বসন্ত উত্সবের ছুটিতে প্রাণবন্ত ভোক্তা বাজার— চীনা অর্থনীতির প্রাণবন্ত ও সুপ্ত শক্তি প্রতিফলিত
2021-02-18 15:17:11

ফেব্রুয়ারি ১৮: চলতি বছরের বসন্ত উত্সব চলাকালে যারা ‘সেলিব্রেট ইন প্লেস’ বা ‘জন্মস্থানে ফিরে না-গিয়েও বসন্ত উৎসব উদযাপন’ করেছেন, তারা এ উত্সবের অন্যরকম আমেজ অনুভব করেছেন। প্রেক্ষাগৃহে টিকিটের ব্যাপক চাহিদা, শহর ও কাছাকাছি দর্শনীয় স্থানে গাড়ির অব্যাহত চাপ‍, বাসায় বসে কেনাকাটা করা, ইন্টারনেটে উত্সব উদযাপন, উপকণ্ঠে ভ্রমণ করা এবং এসবের মাধ্যমে ভোক্তা বাজারের প্রাণবন্ত শক্তি ফুটে উঠেছে। চীনের বসন্ত উত্সব চলাকালে বেশ কয়েকটি দেশীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এসব চলচ্চিত্র বসন্ত উত্সবের সময় চীনের চলচ্চিত্র বাজার প্রাণবন্ত করে তোলে।

 ‘আমাদের দর্শকেরা মূলত তরুণ-তরুণী, পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে চলচ্চিত্র দেখতে আসেন।’

প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা এখন যে শব্দ শুনছেন- তা হলো একটি সিনেমা হলের পরিচালকের কথা।

‘সেলিব্রেট ইন প্লেস’ বা ‘জন্মস্থানে ফিরে না-গিয়েও বসন্ত উৎসব উদযাপন করার’ জন্য এবারের বসন্ত উত্সবে চলচ্চিত্র বাজার অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বুধবার বিকেলে জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরোর প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বসন্ত উত্সব চলাকালে চলচ্চিত্র বক্সঅফিসের মোট আয় ৭৫০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি ছাড়িয়ে যায়। এই সংখ্যা দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে চলতি বছর মাত্র দেড় মাসে চলচ্চিত্র বক্সঅফিসের মোট আয় ১০ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি ছাড়িয়ে যায়। যা গত বছরের মোট পরিমাণের অর্ধেক।

চলচ্চিত্র বাজারের দিকে লক্ষ্য করলে চলতি বছর বসন্ত উত্সবের সময় চীনের ভোক্তা বাজারের প্রাণশক্তি প্রতিফলিত হয়।

বসন্ত উত্সব চলাকালে ভোগ্য পণ্যের খরচ অনেক বৃদ্ধি পায়।

 ‘আমি কিছু প্রসাধন কিনতে চাই।’

‘আগে বসন্ত উত্সবের সময় আমি খাবার ও পানীয় জল কিনতাম। এখন জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। এখন আমি কিছু স্মার্ট পণ্য কিনতে চাই।’

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালের বসন্ত উত্সব চলাকালে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ খুচরা প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরাঁয় বিক্রির পরিমাণ ৮২১ বিলিয়ন ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে। বসন্ত উত্সবের আগের ছয় দিনে সারা চীনে অনলাইনে খুচরা বিক্রির পরিমাণ ১২০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। গোটা দেশে মোট ৪৮ কোটি প্যাকেজ ডেলিভারি করা হয় এবং এই পরিমাণ গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি।

নতুন বছরের উপহার বক্স, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি ও ফিটনেস সরঞ্জামসহ ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। এর মধ্যে গহনা, পোশাক, জুতো, টুপি ও প্রসাধনী বিক্রির প্রবৃদ্ধি ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফুল, সবুজ গাছপালা ও সোনার গহনার মতো মৌসুমি পণ্যের বিক্রিও ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

‘সেলিব্রেট ইন প্লেস’ বা ‘জন্মস্থানে ফিরে না-গিয়েও বসন্ত উৎসব উদযাপন’ করার ফলে স্থানীয় এলাকায় ভ্রমণ, আশেপাশের এলাকায় ভ্রমণ এবং স্বল্প-দূরত্বে নিজে ড্রাইভিংও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন স্থানের পার্ক, দর্শনীয় স্থান, জাদুঘর ও স্কি রিসোর্টসহ বিনোদনমূলক জায়গায় পর্যটকদের প্রবাহ উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর ও উপকণ্ঠের হোটেল, রিসোর্ট ও হোমস্টেগুলোর বুকিংও অনেক বেড়েছে।

বসন্ত উত্সবের ছুটির সময় ভোক্তা বাজারে জনপ্রিয়তা থেকে চীনের অর্থনীতির প্রাণশক্তি ও সম্ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা-বিষয়ক ইনস্টিটিউটের প্রধান কু সুয়েমিং মনে করেন,  ভোক্তাদের সম্ভাবনার ক্রমবর্ধমান প্রকাশের ফলে দেশের ভোক্তাদের কেন্দ্র করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় বেগবান হয়েছে। এটি নতুন উন্নয়নের কাঠামো গড়ে তোলার দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি বলেন,

‘বসন্ত উত্সবের ছুটিতে ভালো কেনাকাটা হয়েছে। এতে চীনের ভোক্তাদের বেগবান করার বিশাল সম্ভাবনা দেখা গেছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ পাওয়া গেছে। বিশাল আকারের দেশীয় বাজার ও ক্রমবর্ধমান খরচের কাঠামো উন্নত করার মাধ্যমে চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের সম্ভাবনা, প্রাণবন্ত শক্তি ও প্রাধান্য ফুটে উঠেছে।’ (লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)