“দারিদ্র্য বিমোচন: চীনের অভিজ্ঞতা ও অবদান”
2021-04-07 11:13:10

গতকাল মঙ্গলবার সকালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয় ‘মানব জাতির দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অনুশীলন’ শিরোনামে এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চীন গত কয়েক বছরে দারিদ্র্য, বিশেষ করে গ্রামীণ দারিদ্র্য, দূরীকরণে যে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিধৃত হয়েছে এই দলিলে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশকে অতিদারিদ্র্যতার অভিশাপ থেকে পুরোপুরি মুক্ত ঘোষণা করেছে চীনের সরকার। জাতিসংঘ বিশ্বকে ২০৩০ সালের মধ্যে অতিদারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে, চীন বৈশ্বিক সময়সীমার ১০ বছর আগেই সেই লক্ষ্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে, বিগত ৮ বছরে অর্জিত সাফল্যে সারা বিশ্বের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ওই ৮ বছরে প্রায় ১০ কোটি চীনা অতিদারিদ্র্য মানুষ দারিদ্র্যতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়েছেন।

চীনে বিশ্বের মোট লোকসংখ্যার ২০ শতাংশের বাস। এই দেশটি যখন দারিদ্র্যমুক্ত হয়, তখন তা হয় গোটা বিশ্বের জন্য কল্যাণকর। এ সাফল্য তাই শুধু চীনের নয়, গোটা বিশ্বের।

বিশ্ব ব্যাংকের মানদণ্ড অনুসারে, যে-ব্যক্তি প্রতিদিন ১.৯ মার্কিন ডলারের কম আয় করে, সে অতিদরিদ্র। সে হিসেবে এখনো বিশ্বে ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ হতদরিদ্র। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যবিমোচন প্রক্রিয়াও থমকে আছে। ২০২১ সালে বিশ্বে হতদরিদ্রের সংখ্যা ১৫ কোটি বাড়বে বলে বিশ্ব ব্যাংক আশঙ্কা করছে।

১৪০ কোটিরও বেশি লোকসংখ্যার বড় রাষ্ট্র চীন যেভাবে অতিদারিদ্র্যকে জয় করেছে, তা এক বিস্ময়। এ পথে দেশটিকে ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চীন সফল হয়েছে। চীন বৈশ্বিক দারিদ্র্যবিমোচন প্রক্রিয়ায়ও রেখেছে বিশাল অবদান। বিশ্বব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, সাম্প্রতিককালে বিশ্বের দারিদ্র্যমুক্ত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭০ জনই চীনের মানুষ।

চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম সহজ ছিল না। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এ কার্যক্রমে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মূলত, দৃঢ় ও শক্তিশালী নেতৃত্ব, জনগণকেন্দ্রিক কার্যক্রম, গোটা সমাজের শক্তি কাজে লাগানো, এবং নির্ভুল কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে চীন এ অসাধ্য সাধন করেছে।

চীনে জাতিসংঘের সমন্বয়ক সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাত্কারে দারিদ্র্যবিমোচন ইস্যুতে চীনের অবদানকে পুরোপুরি স্বীকৃতি দিয়েছেন।

টেকসই বিকাশের জন্য বিশ্বজুড়ে সব ধরণের দারিদ্র্য দূরীকরণ জাতিসংঘের ২০৩০ এজেন্ডার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। চীনের ৮০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে এককভাবে ৭৫ শতাংশের বেশি। এটি দারিদ্র্যবিমোচন ও বিশ্বের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে। সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অসাধারণ সফলতার উচ্চ পর্যায়ের মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন,“গত সাত বছরে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ১০ কোটি চীনা মানুষের দারিদ্র জীবন বদলে দিয়েছেন। বিগত ৪০ বছরে চীন সফলতার সাথে প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। এটি একটি দুর্দান্ত অর্জন, এটি দারিদ্র্যবিমোচনে আগ্রহী অনেক দেশের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছে।”

 

দারিদ্র্যবিমোচন ও দরিদ্রতা হ্রাসে চীনের অর্জনের প্রশংসা করার সময়, সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী আরও জোর দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে একাধিক সহযোগিতা কাঠামো চুক্তির আলোকে জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট নানা ক্ষেত্রে চীন সরকারের সাথে গভীর সহযোগিতা করবে, দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখবে এবং একে বিশ্বব্যাপী এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন,“চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কাজটি দরিদ্রতার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির পরিবর্তে, কৃষিক্ষেত্র, অবকাঠামো, উত্পাদন, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও অন্যান্য নানা দিকে পরিচালিত হয়েছে। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”

২০২০ সালের শেষের দিকে চীন সম্পূর্ণভাবে হতদারিদ্র্য থেকে মুক্তি লাভ করে। এটি চীনা জনগণের অর্জিত অন্যতম বৃহত্তম সাফল্য। এর প্রভাব কেবল যে চীনাদের ওপরই পড়বে, তা নয়, বাইরের দুনিয়ার ওপরও এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। হতদারিদ্র্য থেকে মুক্তির লড়াইয়ে জয়লাভের পরে চীন পরবর্তী লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে চলেছে। এ লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ৩০ বছরে চীনকে সম্পূর্ণ আধুনিক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা। জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে চীনা জনগণের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণকে সমৃদ্ধ করার এবং দেশকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলির জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে।(শিশির/এনাম/রুবি)