A Postman in Shangri-la
2021-06-24 10:07:39

A Postman in Shangri-la_fororder_王顺友

A Postman in Shangri-la_fororder_王顺友1

A Postman in Shangri-la_fororder_王顺友2

চলতি বছর মোট ১৫জন একাডেমিশিয়ান চিরদিন আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদের মৃত্যুতে অনেকে ইন্টারনেটে শোক প্রকাশ করেন এবং শ্রদ্ধা জানান। সম্প্রতি আমাদের মতো একজন সাধারণ মানুষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এবং তাঁর মৃত্যু নেটিজেনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার নাম ওয়াং শুন ইয়াও। ৩০ মে তিনি তাঁর জন্মস্থানে মারা যান এবং মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৬ বছর।

 

১৯৮৫ সাল থেকে ওয়াং শুন ইয়াও সি ছুয়ান প্রদেশের মুলি জেলার পোস্ট কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুলি জেলা চারদিকে পাহাড় বেষ্টিত এবং বিশাল এলাকায় খুব কম মানুষ বাস করে।

আগে সেখানে কোনো সড়ক ছিলো না, কোনো টেলিফোনও ছিলো না। তাই ঘোড়ার পিঠে করে চিঠি বহন করে বিভিন্ন জেলার থানায় বিতরণ করা হতো। এমন পুরনো পোস্টের পদ্ধতিকে ‘ঘোড়ার পোস্ট রোড’ হিসেবে বলা হয়। একজন মানুষ, একটি ঘোড়া ও একটি রাস্তা- এই কাজ ওয়াং শুন ইয়াও টানা ৩২ বছর ধরে করেছেন।

২০০৫ সালে ওয়াং শুন ইয়াওকে ‘চীনকে মুগ্ধ করা’ দশজন মানুষের মধ্যে অন্যতম একজন হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

তার প্রশংসা করে বলা হয়, তিনি খুব সরল একজন মানুষ, সাধারণ একটি পাথরের মতো। তিনি বিশ্বের ডাক ইতিহাসের কিংবদন্তী ব্যক্তি।

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ওয়াং শুন ইয়াও নামের এই পোস্টম্যানের গল্প শ্রোতাদের জানাবো। ‘A Postman in Shangri-la’ নামক চলচ্চিত্রটি মূলত ওয়াং শুন ইয়াওয়ের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছে।

 

এ চলচ্চিত্রের অনেক চরিত্রে ওয়াং শুন ইয়াওয়ের সহকর্মী বা আত্মীয়স্বজন অভিনয় করেছেন। আন্তরিকতায় ভরপুর এই চলচ্চিত্র দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে।

তিব্বতি ভাষায় Shangri-la শাংরি-লা মানে দারুণ স্বর্গ এবং পরীর ভূমি। চলচ্চিত্রে ছিউ লিন নামে একজন অভিনেতা ওয়াং শুন ইয়াওয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি বাবার কাছ থেকে চিঠির ব্যাগ হাত নেন। প্রতি মাসে তিনি দু’বার ডাক রুটে ধরে চলাফেরা করতেন। প্রতিবার তাকে ৫৮৪ কিলোমিটার পথ পারি দিতে হতো। বরফ-ঢাকা পাহাড় অতিক্রম করা ছাড়াও, খুবই গরম নদীর উপত্যকাও পার হতে হতো। এই যাত্রায় সমুদ্রের উচ্চতা ভিন্ন রকম হতো, এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার ফুট পর্যন্ত। তাপমাত্রাও কম বা বেশি হতো, মাইনাস দশ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত। যাত্রায় অনেকগুলো মোড় আছে এবং সড়কও অনেক সরু। পথের পাশেই গভীর খাদ। সচেতন না থাকলে প্রাণ হারাতে হবে। সাধারণ মানুষ এই পথের অল্প অংশ হাঁটালেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

 

দীর্ঘ যাত্রা বা যাত্রায় নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেন ওয়াং শুন ইয়াও। তিনি ভয় পান না। তার সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো একাকীত্ব। বহু বছর ধরে তালিয়াং পাহাড়ের এই রাস্তায় অসংখ্য বার যাতায়াত করেছেন তিনি। মাঝেমাঝে দু ও তিন দিনের মধ্যে তিনি একজনও মানুষ দেখতে পান নি। তার সঙ্গী শুধু সেই নীরব ঘোড়া। একাকী বোধ করলে তিনি একটু মদ পান করতেন। নিজেকে উত্সাহ দেওয়া ও শীতের তীব্রতা দূর করতো মদ। একা একা পাহাড়ি পথে তিনি গান গাইতে পছন্দ করতেন। পাহাড় ও ঘোড়া হলো তার বিশ্বস্ত দর্শক। প্রতি বছর তিনি ৮৪০০টিরও বেশি পত্রিকা, ৩৩০টিরও বেশি ম্যাগাজিন, ৮৪০টিরও বেশি চিঠি এবং ৬০০টিরও বেশি প্যাকেজ বিতরণ করতেন। তিনি বলতেন, পোস্টম্যান হিসেবে কাজ করা হলো জনগণকে সেবা করা। আমি এ কাজ না করলে কে করবে?

 

পাহাড়ি অঞ্চলে পরিবহন ও যোগাযোগ-ব্যবস্থা অনেক অসুবিধাজনক। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলগুলো যেন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকা। ওয়াং শুন ইয়াও বহিঃর্বিশ্বের সঙ্গে গ্রামবাসীদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠেন। পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামে চিঠি ও প্যাকেজ বিতরণের পাশাপাশি তিনি গ্রামবাসীদের জন্য বাইরের দুনিয়ার খবর নিয়ে আসেন।

গ্রামবীসদের চোখে তিনি সাধারণ একজন পোস্টম্যানই নন, তিনি তাদের বিশ্বস্ত আত্মীয় ও বন্ধুর মতো।

আপনারা হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না যে, তার মতো সাধারণ একজন পোস্টম্যান গ্রামের উন্নয়নে কত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছেন।

প্রতিবার তিনি অন্যান্য জেলা থেকে কিছু শস্যবীজ বয়ে নিয়ে আসেন। বাইরের জগতে যা ভালোভাবে বিক্রি করা যায়, তিনি সেসব  বীজ বয়ে নিয়ে আসেন। মাঝেমাঝে তিনি বাইরে থেকে ভালো গুণগত মানসম্পন্ন বীজ নিয়ে আসেন, ফলে গ্রামবাসীদের আয়ও ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

কোনো কোনো লোক ওয়াং শুন ইয়াওকে জিজ্ঞাস করেন যে, কেন তিনি টানা বহু বছর ধরে পোস্টম্যান হিসেবে পাহাড়ে কাজ করেছেন?

উত্তরে তিনি বলেন, চিঠি পেয়ে গ্রামবাসীদের হাসিমাখা মুখ তৈরি হয়। এই আনন্দই হলো তার এই কাজে অবিচল থাকার কারণ।

জনগণের সেবায় কষ্ট পাওয়া বা কত ক্লান্ত হওয়াকে তিনি কষ্ট মনে করেন না; এতে তিনি খুশি হন।

 

ওয়াং শুন ইয়াওয়ের মতো গ্রামের পোস্টম্যানরা নিজেদের কাজের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ওয়াং শুন ইয়াওয়ের কাছে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, তিনি বহু বছর ধরে বাইরে চলাফেরা করেছেন এবং স্ত্রী ও সন্তানকে খুব কম সময় দিয়েছেন। এজন্য তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চান, গ্রামীণ পোস্টম্যানের শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। তরুণ বয়সেই তিনি রিউম্যাটিজম, মৃগী ও পেট ব্যথাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ধারাবাহিক কাজের কারণে তার রোগের চিকিত্সা করার সময়ও ছিলো না।

 

ভালো খবর হলো ২০১৪ সালে মুলি জেলায় সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ফলে আগের মতো ঘোড়া দিয়ে চিঠি বিতরণের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়।

২০১৭ সালে ওয়াং শুন ইয়াও আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরগ্রহণ করেন। আগে তার স্বপ্ন ছিল- মুলি জেলায় একদিন সড়ক নির্মাণ করা হবে। আমার মতো পোস্টম্যানরা গাড়ি চালিয়ে চিঠি বিতরণ করবে। তিনি নিজকে ঘোড়ায় চড়ে চিঠি বিতরণ করা সর্বশেষ পোস্টম্যান বলে আশা করেন।

 

এখন তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। ঘোড়া দিয়ে দূরবর্তী জেলায় চিঠি বিতরণ এখন ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। তিনি সেই ইতিহাসের একজন সাক্ষী। অবসরগ্রহণের মাত্র কয়েক বছর পর রোগাক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ৩০ মে মারা যান তিনি। গ্রামীণ পোস্টম্যান হিসেবে টানা ৩২ বছর তিনি কাজ করেছেন। তিনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ মিটার উঁচু বরফাবৃত মালভূমির পথে ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করেছেন। তার হাত থেকে একটি চিঠিও হারায় নি। তার কাজের যথার্থতার হার শতভাগ।

 

সময় বয়ে যায়। ঘোড়ার পিঠে চিঠি বহনের সড়ক ইতিহাস হয়ে যায়। তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে, অসংখ্য গ্রামীণ পোস্টম্যান তাদের গোটা জীবন ধরে এক-একটি দীর্ঘ ও কষ্টকর সড়কে হেঁটেছেন। দেশ-জাতির আজকের উন্নয়নের পথে তারাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। তাদের পরিশ্রমের ফলেই আমরা আজ উন্নত সময় পেয়েছি। তাদের কাজ সত্যিই সম্মানজনক।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)