হংকংয়ে ‘১৯২১’ মুভি’র প্রদর্শন
2021-07-15 09:46:40

হংকংয়ে ‘১৯২১’ মুভি’র প্রদর্শন_fororder_0715

 পহেলা জুলাই হলো চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং মাতৃভূমির কোলে হংকংয়ের ফিরে আসার ২৪তম বার্ষিকী। উষ্ণ ও আনন্দময় পরিবেশে সিপিসি’র শতবর্ষ পূর্তির উপহার হিসেবে ‘১৯২১’ নামের মুভিটি হংকংয়ের বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছে।

 

দ্য গ্র্যান্ড সিনেমায় হংকংয়ের বিভিন্ন মহলের উদযাপন কমিটি’র সদস্যরা একসঙ্গে ‘১৯২১’ মুভিটি উপভোগ করেন। প্রেক্ষাগৃহের ভেতর ও বাইরে ‘সিপিসি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী উদযাপন’-সহ নানা লাল বোর্ড দেখা যায়। মহামারীর কারণে দর্শকসংখ্যা সীমাবদ্ধ করা হয় এবং একটি প্রেক্ষাগৃহ সর্বোচ্চ শতাধিক দর্শক ধারণ করা যায়।

 

চলচ্চিত্র উপভোগের আগে বড় পর্দায় পঞ্চাতারকা খচিত লাল পতাকা দেখে সব দর্শক দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গান। আবেগময় সুর প্রেক্ষাগৃহে শোনা যায়।  

উদযাপন কমিটি’র প্রধান চুয়াং চি সিয়াং বলেন, বিশেষ এই দিনটিতে চলচ্চিত্র দেখা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। চলচ্চিত্রে তুলে ধরা সেই ইতিহাস আমাদের জানিয়ে দেয় যে, সিপিসি’র শুরুর উদ্দেশ্য ছিলো জনগণের সুখ অনুসন্ধান করা। বর্তমানে দেশের সমৃদ্ধি সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনা জনগণের বিশাল ত্যাগ ও পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। হংকংয়ের তরুণ তরুণীদের এ চলচ্চিত্র উপভোগ করা উচিত্ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

‘১৯২১’ চলচ্চিত্রটি সিপিসি’র প্রথম প্রতিনিধি সম্মেলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। এতে শত বছর আগে সিপিসি’র ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে। মুভিটির প্রকাশনা সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, হংকং ও ম্যাকাওয়ের মোট ৪০টি প্রেক্ষাগৃহে এ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়েছে।

 

‘১৯২১’ চলচ্চিত্রের পরিচালক হুয়াং চিয়েন সিন ‘Beginning Of The Great Revival’সহ বিপ্লব ও ইতিহাস-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, এমন চলচ্চিত্র একবার করলেই চীনের ইতিহাস আরেকবার পর্যালোচনা ও লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি হয়।

 

রক্ত ও মাংসের একদল তরুণ নিজেদের জীবন দিয়ে সত্য অনুসন্ধান করেছেন। তাদের মধ্যে প্রত্যেকই কিংবদন্তির মতো এবং প্রত্যেককে নিয়েই একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায়। হুয়াং চিয়েন সিন বলেন, চলচ্চিত্রে ব্যাপক তরুণ অভিনেতা ও অভিনেত্রী রয়েছে। চলচ্চিত্রের ভাষার মাধ্যমে সেই অবিস্মরণীয় ইতিহাস তুলে ধরা এবং এ থেকে আধুনিক তরুণ তরুণীদের মানসিক অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়।

 

ওয়াং রেন চুন নামে জনৈক তরুণ অভিনেতা চলচ্চিত্রে মাও চে তোংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুটিং প্রক্রিয়া হলো শিক্ষা অর্জনের প্রক্রিয়া বলে তিনি মনে করেন। আমরা অনেক মূল্যবান ঐতিহাসিক তথ্য পড়েছি, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক মূল্যবান চিঠি ও হাতে লেখা প্রবন্ধ। খুব কাছে থেকে সেই ইতিহাস জানতে পেরে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে আমার অনুভূতি দর্শক- বিশেষ করে তরুণ দর্শকদের পৌঁছে দিতে চাই বলে তিনি জানান।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুল-ধারার চলচ্চিত্রে মাঝেমাঝে হংকংয়ের চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের দেখা যায়। যেমন, ‘The Founding of a Republic’, ‘Beginning of the Great Revival’ এবং ‘The Founding of An Army’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে হংকংয়ের অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মুখ দেখা গেছে। হংকংয়ের পরিচালক অ্যান্ড্রু লাউ ‘The Founding of An Army’ নামের চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন।

 
রোজাম এন্টারটেনমেন্ট হোল্ডিংন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান পিটার ল্যাম কিন কোক ‘১৯২১’ নামে মুভি-সহ বেশ কয়েকটি মুল-ধারার চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বলেন, সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনা জাতির মাথা তুলে দাঁড়ানো, ধনী হওয়া এবং শক্তিশালী হওয়ার ঐতিহাসিক ঘটনা বাস্তবায়িত হয়েছে। হংকংয়ে উন্নয়নের পথ ঠিক করার পর দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আবার ফিরে এসেছে। ‘১৯২১’ নামের মুভিটি এই প্রেক্ষাপটে প্রদর্শিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আরো ভালোভাবে দেশের ক্ষমতাসীন পার্টি সম্পর্কে জানা, সিপিসি’র ইতিহাস, শুরুর উদ্দেশ্য এবং দেশ প্রশাসনের চিন্তাধারা অনুধাবন করা, ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নিয়ে হংকংবাসীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং দেশের উন্নয়নে হংকংয়ের সমন্বয় ঘটানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

এই চলচ্চিত্রে সুগভীর শিক্ষা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

‘১৯২১’ মুভিতে শত বছর আগে তরুণ-তরুণীরা আত্মত্যাগকে ভয় না পাওয়া এবং দেশ ও জাতি উদ্ধার করার চেতনা প্রদর্শন করেছেন তা দর্শকদের মধ্যে একই আবেদন সৃষ্টি করেছে।

ম্যাডাম লিনের তিনটি সন্তান এবং বন্ধুদের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ২০ কিলোমিটার দূর থেকে চলচ্চিত্র দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, সন্তানদেরকে জানাতে চান যে, আমাদের দেশ কীভাবে এক ধাপ এক ধাপ করে আজকের পরিস্থিতিতে এসেছে।

 

তিনি বলেন, গত বছরের পহেলা জুলাই আমি সন্তানদের নিয়ে ‘ন্যাশনাল সোং’ নামের মুভিটি উপভোগ করেছি। একজন চীনা হিসেবে আমি গৌরব বোধ করি। আমরা প্রত্যেকে দেশকে ভালোবাসলেই আমাদের দেশ আরো ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

উদযাপন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াং মিং ফান বলেন, আশা করি, ভবিষ্যতে ইতিহাস সংক্রান্ত আরো বেশি চলচ্চিত্র ও টিভি হংকংয়ে প্রদর্শিত হবে, যাতে দেশের প্রতি হংকংয়ের তরুণ তরুণীদের জানাশোনা ও সমঝোতা বাড়ে। (লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)