ও জটিল পরিবর্তন ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর উচিত বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে সক্রিয় অবদান রাখা এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে, ঐক্য জোরদার করতে, এবং ব্রিক্সের আওতায় বাস্তব সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি এ জন্য পাঁচ-দফা প্রস্তাবও উত্থাপন করেন। এগুলো হচ্ছে:

প্রথমত: ‘একই নৌকায় নদী পার হবার’ ধারণায় অবিচল থাকতে হবে গণস্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। মহামারী প্রতিরোধে একে অপরকে সমর্থন করা এবং মহামারীর তথ্য ভাগাভাগি করা উচিত। টিকা খাতে যৌথ গবেষণা, সহযোগিতার মাধ্যমে উত্পাদন বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে  বাস্তব সহযোগিতা চালানো উচিত।

দ্বিতীয়ত: ন্যায্যতা এবং সহজলভ্যতার ওপর জোর দেওয়া এবং টিকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা। চীন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে টিকা ও প্রযুক্তিগত সমর্থন দিয়ে আসছে এবং টিকার ন্যায়সঙ্গত বন্টনের জন্য অবদান রেখে আসছে। এখন পর্যন্ত চীন শতাধিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ১০০ কোটি  ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে এবং চলতি বছরের মধ্যে এ সংখ্যা ২০০ কোটিতে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাসের টিকা খাতে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দান করার ভিত্তিতে, চলতি বছরের মধ্যে চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনামূল্যে আরও ১০ কোটি ডোজ টিকা দেবে।

তৃতীয়ত: পারস্পরিক উপকারিতা ও সকলের কল্যাণে অবিচল থাকা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ‘ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অংশীদার কৌশল-২০২৫’ বাস্তবায়ন করা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তিতে সৃজনশীলতা দেখানো, এবং সবুজ নিম্ন কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা উচিত।

চতুর্থত: ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে থাকা এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা।

পঞ্চমত: একে অপরের কাছ থেকে শেখা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করা।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, আগামী বছর চীন ব্রিক্সের সভাপতিদেশের দায়িত্ব পালন করবে এবং চীনের উদ্যোগে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের চতুর্দশ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। চীন ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা গভীরতর করা, আরও ঘনিষ্ঠ ও বাস্তব অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা, অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, এবং আরও সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টি করার প্রত্যাশায় রয়েছে।

পাঁচ দেশের নেতারা ‘ব্রিক্সের ১৫ বছর: সহযোগিতা, উত্তরাধিকার, সুসংহতকরণ, ও মতৈক্য সৃষ্টি’ এই থিমকে কেন্দ্র করে গভীরভাবে মতবিনিময় করেন। সম্মেলনে ‘ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের ১৩তম সম্মেলনের নয়াদিল্লী ঘোষণা’ গৃহীত হয়।  (লিলি/আলিম/সুবর্ণা)