গতকাল (সোমবার) অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে সদস্যদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নাইজেরিয়ান অর্থনীতিবিদ ড. এনগোজি ওকাঞ্জ ও-লয়িলাকে সংস্থার নতুন মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনটি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ পরিষদের চেয়ারম্যান ড্যাভিড ওয়াকার পরিষদের পক্ষ থেকে এনগোজিকে মনোনয়ন দিলে, সদস্যরা একবাক্যে তাতে সম্মতি দেন।
ড্যাভিড ওয়াকার বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জন্য এ মুহুর্তটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি সাধারণ পরিষদের পক্ষ থেকে এনগোজিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।”
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ষষ্ঠ মহাপরিচালক রবার্তো আঝেভো গত বছরের আগস্ট মাসে অফিস ছেড়ে দেন, তখন তাঁর মেয়াদ আরও এক বছর বাকি ছিল। গত বছরের ৮ জুন থেকে নতুন মহাপরিচালক নির্বাচন শুরু হয় এবং মোট ৮জন মনোনয়ন পান। গত অক্টোবর মাসে এনগোজিকে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে সংস্থাটি। তবে তত্কালীন ট্রাম্প প্রশাসন এ মনোনয়ের বিরোধিতা করে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউ মিয়াঙ্গ-হিকে প্রার্থী ঘোষণা করে।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি, ইউ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারপর জো বাইডেন প্রশাসন এনগোজিকে সমর্থন জানায়।
এনগোজি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সোমবারের অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে নিয়োগ দেওয়ায় তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও তার পূর্বসূরি শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির ৭৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো আজ একজন নারী ও আফ্রিকান মানুষ সংস্থার মহাপরিচালক হয়। এটি যুগান্তকারী। আমি আশাবাদি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা আমার উপর আস্থা রাখায় আমি কৃতজ্ঞ।”
ওই দিন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনগোজি সংস্থার প্রথম নারী এবং প্রথম আফ্রিকান মহাপরিচালক। তাঁর মেয়াদ ২০২১ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ৩১ অগাস্ট হবে।
ছেষট্টি বছর বয়সি এনগোজি বিশ্ব ব্যাংকে ২৫ বছরের মতো কাজ করেছেন এবং ব্যাংকটির এক্সিকিউটিব ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাছাড়া, তিনি নাইজেরিয়ার অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।
এনগোজি বলেন, অভিষিক্ত হবার পর, তার প্রথম কাজ হল সব সদস্যের সঙ্গে সহযোগিতা করে মহামারি সৃষ্ট সমস্যা সমাধান করা।
তিনি বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীণ। যদি আমরা স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কাজ করি, আস্থা স্থাপন করি, রাজনৈতিক উত্তেজনা দূর করি, তাহলে আমরা আশার আলো দেখতে পাব।”
তিনি বলেন, মহামারি এবং তার সৃষ্ট সমস্যা প্রমাণ করে যে, দেশসমূহের মধ্যে একে অপরের প্রতি নির্ভরতা রয়েছে। বহুপক্ষবাদ কত গুরুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতা জোরদার করে ন্যায ও সুষম বাণিজ্যিক চুক্তি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সব সদস্য, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ এবং ছোট দ্বীপ দেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও বলেন, “যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আস্থা স্থাপন করতে পারব, এবং আরও শক্তিশালি, সংযুক্ত ও সহনশীল বাণিজ্যিক ব্যবস্থা গঠন করতে পারব।”(শিশির/এনাম/রুবি)