বিপর্যয়ের গতিতে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে
2021-02-25 20:02:09

বিপর্যয়ের গতিতে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে

 

বিশ্বব্যবস্থা সচল রাখতে অর্থনীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে অর্থনীতি। অর্থনীতি হয়ে উঠছে রাজনীতির হাতিয়ার, কূটনীতির মূলমন্ত্র আর স্বকিয়তার রক্ষাকবচ। এই অর্থনীতির নানা সমাচার নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাপ্তাহিক আয়োজন ব্যবসাপাতি। ব্যবসাপাতির ৯ম পর্বে সবাইকে স্বাগত।

ব্যবসাপাতির ১০ম পর্বে যা থাকছে:

বায়ু দূষণের কারণ ও প্রভাব নিয়ে দুটি প্রতিবেদন।

সুপার-ফাস্ট ওয়্যারলেস প্রযুক্তি নিয়ে খবর।

দারিদ্র্য বিমোচনে চীনের অসাধারণ সাফল্যের গল্প।

 

স্বাক্ষাত্কার: . আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার

ঢাকার বাতাসের দূষণ ও এর নানা মাত্রিক প্রভাব নিয়ে কথা বলতে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

 

বিপর্যয়ের গতিতে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে_fororder_jingji1

এই অনুষ্ঠান আপনারা শুনছেন ঢাকায় এফএম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফএম ৯০ মেগাহার্টজ-এ।  শুরুতেই বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর।

 

চীনে দারিদ্র্য বিমোচন সহায়ক পণ্যে কর কমানোয় ভোগ বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত

চীনে দারিদ্র্য বিমোচন সহায়ক পণ্যে কর কমানোয় ভোগ বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। গেল ৫ বছর গড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর কমানো হয়েছে বলে ২০২০ সালের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য দিয়েছে চীনের কর বিষয়ক রাষ্ট্রীয় প্রশাসন।

পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, ব্যাপক আকারে দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি হাতে নেয়ায় চীনে কর কমানো হয়ছে ১০২ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউয়ান বা ১৫৮০ কোটি মার্কিন ডলার।

পরিসংখ্যানে আরো বলা হয়, দারিদ্র্য বিমোচন সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশেষ করে ৪ হাজারেরও বেশি পণ্যের বিক্রি গেল বছরের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, শুল্ক ছাড়ের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির হার জানান দেয়, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

সব পর্যায়ে ভোগ বাড়াতে কর কর্তৃপক্ষের নেয়া নানা পদক্ষেপ দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। ২০১৬-২০২০ সালে কার্যকর করা ত্রয়োদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কর প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে

প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজার নতুন উদ্যোক্তাকে ব্যবসায় চালু করতে সহযোগিতা দেয়া ও প্রায় ৬ হাজার চলমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা অন্যতম। একই সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে প্রায় পৌনে ২ লাখ মানুষকে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণও দেয়া হয় কর প্রশাসনের উদ্যোগে। >

 

সুপার-ফাস্ট ওয়্যারলেস প্রযুক্তি বাজারে এনেছে হুয়াওয়ে

ফেব্রুয়ারি ২৫, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: ফাইভ-জি ভিত্তিক সুপার-ফাস্ট ওয়্যারলেস প্রযুক্তি বাজারে এনেছে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে। নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করে শিল্প-বাণিজ্য ব্যবহার উপযোগী করে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার বিজনেস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডিং ইন।

অপারেটর ও অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে যৌথভাবে এ ফাইভ-জি সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি চীনের মোবাইল ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত " ফাইভ-জি ব্রিংস নিউ ভ্যালিউ” ফোরামে ডিং বলেন, বাজারে আনা নতুন এ প্রযুক্তি ডিজিটাল লেনদেনকে আরো সহজ করবে।

২০১৯ সাল থেকেই বাণিজ্যিক ভাবে ফাইভ-জি  ডিভাইসের  ব্যবহার শুরু হয় চীনে। গেল বছরের চেয়ে চলতি বছর ব্যবহারকারীর সংখা বেড়েছে প্রায় আটগুণ। আর কমতে শুরু করেছে ফাইভ-জি ফোনের দাম।

সারাবিশ্বে ফাইভ-জি মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২২০ মিলিয়নে  পৌছেছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা তিনগুণ হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

 

বিশেষ প্রতিবেদন: বিপর্যয়ের গতিতে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস

আজহার লিমন

চলতি ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার বাতাসে দূষণের পরিমাণ ২০০ থেকে ২৫০ একিআই, যা গেল ফেব্রুয়ারির চাইতে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। বছরজুড়ে এ শহরের বায়ুতে দূষণের যে মাত্রা থাকে তা স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি। বায়ু বিজ্ঞানীরা দূষণের এ মাত্রাকে বলছে বিপর্যয় পর্যায়। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রক্ষেপণ বলছে, বায়ু দূষণের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এ নগরীর বায়ু এভাবে বিষিয়ে যাওয়ার মূল কারণ কি? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন খাতের পরিবেশ সংরক্ষণ বাজেটের সদ্ব্যবহার না হলে নির্মল বায়ুর ধারণা কল্পনাতেই রয়ে যাবে।

সংস্কারের জন্য সেবা সংস্থাগুলো কেটে রেখেছে সড়ক। এ ভাঙাচোরা সড়কের ওপর দিয়ে ধুলো উড়িয়ে একের পর এক চলছে যান্ত্রিক, অযান্ত্রিক সবধরনের যানবাহন। এমন অবস্থায় মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ মোড় যখন ধুলোর রাজ্য, তখন আমার কথা হচ্ছিলো এ এলাকারই বাসিন্দা সুমনার সঙ্গে। তার কোলে তার কয়েক মাস বয়সী সন্তান।

মিসেস সুমনা বলছিলেন, “বাইরে নিয়ে যাচ্ছি বাচ্চা অুসস্থ হতে পারে বায়ু দূষণ, এমনিই হচ্ছে ধুলাবালি হয় বের হতেই তো ইচ্ছে হয় না এতটুকু বাচ্চা নিয়ে সর্দি-কাশি তো লেগেই থাকে বায়ু দূষণের কারণে

মিসেস সুমনা খুব প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের না হলেও, প্রতিদিন জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হন একই এলাকারই রিক্সাচালক মুনজুরুল ইসলাম। তার অনুভূতি কেমন?

মুনজুরুল ইসলাম বলছিলেন, “খারাপ লাগে সারাদিন গাড়ি চালিয়ে বাসায় গিয়ে গোসল করার আগ পর্যন্ত একটু কষ্ট লাগে একটু শ্বাসকষ্ট মনে হয় বুকের ভেতর জ্যাম বেধে আছে কী করবো গরীব মানুষ তো কষ্ট স্বীকার করতেই হবে” 

আমি এখন রয়েছি ঢাকার আগারগাঁওয়ে। এখানে মেট্রোরেল ৬ এর কাজ চলছে। বাংলাদেশে এখন বসন্তকাল চলছে যদিও ধুলোর কারণে এ এলাকায় শীতকালের মত একটি কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে।

পরিবেশ দূষণের দায়ে এই প্রকল্পকে দুইবার করে ১০ লাখ টাকা করে জারিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এভাবে ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান ভাগ সড়ক ধরে যে প্রকল্পগুলো চলছে তার কোনটিতেই বায়ুমান ঠিক রাখাসহ পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি সঠিকভাবে মানা হয়না।

মেট্রোরেল প্রকল্পে দায়িত্বরত একজন নিরাপত্তা গার্ডকে জানতে চাইলে প্রকল্প এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যাপারে তিনি জানান,

এখানে কয় বেলা পানি দেয়?

-তা বলা যায় না রোডের ওপর ডিপেন্ড করে

প্রতিদিন একবার দেয়?

-বললাম কি, দশবারও দেবে, আবার দুইবারও দেবে

এ পথ দিয়ে যাতায়াতকারী আরেক পথচারী জানান,

নিয়মিত নিয়ম মেনে পানি দেওয়া হয় না

আরেকজন বলেন, “যদি তারা পানি দেন, তাহলে ধুলো কেন?”

আন্তর্জাতিক বায়ু গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে, ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকার বায়ুতে দূষণ ছিলো ৩৮৬ একিআই। যাকে দূষণের বিপর্যয় পর্যায় থেকেও অনেক গুরুতর বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বায়ুমান গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, শূন্য থেকে ৫০ একিআইকে ভালো ও ৫০ থেকে ১০০ একিআইকে মধ্যম মানের বায়ুমান মনে করা হলেও, রাজধানী ঢাকার বাতাসে এমন মান বলতে গেলে কখনই পাওয়া যায় না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০১৬ সাল থেকে রাজধানীর বায়ুমান তীর্যক ধারায় খারাপ হতে থাকার মূল কারণ ৬টি। নগরীর আশপাশের ইটভাটা ও শিল্পকারাখানা, যানবাহন, আন্ত:দেশীয় বায়ুদূষণ ও ব্যক্তি পর্যায়ের দূষণের বাইরে বর্তমান সময়ের বায়ু দূষণের জন্য সবচে বড় কারণ হিসেবে মনে করছেন অপরিকল্পিত সংস্কারকাজ ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বায়ুমান বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম মনে করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পরিবেশ সংরক্ষণ বাজেটের সদ্ব্যবহার হয় না। ব্যাপক উদাসীনতা আছে সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থার।

 

বিপর্যয়ের গতিতে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে_fororder_jingji2

বায়ুমান গবেষক আব্দুস সালাম

 

এই বায়ুবিজ্ঞানী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে বাজেট থাকে জানি কতটুকু থাকে তা জানি না থাকলেও তা যে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে যে নির্মাণকাজ করে এটা আমার কাছে মনে হয় না ১৯৯০ বা ৯৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশে বায়ুর মানটা খারাপ হচ্ছে- এটা ঠিক কিন্তু যে হারে খারাপ হওয়ার কথা, যতটুকু আমাদের শিল্পকারখানা বাড়ছে, দূষণ কার্যক্রমগুলো বাড়ছে, সে হারে কিন্তু বাড়েনি কিন্তু বাড়তেছে এর কারণটা হলো এখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর যতটা সক্রিয় হওয়া উচিত, আমার মনে হয় অতটুকু সক্রিয় হচ্ছে না কিংবা সক্রিয় হলেও যতগুলো কার্যক্রম, কর্মপরিকল্পনা তাদের হাতে নেওয়ার কথা তা নিচ্ছে না

বাস্তবতাও এই যে, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ দূষণরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো বছরব্যাপী এ দূষণরোধে কমই ভূমিকা নেন। এই যেমন ঢাকার বাতাসের দূষণ কমাতে সড়কে সড়কে পানি ছিটানোর জন্য  ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও পুলিশের জলকামান ব্যবহারের নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। সঠিকভাবে এ নির্দেশনারও বাস্তবায়ন নেই শহরের কোথাও।

নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়মান পরিচালক নাজমুল আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মহাপরিচালক তাকে আপাতত কথা বলতে নিষেধ করেছেন

বেসরকারি এক হিসেব বলছে, বছরে বায়ুদূষণজনিত রোগ ১ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। যেভাবে বাতাসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধুলিকণার পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড, সিসা, নাইট্রোজেন-অক্সাইড, নানা ধরনের জৈব উপাদান আর সালফারের পরিমাণ বাড়ছে তার বিপরীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উদাসীনতা যতটা, তাতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে সে শঙ্কা থেকেই যায়।

 

 

বিশেষ প্রতিবেদন: বায়ু দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে

এদিকে, বায়ু দূষণের মারাত্মক প্রভাব জনস্বাস্থের উপর। ফুসফুসের অসুখ, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ মারাত্মক সব রোগের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে বায়ু দূষণের। বিজ্ঞান সাময়ীকি ল্যানসেটের এক গবেষণা বলছে, বিশ্বে যেসব কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে বায়ুদূষণ পঞ্চম স্থানে। দূষণজনিত মৃত্যুর দিক থেকে শীর্ষে আছে বাংলাদেশও। স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির পাশাপাশি বায়ু দূষণের ক্ষতি মারাত্নক ও দীর্ঘমেয়াদি। হাবিবুর রহমান অভির প্রতিবেদন। 

যান্ত্রিক যানবাহনের জ্বালানি দহনের মুহুর্তে অতিক্ষুদ্র যে কণা নির্গত হয়, বায়ু দূষণ বিজ্ঞানে তাকে বলা হয় পারটিকুলেট ম্যাটার বা পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ। বায়ু বিজ্ঞানীদের মতে এটি এমন এক ক্ষুদ্রকণা যা খুব সহজেই পৌছেঁ যায় আমাদের শ্বাসতন্ত্রে, ফুসফুসে। বাতাসে এর ঘনত্ব বাড়লে দৃষ্টি সংকুচিত হয়, সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশার। এ প্রতিবেদন যখন লিখছি, তখন ঢাকার বাতাসে পিএম টু পয়েন্ট ফাইভের মাত্রা ৩৮৬।

জনসংখ্যা আর ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনে ভরা এই নগরীতে বায়ু দূষণের প্রভাব বোঝা যায় হাসপাতালে গেলে। রাজধানীর একটি হাসপাতালে হাজার হাজার রোগীর একজন উর্মি আক্তার। তিনি বলছিলেন, দূষিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন কতটা কষ্ট পেতে হয় তাকে।

বিপর্যয়ের গতিতে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে_fororder_jingji3

ডা. তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী, ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মিস উর্মির মতো ঢাকা শহরে শ্বাসপ্রশ্বাসের কোন না কোন সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষ আছে প্রায় প্রতিটি ঘরে। কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, যুদ্ধসহ সব ধরণের সংঘাতে পৃথিবীতে প্রতি বছর মানুষের আয়ু যতটা কমে, তার চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি গড় আয়ু কমে যায় বায়ু দূষণের কারণে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিত্সক তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী বলছিলেন, দূষিত বায়ুর মধ্যে বাস করা একজন মানুষ সাধারণ শ্বাসকষ্ট, হাপানির মত রোগ থেকে কী করে হৃদরোগ এবং ফুসফুসের জটিল রোগে আক্রান্ত হন।

দূষণজনিত এসব রোগের কারণে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কিংকর ঘোষ বলছেন, জনস্বাস্থ্যের অন্যান্য খাতের মতই অবহেলিত বায়ু দূষণজনিত স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিকটি।

বিপর্যয়ের গতিতে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে_fororder_jingji4

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কিংকর ঘোষ

করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে মাস্ক পরার যে অভ্যেস গড়ে উঠেছে, তা ধরে রাখতে পারলে বড় ধরনের রোগ বালাই থেকে দূরে থাকা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

 

চীনের দারিদ্র্য বিমোচনের গল্পপ্রত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে দারিদ্র্য দূর করে নজির স্থাপন করেছে চীন

প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে দারিদ্র্য দূর করে নজির স্থাপন করেছে চীন। কয়েক হাজার কোটি ডলারের বিশাল বাজেট ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে পাহাড়-পর্বত ও মরুময় তিনটি অঞ্চল এখন শতভাগ দারিদ্রমুক্ত। অপর্যাপ্ত উন্নয়ন, শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া এ জনপদে এখন সভ্যতার সুবাতাস। শুনুন আমার তৈরি করা একটি রিপোর্ট।

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য এলাকা নিংশিয়া হুই স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল, মরুময় সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল ও উত্তরের শাংসি প্রদেশ। পাহাড়-পর্বত ঘেরা দুর্গম পরিবেশ ও মরুময় কাঠিন্য জীবনকে করে তুলেছে আরো কঠিন। তাই দারিদ্র্য ছিলো এখানকার নিত্য চিত্র।

২০১৬ সালের শেষের দিকেও এসব এলাকায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করতো। এমনই প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের ২৩ জুন দেশব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য নিয়ে এক যোগে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।

সে সময়ের ভাষণে সি চিনপিং বলেন, “চরম দারিদ্র্যের কারণে যারা কষ্ট পাচ্ছেন, আমরা অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াবো ও সব ধরনের সহযোগিতা করবো। অন্যান্য অঞ্চলের মতো দারিদ্রপীড়িত অঞ্চলেও ধীরে ধীরে সমৃদ্ধির সুবাতাস পৌঁছে দেব আমরা।”

প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণার পরই মাঠের কাজ শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও স্টেট কাউন্সিল। কেন্দ্রীয় সরকারের ২০টি মন্ত্রণালয় ও কমিশন এক যোগে প্রকাশ করে দারিদ্র্য বিমোচনের ৪০টি কৌশলপত্র। ব্যক্তি পর্যায়ের সমস্যা চিহ্নিত করে নেয়া হয় দরিদ্রদের আয় বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ।

২০১৬ থেকে ২০২০, ৫ বছরব্যাপী এ সময়ে চলে বিপুল কর্মযজ্ঞ। বরাদ্দ করা হয় প্রায় ৩শ’ কোটি মার্কিন ডলার।

১ কোটি ২০ লাখ গ্রামীণ নাগরিকের জন্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে দেয়া হয় ৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিশেষ ভর্তুকি। মুসলিম অধ্যুসিত উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং এর কাশগরে তাই ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে সরবরাহের পানি।

সিনচিয়াং এর বুশিকাইবুলং গ্রামের অধিবাসী  নাসির মাইতিনিয়াজি বলছিলেন, “এখন আমাদের বাড়িঘরেই পানি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এখন আর আমাদের পানির কষ্ট পোহাতে হয়না। সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি ও সেক্রেটারি সি চিনপিংকে অনেক ধন্যবাদ।”

শাংসি প্রদেশের আকাশ ছোঁয়া পাহাড়গুলোকে জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয় চলাচলের পথ। প্রতিটি গ্রাম আসে যোগাযোগের আওতায়।

আর দুর্গম ও বসবাসের অনুপযোগী এলাকা থেকে কমপক্ষে ১১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার কাজ করে চীনের শীর্ষ উন্নয়ন সংস্থা ‘জাতীয় সংস্কার ও উন্নয়ন কমিশন’। আধুনিক ও উন্নত সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বাড়িতে করা হয় বসবাসের ব্যবস্থা। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তাদের দেয় নতুন জীবন শুরু সুযোগ। সংচিয়ান গ্রামের অধিবাসী মা সিউলিয়ান জানান কাজের সুযোগ মিলে যাওয়ায় স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে তাদের।

“এর আগে আমরা কখনো কারখানা দেখিনি। আমার যে স্বপ্ন ছিলো, এখানে কাজ করতে পেরে তা পূরণ করতে পারছি। এখন আমি বিশ্বাস করি, আমরা চাইলে অনেক উন্নত জীবন যাপন করা সম্ভব।”

এসব এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২০১৮ সালে গঠন করা হয় প্রায় ৪শ’ কোটি মার্কিন ডলারের বিশেষ তহবিল। কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। পুরো প্রকল্প শেষে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ দুর্বল অর্থনীতির এসব অঞ্চল এখন শতভাগ দারিদ্রমুক্ত।

 

এর মধ্য দিয়ে আয়োজনের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আমরা।

আপনার পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। আপনার যে কোন পরামর্শ পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার –সিআরআই বাংলা’র ফেসবুক পাতায় আপনার মন্তব্য করতে পারেন। আরো যুক্ত থাকতে পারেন সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ও ইউটিউব লিঙ্ক youtube.com/cmgbangla তে গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আবারো কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ্য থাকুন, শুভকামনা সবাইকে।