ফের লকডাউনে বাংলাদেশ: মেনে চললে কমবে করোনা সংক্রমণ মাহমুদ হাশিম
2021-04-04 19:37:01

শেষ পর্যন্ত লকডাউনের পথেই হাটতে হলো বাংলাদেশকে। মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় কঠোর ব্যবস্থার কথা বলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলট, রাজশাহীসহ ২৯ জেলায় উচ্চ সংক্রমণের কথা বলে আংশিক লকডাউন চেয়েছিলেন। সবশেষ করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি সব ধরনের মেলা, সমাবেশ, আচার-অনুষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করেছিল। অনেকের ধারণা করছিলেন সরকার হয়তো করোনা সংক্রমণ বেশি এমন কিছু জায়গায় আংশিক লকডাউন যাবে। কিন্তু সোমবার থেকে গোটা দেশেই এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হলো।

শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সপ্তাহের লকডাউন আসছে-এমনটা জানান গণমাধ্যমকে। রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।

লকডাউনের ফলে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহণ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, ওষুধ, পচনশীল পণ্য, ত্রাণবাহী পরিবহণ, সংবাদপত্র, গার্মেন্টস সামগ্রী পরিবহন নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত অফিস আদালত ও বেসরকারি অফিসে জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত জনবল নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্প করাখানা ও নির্মাণ কাজ চলবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবার দোকান, হোটেল-

রেস্তোঁরায় বসে খাওয়া যাবে না। শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

গত বছর ২৬ মার্চ থেকে কয়েক দফায় সরকার সাধারণ ছুটিসহ ২ মাসের বেশি সময় লকডাউন বলবৎ রেখেছিল। করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় সরকার ফের লকডাউনের মতো কঠোর ব্যবস্থায় গেছে। কিন্তু এ পরিস্থিতি অনেকটা আমাদের নিজেদেরই তৈরি করা। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন করোনা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। কিন্তু মানুষ একে কানেই তোলেনি। শপিংমল, রাস্তাঘাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, যত্রতত্র সমাবেশ, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের মতো ভিড়, সামাজিক অনুষ্ঠানের হিড়িক দেখে বোঝার উপায় ছিল না দেশে করোনা মহামারি চলছে। ফল যা হবার তাই হয়েছে। জানুয়ারিতে যে সংক্রমণ ২ শতাংশে নেমেছিল। মার্চে তা এসে দাঁড়ায় ২৪ শতাংশে। এপ্রিলে এসেই করোনা সংক্রমণের উর্ধমুখী প্রবণতা অব্যাহত।

ভয়ের কথা এরই মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে দেশে বর্তমানে ৬৪ হাজার করোনা রোগী রয়েছে। যার মাত্র ৭ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হতে পেরেছেন। বাকি ৯৩ শতাংশ চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউতো বটেই সাধারণ বেডও মিলছে না করোনা রোগীর চিকিৎসায়। এতো বেশিসংখ্যক করোনা রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কিন্তু প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ বলতে পারছেন না।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এখনই পরিস্থিতি সামাল দেয়া না গেলে যে কোনো সময় করোনা সংক্রমণে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বরাবরের মতোই বিশেষজ্ঞরা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি বলবতের

ওপর জোর দিচ্ছেন। তারপরই তারা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সার্বাত্মক উদ্যোগ নিতে বলছেন। দ্রুত বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও মার্কেটগুলোকে ফিল্ড হাসপাতালে রূপান্তরের পরামর্শ তাদের। করোনা যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে করে বাংলাদেশে ভাইরাসটির নতুন নতুন ধরনের উৎপত্তি হতে পারে। এতে পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে।

সর্বোপরী লকডাউনের ফলে দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষেরা চরম অসহায় পরিস্থিতি পড়বেন। তাদের জন্য সামাজিক সহায়তা বাড়ানো দরকার। সরকার এ বিষয়ে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেবে বলে আশা দেশের মানুষের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার জাতীয় সংসদে তার বক্তব্যে জানান, করোনার বিস্তার ঠেকাতেই লকডাউনের পথে যেতে হয়েছে দেশকে। লকডাউন মানলে করোনার বিস্তার কিছুটা হলেও ঠেকানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সরকার প্রধান।

 

মাহমুদ হাশিম