ব্যবসা-বাণিজ্য
2021-04-06 16:56:25

চীন ২০৩০ সালের পূর্বেই বর্তমান কার্বন নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস করা শুরু করবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।

 

গত ১৫ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, উল্লেখিত দুটো লক্ষ্য প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণের সামগ্রিক বন্টনে অন্তর্ভ্যূক্ত করে সময়মতো লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্ববিখ্যাত সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’র ওয়েবসাইটে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বেইজিং খুবই আন্তরিক।

 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির  কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কমিটির সম্মেলনে সবুজ ও নিম্ন কার্বন উন্নয়নের জন্য অনুকূল অর্থ ও কর, দাম, অর্থ ও জমিসহ বিভিন্ন নীতি পূর্ণাঙ্গ করে, সক্রিয়ভাবে সবুজ অর্থায়নের উন্নয়ন করা, জলবায়ু পরিবর্তন ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং আন্তর্জাতিক নিয়মাবলি ও মানদণ্ড তৈরি ত্বরান্বিত করা হয়। সবুজ অর্থায়ন দেশি-বিদেশি সহযোগিতার জন্য নতুন সুযোগ ও স্পেস সৃষ্টি করবে।

 

সম্প্রতি গোল্ডম্যান শ্যাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ২০৬০ সালে কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য আগামি ২০ বছরে চীন পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত অবকাঠামোয় ১৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি ৪ কোটি নতুন পদ তৈরী করবে।

 

সক্রিয়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা এবং সবুজ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, চীনের নতুন উন্নয়ন পর্যায়ে অনিবার্য চাহিদার পাশাপাশি বিশ্ব প্রবণতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সবুজ অর্থায়নে বৈশ্বিক সহযোগিতা চালানো খুবই উপযুক্ত আচরণ। 

 

*চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের জাতীয় সম্পদ কমিশনের সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেট মুনাফা ছিল ১.৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ২.১ শতাংশ বেশি। এতে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের নেট মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

কোভিড-১৯ মহামারী কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশ-পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তথাপি চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশের পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবেই বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশেষ করে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় বিভিন্ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নকাজ কখনও বন্ধ হয়নি।

 

জাতীয় সম্পদ কমিশনের মহাসচিব ও মুখপাত্র ফেং হুয়া গাং সম্প্রতি বলেন, যদিও ২০২০ সালে মহামারীর কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মসংস্থান ও সরঞ্জাম পরিবহনের কাজ অনেক কঠিন ছিল, তবুও প্রতিষ্ঠানগুলো ভালভাবে নিজেদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্থিতিশীলভাবে বিদেশে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় নেওয়া পরিকল্পনার বাস্তবায়নকাজ কখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

 

তিনি বলেন, “চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশে ৬ শতাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেমন, জাকার্তা-বান্দুং দ্রুতগতির রেলওয়ে ও চীন-লাওস রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ মহামারীর কঠিনতা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে। ২০২০ সালে চীন-বেলারুশ শিল্প এলাকায় ১০টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রবেশ করেছে । বর্তমানে এলাকাটিতে মোট ৬৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং বিনিয়োগের পরিমাণ মোট ১.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জর্জিয়ার ই-৬০ এক্সপ্রেস সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এসব পরিকল্পনা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় করা হয়েছিল।”

 

জানা গেছে, এ পর্যন্ত চীনের ৮১টি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় গৃহীত পরিকল্পনার সংখ্যা ৩,৪০০টিরও বেশি।

 

ফেং বলেন, “সার্বিকভাবে মহামারী প্রতিরোধ এবং কাজ ও উত্পাদন পুনরুদ্ধারের ভিত্তিতে, কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অবকাঠামো খাতের নির্মাণ, শিল্প, আর্থ-বাণিজ্যিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নব্যতাপ্রবর্তন ও জনস্বার্থ খাতে বাস্তব সহযোগিতা উন্নত করে গেছে।”

 

তিনি বলেন, আরও উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ বাস্তবায়ন করতে হবে। ইতিবাচকভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, যাতে বিদেশে পরিকল্পনাগুলো থেকে  মুনাফা আরও বাড়ানো যায়।

 

*২০২০ সালে চীনের জিডিপি দাঁড়ায় ১০১.৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে। আর সে বছর চীনে ভোগের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৫৪.৩ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ২০২১ সালেও চীন ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়ে ভোগ বাড়ানোর চেষ্টা করবে। 

 

২০২০ সালে চীনে সামাজিক খুচরা বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল রেকর্ড সৃষ্টিকারী। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেই এই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দেশীয় চাহিদা বাড়ানো ও ভোগ ত্বরান্বিত করা হবে ২০২১ সালে চীনা অর্থনীতির মূল লক্ষ্য।

 

রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্রের একাডেমি কমিশনের উপ-মহাসচিব ও সামষ্টিক অর্থনীতি গবেষণা বিভাগের গবেষক চাং লি ছুন বলেন, এখনও বিশ্বে মহামারী নিয়ন্ত্রিত হয়নি এবং আরও বেশি অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা আছে। সেজন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে। 

 

জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক নিং জি চে সম্প্রতি বলেন, চীনের বর্তমান অবস্থা থেকে এটা স্পষ্ট যে, দেশটির অর্থনীতিতে ভোগের মৌলিক ভূমিকা রয়েছে এবং এই ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে। আর এ জন্য নাগরিকদের ভোগের সামর্থ্য উন্নত করতে হবে। ভোগের পরিবেশ ও নীতিও পূর্ণাঙ্গ করতে হবে।

 

চীনের অর্থনৈতিক যোগাযোগ কেন্দ্রের সহ-সভাপতি ও একাডেমি কমিশনের পরিচালক ওয়াং ই মিং মনে করেন, স্বল্প-মেয়াদী প্রমোশনাল ফি নীতি ছাড়াও স্থায়ী নীতি গড়ে তুলতে হবে। আয় বিন্যাস নীতির সংস্কার, সামাজিক বীমার সম্পূর্ণ কাভারেজ, সামাজিক বীমার মান উন্নয়ন, গ্রামের স্থানান্তরিত জনসংখ্যার  উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে।

 

ওয়াং আরও বলেন, যদি মহামারী কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে, তাহলে ২০২১ সালে চীনের ভোগ দ্রুত বাড়বে। জনগণের বার্ষিক ব্যয় বাড়বে ১০ শতাংশ।

 

(প্রেমা/এনাম)