ছিংমিং দিবসে চীনের বিভিন্ন জায়গায় বীর ও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
2021-04-05 18:37:43

মৃতদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানো হল চীনের ঐতিহ্যবাহী ছিংমিং দিবসের ঐতিহ্যিক রীতি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে চলতি বছরের ছিংমিং দিবসের সময় চীনের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় বীর, শহীদ ও মৃত আত্মীয়স্বজনের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ। এ ছাড়া, চীনা জনগণ বিপ্লবে বীরদের মহান চেতনা মনে রাখার জন্য তাদের বাসস্থান ও বিপ্লবের জায়গায় যান। যাতে দেশপ্রেমের চেতনা জনপ্রিয় করা যায় এবং উন্নয়নের শক্তি লালন করা যায়।

 

ছিংমিং দিবসের প্রথম দিনে, চীনের সশস্ত্র বিপ্লব উন্মোচনের জায়গা, চীনের গণ-মুক্তিফৌজের জন্মস্থান চীনের চিয়াং সি প্রদেশের নান ছাং শহরে ‘লাল সংস্কৃতি’ এলাকায় পর্যটনের হিড়িক পড়ে যায়। লোকজন বিপ্লবের ইতিহাস অনুসরণ করে এখানে এসে দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করে। ছিং হাই প্রদেশ থেকে আসা বৃদ্ধ ওয়াং এই প্রথমবার নান ছাং শহরে আসেন। তাঁর প্রথম গন্তব্য ছিল ‘১ অগাস্ট’ বিদ্রোহের স্মৃতি হল। তিনি বলেন,

এই স্থান পরিদর্শন করে আমার খুব ভালো লাগছে এবং আমি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। প্রবীণ বিপ্লবীরা তাদের রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে বর্তমানে আমাদের সবার জীবন সুন্দর হয়েছে।

 

চিয়াং সি প্রদেশে অনলাইনে ‘বীর ও শহীদের’ শ্রদ্ধা জানানোর প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। লোকজন ‘বীর ও শহীদের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা’, ‘বীর ও শহীদের প্রতি মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানানো’, তাদের ‘অনুভূতির কথা মনে রাখা’- এরকম নানা পদ্ধতিতে বীর ও শহীদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে। লোকজন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বীর ও শহীদের কাহিনী এবং ‘লাল চেতনার গল্প’ জানতে পারে।

 

নান ছাং শহরের নতুন স্কুল শিক্ষা গ্রুপের প্রাথমিক স্কুল বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শুয়াং লি চিয়া বলেন, অনলাইনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার মাধ্যমে আমি বীর ও শহীদের প্রাণ উত্সর্গ করে দেশের জন্য অবদান রাখার কাহিনী জানতে পেরেছি। আমাদের উচিত তাদের কাছ থেকে শেখা, তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা, দেশের জন্য অবদান রাখা।

 

চীনের বিভিন্ন জায়গায় আরো বেশি শিক্ষার্থী বীর ও শহীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশপ্রেমের শিক্ষা নিয়েছে। হু নান প্রদেশের ই ইয়াং শহরের লুং চৌ মাধ্যমিক স্কুল সীমান্তরক্ষী বীরদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বীরের কাহিনী শেখার মাধ্যমে দেশপ্রেমের শিক্ষা পেয়েছে। এই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছেং সিয়াং ছিন বলেন,

একজন মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রী হিসেবে, আমাদের প্রধান কর্তব্য হল- ভালোভাবে লেখাপড়া করা। সেই সঙ্গে বীর ও শহীদের জীবন থেকে শিখতে হবে। ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ গঠনের জন্য নিজের শক্তি কাজে লাগাতে হবে।

 

ই ইয়াং শহরের থাও হুয়া লুন প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ২৭৪ ক্লাসে, শিশুরা ‘আমি সিপিসি’র গল্প বলি’ নামে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তারা চীনের বিপ্লবের সময় বিভিন্ন বীর ও শহীদের গল্প নিজের ভাষায় বর্ণনা করে। এই ক্লাসের একজন শিশু শিক্ষার্থী ইউয়ান ছেন সি বলে,

আমি অনেক সহপাঠীর গল্প পড়া শুনেছি, খুব গভীর অনুভূতি তৈরি হয়েছে। এসব গল্পের মাধ্যমে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি। নতুন যুগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের উচিত ভালোভাবে ইতিহাস জানা, বীর ও শহীদের শ্রেষ্ঠ গুণগুলো অর্জন করা এবং নতুন অগ্রগতি অর্জন করা।

 

১৯২৭ সালের ১১ ডিসেম্বর কুয়াংচৌ শহরে কুয়াংচৌ বিদ্রোহ হয়। এটি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব কর্মী ও কৃষকদের সশস্ত্র বিপ্লবী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ছিং মিং দিবসের সময় কুয়াংচৌ বিদ্রোহী বীর ও শহীদদের কবরস্থানে কুয়াংচৌ শহরের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। শহরের ১৭ লাখেরও বেশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তারা দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের মুক্তির জন্য শহীদদের উল্লেখযোগ্য অবদান সম্পর্কে জানতে পেরেছে।

 

শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের পর শিক্ষার্থীরা কুয়াংচৌ বিদ্রোহের ইতিহাসও জানতে পেরেছে।

(শুয়েই/তৌহিদ/লিলি)